কক্সবাংলা ডটকম(৬ জুন) :: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বুধবার (৬ জুন) মিয়ানমারের নেপিদোতে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
এ সমঝোতার আওতায় ‘পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য একটি রূপরেখা’ তৈরির অঙ্গীকার করা হয়েছে। ওই রূপরেখা তৈরির লক্ষ্য হলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে ‘স্বেচ্ছা, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই’ করার মতো পরিবেশ তৈরি করা।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমার শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের বাঙালি মুসলিম আখ্যা দিয়ে নাগরিকত্ব অস্বীকার করে আসছে। তবে এবারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হওয়ার একপর্যায়ে প্রত্যাবাসন চুক্তিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। তবে সেই চুক্তির পর বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও ধোঁয়াশা কাটছে না।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জানুয়ারিতে সম্পন্ন হওয়া মিয়ানমার-বাংলাদেশ চুক্তির আওতায় এখনও একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ঢাকা-নেপিদো চুক্তি সম্পন্ন হলেও নানা অজুহাতে রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে প্রত্যাবাসনের গতি। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে।
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এই চুক্তিটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন মিয়ানমারে নিয়োজিত জাতিসংঘের আবাসিক এবং মানবিক সমন্বয়কারী নাট ওৎসবি। এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে অনেক কাজ হবে এবং সেই কাজগুলোকে অবমূল্যায়ন করা উচিত হবে না মনে করছেন ওৎসবি।
তিনি বলেন, ‘অনেক কাজ করার আছে। এ কাজকে হেয় প্রতিপন্ন করা ঠিক নয়। আমরা প্রায় সাত লাখ মানুষের প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলেছি, যাদের কেবল ফিরিয়ে নেওয়াটাই শেষ কথা নয়, ফিরে যাওয়ার জন্য যথাযথ পরিবেশও তৈরি করতে হবে। সমাজে তাদের পরিচয়, তাদের নিরাপত্তা, চাকরি, জীবনযাপন, বসবাসের জায়গা, অবকাঠামো-সবকিছুরই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’
মিয়ানমার সরকার আশা প্রকাশ করেছে, এ সমঝোতা চুক্তির মধ্য দিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। তবে মিয়ানমার সরকারের বিবৃতিতে রোহিঙ্গা শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি। রোহিঙ্গাদের ‘বাস্তুচ্যুত লোকজন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মিয়ানমার সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সহায়তা নিয়ে চলমান প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবে মিয়ানমার। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ২৫ বছর আগে ২ লাখ ৩০ হাজার বাস্তুচ্যুতর প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘকে সহায়তা করেছিল মিয়ানমার।’
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার। তাদের ‘বাঙালি মুসলমান’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের বাসিন্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় নেপিদো। ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীন হওয়ার পর দেশটির বাসিন্দা হিসেবে রোহিঙ্গাদের যে সবুজ ও গোলাপি পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল, তা গুরুত্বহীন হয়ে যায় ৮২ সালের নতুন নাগরিকত্ব আইনে।
মিয়ানমারের ইতিহাসে চোখ ফেরালে দেখা যায়, ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকার নৃগোষ্ঠীভিত্তিক নতুন নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করে। বিতর্কিত ওই বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। আইনের ৪ নম্বর ধারায় শর্ত দেওয়া হয়, কোনও জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নাগরিক কিনা, তা আইন-আদালত নয়; নির্ধারণ করবে সরকারের নীতিনির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’। বস্তুত এই আইনটিই জান্তাশাসিত মিয়ানমারে সর্বোচ্চ সেনাবিদ্বেষের শিকার রোহিঙ্গাদের ভাসমান জনগোষ্ঠীতে রূপান্তর করে।
Posted ৭:৩৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৬ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta