কক্সবাংলা রিপোর্ট(২১ এপ্রিল) :: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিযে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার মা হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি বিশ্বের সব রাষ্ট্রের কাছে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বিদেশি দাতাসংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও খাদ্য, ওষুধ, পানি সরবরাহ দিয়ে মানবতার সেবা করে আসছে। পাশাপশি সরকার রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক আলোচনাসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চলছে।
অন্যদিকে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরে না যেতে রোহিঙ্গাদের দুটি সংগঠন ও দেশী-বিদেশী এনজিওদের বিরুদ্ধে ইন্ধন ও প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ।
জানা যায়,বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক রাহিঙ্গা আসার কারণে রোহিঙ্গাদের সেবার নামে কর্মতৎপরতা শুরু করে শতাধিক এনজিও সংস্থা। তারা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় না রেখে রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চিহ্নিত কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের নামে বিদেশি ফান্ড এনে ইচ্ছেমতো খরচ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।আর ওই এনজিওরাই রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন না হওয়ার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বলা হচ্ছে-দেশি-বিদেশি অনেক এনজিওকর্মী একাজে সরাসরি জড়িত।যে কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হচ্ছে।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের আবেদনে এনজিও ব্যুরো ১২টি এনজিও’র কার্যক্রম স্থগিত করলেও ওইসব এনজিও গোপনে প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।এসব কারনে ষড়যন্ত্রকারী এনজিওদের নানা অপতৎপরতায় স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
সূত্রে জানা যায়,কক্সবাজারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত সীমানত্মবর্তী উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় আশ্রিত নতুন ও পুরনো মিলে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সুযোগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আল-ইয়াকিন (আরসা), আরএসও এবং একাধিক এনজিও প্রতিনিধি নিজ নিজ অবস্থান থেকে রোহিঙ্গা সমস্যা জিইয়ে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। চিহ্নিত তিনটি গ্রুপ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য পরিকল্পনা নিয়ে গোপনে নানা ষড়যন্ত্রের কলকাঠি নাড়ছে।
অপরদিকে টেকনাফ ও উখিয়ায় ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার আগমনে অত্যন্ত খুশি পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা।তারা জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের খাদ্য,স্বাস্থ্যসেবা,পানি, চাল-ডাল, কাপড়-চোপড় সবকিছু দিয়ে তাদের উৎসাহ দিয়ে রেখেছে সরকার ও এনজিওরা। ফলে কর্মহীন রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন কবে হবে এ নিয়ে তারা আপাতত ভাবছেন না।
সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় ১০৫টি এনজিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব এনজিওর শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন বিদেশি নাগরিকরা। এদের অধিকাংশ ট্যুরিস্ট ভিসায় এদেশে এসে স্থায়ীভাবে চাকরি করছেন। বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন।অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে এ পর্যন্ত ৭৬ জন এনজিও কর্মকর্তা (বিদেশি নাগরিক) আটক হন। আর লিখিত মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দিয়ে পুলিশ যথারীতি নিজেদের কাজ করছেন।
এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকরা অভিযোগ করেছেন,’এনজিওগুলো নিজেদের ফায়দা লুটার জন্যই প্রত্যাবাসন বিরোধী কাজে জড়িত রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে সরকারি অনুমোদন না নিয়েও অনেক এনজিও গোপনে কাজ করছে।আর সরকারি ভাবে এনজিও’র কাজ কঠোরভাবে তদারকি করা না হলে এদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা দেশে ফিরবে না।
এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও সাবেক উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারে ফিরে না যেতে কিছু দেশী-কিদেশী এনজিও কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের উসকানি দিচ্ছে।নিজেদের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের দিয়ে করাচ্ছে।এসব এনজিও সরকার বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডেও লিপ্ত রয়েছে। তাই উসকানিদাতা এনজিওদের বিরুদ্ধে নজরদারী ও ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান জানান, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারি নির্দেশনা অমান্য ও বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রমের কারণে ইতোমধ্যে ১২টি এনজিও’র কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব এনজিও হচ্ছে সাফজ, কালব, ওফকা, জাগরণ, এমপিডিআর, মানবাধিকার, শেড ওয়াশ, টাই বিডি, এসআরপিবি, গ্রামীণ ব্যাংক, লাচুন ও শিলাফ। এর আগে মুসলিম এইড বাংলাদেশ, ইসলামিক রিলিফ ও ইসলামিক এইড নামের এই তিনটি এনজিও নিষিদ্ধ করা হয়। সব মিলিয়ে আমরা কঠোর নজরদারি রেখেছি। এরপরও কিছু কিছু এনজিও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের উসকে দেওয়ার কথা শুনেছি। আমরা এসব এনজিও’র বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তিনি আরও জানান, ক্যাম্পে কর্মরত এনজিওগুলোতে দায়িত্বরত বিদেশিদের সনাক্তকরণ ও তাদের বৈধতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য প্রতি মাসে একটি করে এনজিও মাসিক সমন্বয় সভার আয়োজন করা হলেও ওই সভায় বিদেশিরা উপস্থিত থাকেন না।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির ইঞ্জিনিয়ার কে পল জানান,বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী গত ২২ জানুয়ারি প্রথম দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করার কথা থাকলেও ধূ¤্রজালে আটকা পড়ে তা। তারা জানেন না মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হওয়ার পরও কেন এখনো রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কোনো হদিস নেই।
তিনি আরও জানান,রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কাজ বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা জিইয়ে রাখতে শুরু হয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা।
এ ব্যাপারে শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম আজাদ বলেন,মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিকভাবে চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে।আশা করি দ্রত সময়েই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য কাজ করছে। রাত-দিন বিভিন্ন ক্যাম্পে টহল দিচ্ছে পুলিশ। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
Posted ৮:০০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta