কক্সবাংলা রিপোর্ট(২২ জানুয়ারী) :: বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হচ্ছে না। প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরুর অনেক প্রস্তুতি বাকি থাকায় আজই এ কার্যক্রম শুরু করতে চাইছে না ঢাকা।
কক্সবাজারের বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সরবরাহকৃত তথ্যের সত্যতা নিরূপণের জন্য মিয়ানমার হাতে দুই মাস সময় পাচ্ছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সেক্ষেত্রে এসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হতে আরো দুই মাস লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারের সঙ্গে এক চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। এ প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম আজ শুরু হওয়ার কথা।
চুক্তিতে দুই বছরের মধ্যে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সম্পন্নের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। আজই এ প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরুর জন্য এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া যায়নি বলে মনে করছে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরবরাহকৃত তথ্য যাচাইয়ের জন্য হাতে দুই মাস সময় পাচ্ছে মিয়ানমার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করেছে বাংলাদেশ। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য এ তথ্য যথেষ্ট নয়।
এক্ষেত্রে মিয়ানমারের চাহিদা অনুযায়ী প্রতি পরিবারকে একটি ইউনিট ধরে সে অনুযায়ী নির্ধারিত ফরমে তথ্য সরবরাহ করতে হবে বাংলাদেশকে, যেখানে আরো বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত ফর্মটি দুই দেশের অনুমোদন পায় ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে। উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের পূরণ করা ফর্মের এসব তথ্য মিয়ানমারকে সরবরাহ করবে বাংলাদেশ, যার সত্যতা নিরূপণের জন্য হাতে দুই মাস সময় পাচ্ছে মিয়ানমার।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে কিছুটা সময় হয়তো বেশি লাগবে। তবে যে সময়টি বেশি লাগবে, তা যৌক্তিক। কারণ বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের তথ্য মিয়ানমারের কাছে পাঠানোর পর তারা সে তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবে। ফলে তাদের সে সময়টি দিতে হবে।
এক্ষেত্রে মিয়ানমার সম্ভব হলে দুই মাসের মধ্যে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করবে। পারলে দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেও মিয়ানমার এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারে। ফলে তথ্য নিশ্চিত হলে এর পরই প্রথম দল প্রত্যাবাসনের জন্য তৈরি হবে।
চলতি মাসে অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে স্বাক্ষরিত মাঠ পর্যায়ের চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ তথ্য সংগ্রহ করে দুই দল রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মিয়ানমারকে দেবে, যার মধ্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের অধিবাসী হওয়ার প্রমাণ ও তথ্য থাকবে।
অন্যদিকে গত বছরের নভেম্বরে স্বাক্ষরিত চুক্তির ধারা অনুযায়ী সম্ভব হলে মিয়ানমার দুই মাসের মধ্যে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই ও সত্যতা নিশ্চিত করবে।
মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ ভূমে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে। এরা সবাই ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর বাংলাদেশে এসেছে।
অন্যদিকে আগেকার নানা জাতিগত সংঘাত ও সেনা অভিযানের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পালিয়ে আসা আরো প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গাকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম কক্সবাংলাকে বলেন, প্রয়োজনীয় আয়োজন অসম্পূর্ণ থাকায় তা শুরু করা যাচ্ছে না। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের পরিবার এবং গ্রাম ভিত্তিক তালিকা তৈরি করে তা মিয়ানমারের কাছে হন্তান্তর করা হবে। তারপর তা যাচাইবাাই করার পরই রোহিঙ্গাদের ফিজিক্যালি ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হরা হবে।
Posted ২:২১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta