কক্সবাংলা ডটকম(১২ ডিসেম্বর) :: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পূর্বে গঠিত ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’-এর মিয়ানমার পক্ষের একটি প্রতিনিধি দল আগামী ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসবে।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থানরত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে প্যারিসে অবস্থান করছেন।
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন, নিষ্পেষণ অব্যাহত। রোহিঙ্গাদের ভোগান্তির সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায় গত ২৫ আগস্ট থেকে শুরু সেনা অভিযানের নামে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ। মিয়ানমার সরকার তথা সে দেশের সেনাবাহিনীর সহিংসতার মুখে গত তিন মাসে রাখাইন থেকে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
রোহিঙ্গাদের ওপর এ নির্যাতন-নিষ্পেষণের পাশাপাশি তাদের নাগরিক বলে অস্বীকার করা মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে অনীহা প্রকাশ করে। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে বিশ^বাসী সোচ্চার হলে এবং নিন্দা-প্রতিবাদের মুখে অবশেষে রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমার।
এ জন্য তারা বাংলাদেশের সঙ্গে গত ২৩ নভেম্বর একটি সমঝোতাস্মারকে স্বাক্ষর করে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নির্ধারণের জন্য তার আগে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। স্বাক্ষরিত সম্মতিপত্র অনুযায়ী, প্রথম দফায় শুধু গত বছরের অক্টোবর মাসের পরবর্তী সময়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিয়ানমার পক্ষের ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিনিধিদলটি ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির কার্য পরিধি ও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করার জন্য।
বাংলাদেশ এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্ত করে নতুন করে চুক্তির কথা বললেও শেষ পর্যন্ত গত ১৯৯২ সালে সম্পাদিত চুক্তিকেই অনুসরণ করা হয় এই সম্মতিপত্রে। গত ১৯৯২ সালের চুক্তির আওতায় মিয়ানমার সরকার সে সময় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আরো ২৪১৫ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও মিয়ানমার তাদের আর ফিরিয়ে নেয়নি।
এদিকে, আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গত ২ নভেম্বর ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রস্তাবিত সদস্যদের একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর তার আগের দিন, ১ ডিসেম্বর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ একটি তালিকা দেয় বাংলাদেশকে।
কিন্তু যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রস্তাব চালাচালি চলছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রধান করার প্রস্তাব দেয়া হয়। আর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে প্রধান করার প্রস্তাব দেয়া হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, ডিজিএফআই, এনএসআই, বিজিবি, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সদস্য হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।
অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির পরিবর্তে নতুন করে চুক্তি করার কথা বলেছে।
সংস্থাটির শরণার্থীবিষয়ক পরিচালক গত সোমবার এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে স্থায়ীভাবে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থ’া ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তির পরামর্শ দিয়েছেন।
Posted ১:৫০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta