শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর : জাতীয় টাস্কফোর্স

বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০১৭
512 ভিউ
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর : জাতীয় টাস্কফোর্স

কক্সবাংলা ডটকম(২৪ আগষ্ট) :: বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে অভিহিত করে তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে এ সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স।

২৩ আগস্ট থেকে কক্সবাজারে শুরু হওয়া বাংলাদেশে অবস্থিত নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতীয় টাস্কফোর্সের ১৪তম বৈঠকের আলোচনায় এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

দু’দিনব্যাপী এই টাস্কফোর্স বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এই কমিটির সভাপতি ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। বৈঠকে জননিরাপত্তা সচিব কামালউদ্দিন আহমেদ, পরিবেশ সচিব ইসতিয়াক আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি, কোস্টগার্ড, বিভিন্ন এজেন্সির প্রতিনিধি ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। দুইদিনব্যাপী এ বৈঠক আজ বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) শেষ হয়েছে।

বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আগের আলোচ্য সূচির সঙ্গে ‘নিরাপত্তা’ ও ‘পরিবেশ’—এ দুটি উপাদানকেও সরকারি কার্যক্রমের আলোচ্য বিষয় হিসেবে নতুন করে সংযুক্ত করা হয়েছে। সূচিতে আগে থেকেই থাকা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা (প্রোটেকশন) ও সুরক্ষা (সেফটি) দেওয়াসহ খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।

এ বৈঠকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা বিষয়ে দুই বছর মেয়াদি একটি কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিনস এ কর্ম পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। এতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সরবরাহ, শিক্ষা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে বেশ কিছু দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হয়।

জাতীয় টাস্কফোর্সের বৈঠক শেষে এর প্রধান পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, ‘আমরা গতকাল তিনটি ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি এবং সেখানকার অবস্থা সরেজমিনে দেখেছি। আজকে আমরা সবাই যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরকারের কার্যক্রমের মধ্যে নিরাপত্তা ও পরিবেশ দুটি সংযুক্ত করার।’

এদিকে, বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বৈঠকে জোরালোভাবে আলোচনা করা হয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা এসময় জোরের সঙ্গে বলেছেন, প্রত্যাবাসন হচ্ছে চূড়ান্ত সমাধান এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো উচিৎ। রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশে সৃষ্ট সমস্যার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, এরা যত দ্রুত ফেরত যাবে, বাংলাদেশের জন্য তত মঙ্গল।

প্রসঙ্গত মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের কারণে রাখাইনে অবস্থিত প্রচুর রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বর্তমানে তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

বৈঠকে যেসব বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয় সেগুলো হচ্ছে:

মৌলবাদের ঝুঁকি

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশে মৌলবাদ শক্তি কাজ করে যাচ্ছে এবং তারা রোহিঙ্গাদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলে জানানো হয় বৈঠকে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। রোহিঙ্গারা যাতে মৌলবাদের শিকারে পরিণত না হন সে জন্য নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

একাধিক কর্মকর্তা বৈঠকে বলেন, মৌলবাদ ঝুঁকি একসময় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে পরিণত হবার আশংকা আছে এবং সে কারণে এখন থেকে এই প্রবণতা প্রতিরোধ করতে হবে।

ইয়াবা চোরাচালান

বৈঠকে ইয়াবা চোরাচালান এবং এসব কাজে রোহিঙ্গাদের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। বৈঠকে বলা হয় বাংলাদেশের অর্ধকোটি নেশাগ্রস্তের অর্ধেকই ইয়াবায় আসক্ত এবং ইয়াবার মূল উৎস হচ্ছে মিয়ানমার। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বৈঠকে জানান, রোহিঙ্গারা ইয়াবা চোরাচালানের ক্যারিয়ার বা বহনকারী হতে বাধ্য হচ্ছে। এর গুরুত্ব অনুধাবন করে ইয়াবা চোরাচালানে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের বিষয়টি বৈঠকে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে।

অপরাধমূলক কাজে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা

বৈঠকে বলা হয়, বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গারা ক্রমবর্ধমান হারে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এটি সমাজে অস্থিরতা তৈরি করছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, চুরি, ছিঁচকে চুরি থেকে ডাকাতি ও চোরাচালানের মতো মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে সীমান্ত অঞ্চলে স্থানীয়দের মধ্যে রোহিঙ্গা সম্পর্কে বিরূপ ধারনা তৈরি হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের চলাচল সীমিতকরণ

বৈঠকে রোহিঙ্গাদের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টির আশঙ্কা ব্যক্ত করে তাদের চলাচল সীমিত করার ওপরেও গুরুত্বারোপ করা হয়।

মানবপাচার

বৈঠকে মানবপাচার বিশেষ করে নৌকার মাধ্যমে [বোট পিপল] রোহিঙ্গারা যাতে বিদেশে যেতে না পারে সে বিষয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠকে বলা হয়, গতবারের অভিজ্ঞতা মনে রেখে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে করে এবারে শুধু রোহিঙ্গা নয়, বাংলাদেশিরাও যেন নৌকায় চেপে সমুদ্র পাড়ি দিতে না নামে। প্রসঙ্গত: বাংলাদেশ থেকে অনেক রোহিঙ্গা সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশে পাড়ি জমায়।

বৈঠকে সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, এবারে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। সে কারণে এখন সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢোকার পরিমাণ কম। বৈঠকে আরও বলা হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী আগস্ট মাস থেকে সীমান্ত অঞ্চলে তাদের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়িয়ে রাখাইনের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছে।

ভাষা শিক্ষা

বৈঠকে জানানো হয়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার না থাকায় শিক্ষার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। তাই, রোহিঙ্গাদের বার্মিজ ভাষা শিক্ষার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয় যাতে করে তারা দেশে ফিরে যাওয়ার সময় প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে ফিরে যেতে পারে।

পরিবার পরিকল্পনা

প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচের ওপর, সে কারণে বাংলাদেশে তাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনার ওপর জোর দেওয়া হয় বৈঠকে।

জাতিসংঘের প্রস্তাব

এছাড়াও বৈঠকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা বিষয়ে দুই বছর মেয়াদি একটি কর্মপরিকল্পনা জাতীয় টাস্কফোর্সের বৈঠকে পেশ করা হয়। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিনস এ প্রস্তাব তুলে ধরেন।

জাতিসংঘের অন্তর্গত পাঁচটি সংস্থা এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এগুলি হচ্ছে আইওএম, ইউএনএফপিএ, ইউএনএইচসিআর, ডব্লিউএফপি ও ইউনিসেফ।

এরমধ্যে আইওএম বাসস্থান ও সীমিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবে, ইউএনএফপিএ পরিবার পরিকল্পনা ও মাতৃত্বকালীন সেবা দেবে, ইউএনএইচসিআর নিবন্ধিত শরণার্থীদের দেখাশোনা করবে, ডব্লিউএফপি খাদ্য সরবরাহ করবে এবং ইউনিসেফ রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাসেবা দেবে।

বৈঠকে জানানো হয়, জাতীয় টাস্কফোর্স কর্মপরিকল্পনাটি বিবেচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত দেবে।

512 ভিউ

Posted ১১:১৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com