কক্সবাংলা রিপোর্ট :: প্রায় সাত বছর ধরে হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের হত্যা করে এখন রোহিঙ্গাদেরই সাহায্য চাইছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
বিবিসি রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে রাজ্যের প্রায় ১০০ রোহিঙ্গাকে সামরিক বাহিনীতে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা।
সেই সঙ্গে যোগদানে অসম্মত হলে দেখানো হচ্ছে নানান ভয়-ভীতি।
গত এক যুগে প্রায় ১৫ হাজার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা বাধ্য হয়ে আইডিপি ক্যাম্পে বসবাস করছে।
বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন যে সামরিক বাহিনীর লোকেরা ক্যাম্পের যুবকদের সামরিক জান্তায় যোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে এবং যোগদান না করলে যুবকদের পরিবার ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে হুমকি দিচ্ছে।
তবে এখনো পর্যন্ত নাগরিকত্ব বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগদানের এ নির্দেশ পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যের মিশ্র সম্প্রদায় থেকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল এবং তাদের শিবিরে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়েছিল। পাঁচ বছর পর, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে নৃশংস ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু করে।
হাজার হাজার মানুষকে হত্যা ও ধর্ষণ করে এবং তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। তখন ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। এদের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা এখনো বাংলাদেশেই অবস্থান করছে।
গত দুই বছরে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির কাছে কয়েক দফায় পরাজিত হয়েছে জান্তা বাহিনী।
শনিবার (২ এপ্রিল) এটি থাইল্যান্ডের সঙ্গে পূর্ব সীমান্তের একটি শহর মায়াওয়াদির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
সম্প্রতি রাখাইনের বিশাল এলাকা হারানোর পর সে সেনাবাহিনীই রাখাইনের রোহিঙ্গাদের সাহায্য চাইছে যাদের কামান ও বিমান হামলায় বছরের পর বছর ধরে রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জান্তা বাহিনীও বিপুল সংখ্যক সৈন্য হারিয়েছে। তাদের সৈন্যরা নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে, আত্মসমর্পণ বা দলত্যাগ করেছে।
তবে রোহিঙ্গাদের জান্তা বাহিনীতে যোগদানের নির্দেশের বিষয়টি অস্বীকার করছে জান্তা সরকার। জান্তার মুখপাত্র জেনারেল জাও মিন তুন বিবিসিকে বলেন, তাদের সামনের সারিতে পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। তাই তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা যাতে নিজেরাই করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে চাইছি।
উল্লেখ্য, সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে দুই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ-মায়ানমারের সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে আসে। ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের শিকার হয়ে কক্সবাজারে আসে আরো ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। এরপর ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত হামলা গণহত্যা চালানোর পর কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আসে আরো সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এদের সাথে আগে থাকা উল্লিখিতরা মিলে কক্সবাজার জেলা এখন ১৪ লাখ রেহিঙ্গা শরণার্থীর আবাসভূমি। এদের ছয় লাখ এখন আছে শরণার্থীদের জন্য নির্মিত কুতুপালং মেগা শিবিরে। আর এটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।
Posted ৩:৩১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta