কক্সবাংলা রিপোর্ট(১১ এপ্রিল) :: গত বছরের ২৫ আগস্টে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর ১১ এপ্রিল প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে কক্সবাজার আসছেন মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী।
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা ঢলের পর পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে বুধবার কক্সবাজার আসছেন সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে তিনি কক্সবাজার সফর করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এটিই মিয়ানমারের কোনো মন্ত্রীর প্রথম কক্সবাজার সফর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে মিয়ানমারের এই মন্ত্রী গত রাতে ঢাকায় আসেন।
জানা গেছে, মিয়ানমারের মন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে সোজা যাবেন কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে। তাঁর এ সফর উপলক্ষে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ব্যাপক নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিয়েছে।
সফরসূচি অনুযায়ী, মিয়ানমারের মন্ত্রী কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) কার্যালয়ে রোহিঙ্গাসংশ্লিষ্ট মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর তিনি কুতুপালং শিবিরের ডি-৫ নম্বর ব্লকে গিয়ে সরেজমিন বস্তি পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
এদিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখা পরিদর্শনের কথা থাকলেও মিয়ানমারের মন্ত্রীর সেই কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক গত সপ্তাহে ঢাকায় রোহিঙ্গাবিষয়ক এক সম্মেলনে বলেছিলেন, মিয়ানমারের মন্ত্রী সীমান্তের শূন্যরেখায় গিয়ে সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন। শূন্যরেখায় মিয়ানমার অংশে অবস্থানরত প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গাকে নিজ বসতভূমিতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়াকে মিয়ানমারের আন্তরিকতার পরীক্ষা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান জানান, মিয়ানমারের মন্ত্রী বুধবার কক্সবাজারের ইনানী সৈকত তীরের হোটেল রয়েল টিউলিপে রাত্রিযাপন করে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় ফিরবেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার বিকেলে কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে দুজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। তারা হলো জিয়াবুর রহমান (৩৫) ও সিরাজুল মোস্তফা (৪০)।
এর আগে গত সোমবার পুলিশ একটি বন্দুক ও কয়েক রাউন্ড গুলিসহ শাহেদ নামের আরো এক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে।
বাংলাদেশ-ইউএনএইচসিআর চুক্তি কাল : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত করতে সংস্থাটির সঙ্গে একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে,বৃহস্পতিবার জেনেভায় বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক এবং ইউএনএইচসিআরের পক্ষে সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডিতে চুক্তিতে সই করবেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান ও রীতি অনুসরণ করতে ইউএনএইচসিআর কাজ করবে।
ইউএনএইচসিআর ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) মিয়ানমারের সঙ্গেও এ ধরনের একটি চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত ২০১৭’র ২৫ আগস্টের পর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করে। এতে গত ছয় মাসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। তবে এবারই প্রথম মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।
আর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়ন শুরু হলে তখন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বাংলাদেশে আগে থেকে অবস্থান করা প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গাসহ মোট ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে উখিয়া-টেকনাফের পাহাড় ও তার পাদদেশে। গত ২৪ আগস্টের আগ পর্যন্ত উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের লেদা নামে দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থাকলেও বর্তমানে ১২টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে।
Posted ২:০৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১১ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta