শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রোহিঙ্গা ইস্যু : মিয়ানমারের তড়িঘড়ি চুক্তির প্রস্তাবে সন্দেহ

বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৭
262 ভিউ
রোহিঙ্গা ইস্যু : মিয়ানমারের তড়িঘড়ি চুক্তির প্রস্তাবে সন্দেহ

কক্সবাংলা ডটকম(২৩ নভেম্বর) :: আন্তর্জাতিক চাপের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে এবার চুক্তি সইয়ে জোর দিচ্ছে মিয়ানমার। এ সপ্তাহেই বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে চায় দেশটি। এজন্য এক ধরনের তাড়াহুড়ার মধ্য দিয়ে  বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সইয়ের সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ এর আগে কখনোই এমনটি করেনি।

চুক্তি সইয়ে মিয়ানমারের এমন তাড়াহুড়াকে দেশটির এক ধরনের কৌশল হিসেবেই দেখছেন সাবেক কূটনীতিক ও গবেষকরা। তাদের মতে, তড়িঘড়ি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মধ্য দিয়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানকে প্রলম্বিত বা ঝুলিয়ে রাখার সেই পুরনো কৌশলের দিকেই হাঁটছে। কারণ প্রস্তাবিত ওই সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ের এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।

এরই মধ্যে তড়িঘড়ি এমন চুক্তি করে আন্তর্জাতিক চাপ প্রশমন করতে চাইছে দেশটি। পাশাপাশি নানা ধরনের অযৌক্তিক ইস্যু তুলে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এক ধরনের উত্তেজনাও তৈরি করতে চাইছে। মিয়ানমার মনে করছে, এতে একসময় রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি সরে যেতে পারে। তাতে মিয়ানমার সুবিধা পাবে।

একদিকে বাংলাদেশ চাইছে, ১৯৯২ সালের চুক্তির বদলে সময়সীমাভিত্তিক একটি নতুন চুক্তি করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে। ওই প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের উপস্থিতিও চায়। অর্থাৎ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হলেও চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ যেকোনো তৃতীয় কোনো পক্ষকে রাখতে চায় বাংলাদেশ।

অন্যদিকে মিয়ানমার চাইছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ১৯৯২ সালের চুক্তির আদলে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে। এজন্য বর্তমানে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে আজকের মধ্যেই চুক্তিটি করতে চায় দেশটি। সে চুক্তিতে তৃতীয় কোনো পক্ষকেও রাখতে চায় না মিয়ানমার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকালও বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পক্ষে এনে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট অবসানে সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে গতকাল জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালের চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমারকে একটি নতুন সমঝোতা স্মারকের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওই প্রস্তাবের ব্যাপারে দুই পক্ষ বেশ কয়েকবার নিজেদের মতামত দিয়েছে। নেপিডোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও চলছে। চুক্তি চূড়ান্ত হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ হবে। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা এতে নেতৃত্ব দেবেন।

মিয়ানমারের এমন তাড়াহুড়া করে চুক্তি করার আগ্রহকে ভালো চোখে দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে একবার চুক্তি করতে পারলে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি প্রলম্বিত করতে পারবে মিয়ানমার। চুক্তির পর আলোচনার কথা বলে সময়ক্ষেপণ করতে পারবে। একসময় আন্তর্জাতিক দৃষ্টি অন্যদিকে সরে যাবে। মিয়ানমার আবার আগের মতোই চুক্তি থেকে সরে আসবে।

বিশ্লেষকরা এমনও বলছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নতুন চুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার পর মিয়ানমার যাচাই-বাছাইয়ের নামে পক্ষান্তরে নাগরিকত্বের শর্ত জুড়ে দিয়েছে। তার মানে তারা সবাইকে ফেরতে নিতে চায় না। এর আগে ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত নেওয়ার কথা বলেছে মিয়ানমার। এই প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়ায় যৌথ ঘোষণার চারটি প্রধান নীতি অনুযায়ী যাচাইয়ের পর রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে দেশটি।

দেশটির শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ইউ মিন্ট কাইং বলেছেন, তারা শনাক্ত করে, মিয়ানমারে যাদের বসবাস ছিল এবং এমন প্রমাণ যারা দেখাতে পারবে, শুধু তাদের ফেরত নেওয়া হবে। প্রতিদিন একটি চেক পয়েন্টে প্রায় ১৫০ জনকে যাচাই-বাছাই করতে পারব। এরপর তাদের মংডু শহরের দারগিই জার গ্রামে পুনর্বাসিত করা হবে।

এ বিষয়ে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর (অব.) ইমদাদুল ইসলাম বলেন, এভাবে নিলে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি একসময় ঝুলে যাবে। প্রতিদিন ৩০০ জন করে ফেরত নিলে, বাংলাদেশে বর্তমানে অবস্থানরত আনুমানিক দশ লাখ রোহিঙ্গার ফেরত যেতে সময় লাগবে ৯ বছরের কিছু বেশি সময়। আর সেই হিসাবে গেল দুই মাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ছয় লাখ রোহিঙ্গার ফিরতে লাগবে সাড়ে পাঁচ বছর।

‘মিয়ানমার নাগরিকত্বের যে শর্ত জুড়ে দিয়েছে, তাতে ১৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়’উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও রোহিঙ্গা গবেষক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘১৯৯২ সালের চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ সালে মিয়ানমারে পুনরায় নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তখন বিশেষ শর্তে মাত্র চার হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। পরে ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে রোহিঙ্গাদের কাছে যে অস্থায়ী অধিবাসী কার্ড ছিল, সেটাও বাতিল করে তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।

সু চি ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালের জুনে আবারও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আরো ১০ হাজার রোহিঙ্গা বাঙালি পরিচয়ে নাগরিকত্ব পায়। সে হিসেবে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে পারার মতো রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ হাজার। বর্তমানে এই সংখ্যক রোহিঙ্গাও তাদের নাগরিকত্বের কাগজপত্র দেখাতে পারবে না। প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সঙ্গে কিছুই আনতে পারেনি। আগুনে ঘরবাড়ির সঙ্গে সবকিছুই পুড়ে গেছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যে চুক্তি নিয়ে এখন কথা হচ্ছে, তার সারবস্তু নিয়ে গত মে মাসে একটি খসড়া দেওয়া হয়েছিল মিয়ানমারকে। কিন্তু এ নিয়ে মিয়ানমার কোনো মতামত দেয়নি। অথচ ২ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সাতবার এ নিয়ে দুই দেশ তাদের মতামত দিয়েছে। এর মধ্যে ২৩ সেপ্টেম্বরের পর ২ অক্টোবর ঢাকায় মিয়ানমার স্টেট কাউন্সেলরের দফতরের মন্ত্রীর সফরের সময় তাকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। ২০ অক্টোবর ওই প্রস্তাবের মতামত পাঠায় মিয়ানমার।

মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে বেশকিছু বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক কূটনীতিক ও গবেষকরা। তারা জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অন্তত চারটি বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের মতের মিল হয়নি। মিয়ানমার ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায়। অর্থাৎ এবারের ছয় লাখ ২০ হাজারসহ প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত নেওয়ার কথা বলছে।

বাংলাদেশের দাবি, শুধু ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল নয়, দুই নিবন্ধিত শিবিরের শরণার্থী এবং এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের যেসব রোহিঙ্গা এ দেশে আছে, তাদের সবাইকে ফিরিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশের প্রস্তাব মেনে নিলে মিয়ানমারকে এখানে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে হবে।

রোহিঙ্গাদের ফেরতের ক্ষেত্রে পরিচয় যাচাইয়েও দুই দেশের অবস্থান ভিন্ন। মিয়ানমার এককভাবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব যাচাই করতে চায়। বাংলাদেশ স্পষ্ট করেই বলেছে, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় দুই দেশ মিলেই পরিচয় যাচাইয়ের কাজটি করবে।

ফিরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নিয়েও ভিন্ন অবস্থান দুই দেশের। বাংলাদেশ বলছে, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত নিয়ে নিজেদের বাড়িতে রাখতে হবে। শিবিরে রাখা যাবে না। বাড়িঘর না থাকলে তাদের আদি নিবাসের কাছে বাড়িঘর তৈরি করে দিয়ে সেখানেই রাখতে হবে। কিন্তু মিয়ানমার বলছে, এবার রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ায় তাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হবে।

এ ছাড়া মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় ও সময়সীমাভিত্তিক চুক্তির প্রস্তাবের ব্যাপারেও বাংলাদেশকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে দুই দেশের চুক্তি হলে বাংলাদেশ অন্য কোনো দেশের সঙ্গে এ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারবে না। আগের মতো মিয়ানমার এবারও চুক্তি ভঙ্গ করলে সে ব্যাপারে তৃতীয় কোনো দেশের সহযোগিতা চাইতে পারবে না বাংলাদেশ।

একইভাবে ১৯৯২ সালের সমঝোতায় নির্দিষ্ট করে সময়ের উল্লেখ না থাকায় মিয়ানমার ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিয়েছিল। বাকি প্রায় ১৫ হাজার আজ পর্যন্ত ফেরত নেয়নি। অন্যদিকে ১৯৭৮ সালে প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়েছিল ছয় মাসমেয়াদি এবং এ সময়ের মধ্যে দুই লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ফিরে গিয়েছিল রাখাইনে।

এ ব্যাপারে সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবীর বলেন, মিয়ানমারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। সুতরাং অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে মিয়ানমারের সঙ্গে সবকিছু স্পষ্ট করা না হলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দেশটিকে রাজি করানো যায় না। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে শক্ত ও পরিষ্কার চুক্তি করতে হবে। সবকিছু উল্লেখ থাকতে হবে। এখনই যদি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গা ফেরতের বিষয়টি উল্লেখ না থাকে, পরে এ নিয়ে মিয়ানমার কথা বলবে না।

262 ভিউ

Posted ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com