সূত্র জানায়, প্রত্যাবাসনের জন্য ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা থেকে ৫৫৯ জনকে রাখাইনের বাসিন্দা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে মিয়ানমার। দেশটি জানিয়েছে, ওই ৫৫৯ জন যে কোনো সময় ফিরতে পারবে। তবে ঠিক কবে নাগাদ সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করেনি। এর আগে ২০১১ সালের রাখাইন ছেড়ে আসা ২৪১৫ জন রোহিঙ্গাকে স্বীকৃতি দিলেও ফেরত নেয়নি দেশটি। বর্তমানে সে ঘটনাটিই ঘুরেফিরে সামনে চলে আসছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কতজনকে স্বীকৃতি দিল মিয়ানমার তা বড় কোনো বিষয় নয়। বড় বিষয় হলো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিষয়ে দেশটির আন্তরিকতা নিয়ে। আসলে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে দেশটি আন্তরিক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি যতটুকু বোঝা যাচ্ছে এবং তাদের কর্মকা- থেকে প্রতীয়মান হচ্ছেÑ সার্বিক বিষয়ে দেশটি আন্তরিক নয়।
এদিকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যাবাসনবিষয়ক চুক্তিতে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর থেকে সহযোগিতা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ এ প্রক্রিয়ায় সংস্থাটিকে সম্পৃক্ত করেছে। ইউএনএইচসিআরকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে মিয়ানমার প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছিল।
তবে শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে সম্পৃক্ত করতে মিয়ানমার সম্মত হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, এখন মিয়ানমার ইউএনএইচসিআরকে সম্পৃক্ত করায় প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় তা একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠকের সার্বিক প্রস্তুতি নিতে গত বুধবার পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সভাপতিত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তুতি বৈঠক করেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। সে বৈঠকে দ্বিতীয় প্রত্যাবাসন তালিকা এবং প্রথম তালিকার ৫৫৯ জনের স্বীকৃতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সেই বৈঠকে প্রত্যাবাসনে পাঠানো প্রথম তালিকার ৮ হাজার ৩২ জনের মধ্যে ৬শ জনেরও কম ব্যক্তিকে রাখাইনের বাসিন্দা বলে স্বীকৃতি দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে আসন্ন জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে ব্যাখ্যা চাওয়ার কথা উঠে আসে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম অবশ্য গণমাধ্যমকে বলেছেন, যাচাইয়ের পর মিয়ানমারের অনাপত্তি সংক্রান্ত (প্রথম তালিকার) যে নামগুলো বাংলাদেশ পেয়েছে এখন তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি মিয়ানমারকে দ্বিতীয় তালিকা দেওয়ার প্রস্তুতিও প্রায় চূড়ান্ত।
প্রথম তালিকার সব নাম যাচাইয়ের আগে দ্বিতীয় তালিকা দেওয়ার যৌক্তিকতা বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। দ্বিতীয় তালিকা দিতে কোনো অসুবিধা নেই।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ ১ হাজার ৬৭৩ পরিবারের ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার প্রথম প্রত্যাবাসন তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল। সেই তালিকা থেকে এ পর্যন্ত ৫৫৯ জনকে (প্রথমে ৩৭৪ পরে ১৮৫) রাখাইনের আদি বাসিন্দা বলে স্বীকার করে ফিরতি তালিকা দিয়েছে মিয়ানমার।
আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস, বন্যা, সাইক্লোন হওয়ার আশঙ্কায় চরম ঝুঁকিতে থাকা কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাতিসংঘ সম্প্রতি রোহিঙ্গারা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বলে প্রতিবেদন দেয়।
সেই প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই পাহাড়ি অঞ্চলে থাকা রোহিঙ্গাদের সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শরণার্থীবিষয়ক বিশেষ সেলের তত্ত্বাবধানে কাজটি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি আরও ১৪ হাজার রোহিঙ্গাকে সরানো হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞের মুখে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর এসেছিল ৮৭ হাজার। আর এখানে আগে থেকে আরো প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রায় ১০ লাখ ৯৫ হজার রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের আওতায় এনেছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি এখনো চলমান রয়েছে।
Posted ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০১ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta