কক্সবাংলা ডটকম(১৫ সেপ্টেম্বর) :: রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশের পাশে আছে ভারত। এ কথা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেসসচিব নজরুল ইসলাম এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন আসে। সুষমা স্বরাজকে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের যে অবস্থান, ভারতেরও একই অবস্থান। ভারতের পক্ষ থেকে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চাপ দিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছেন সুষমা।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী আসায় ভারত সরকার বাংলাদেশে ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সহযোগিতার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ইনসানিয়াত’।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশকুমার বৃহস্পতিবার বিবৃতিতে বলেন, ‘ভারতের অত্যন্ত নিকটতম বিশ্বস্ত প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের যে কোনো সংকটে ভারত পাশে থাকবে। এই সময়ে বাংলাদেশ সরকার যে ধরনের সাহায্য চাইবে, ভারত তা দিতে প্রস্তুত থাকবে।’
এর আগে গত শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে ভারত রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সংকটে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ সমস্যাকে কেবল মিয়ানমারের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা বলে আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মানবিক শরণার্থী সমস্যা বলে নীতিগতভাবে মেনে নেয়।
এ কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর বিশেষ প্রক্রিয়াকে ‘অপারেশন ইনসানিয়াত’ নাম দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জরুরি নির্দেশে দ্রুত বৈঠক ডেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুপুরে ভারতের বিমানবাহিনীর বিমানে প্রথম ত্রাণসামগ্রী বাংলাদেশে পৌঁছেছে। পাশাপাশি আগামী কয়েকদিন ভারতীয় বিমানবাহিনী লাগাতার ত্রাণসামগ্রী চট্টগ্রামে পৌঁছে দেবে। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল, চিনি, তেল, লবণ, বিস্কুট, নুডলস, মশারি ইত্যাদি।
একই সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিতে অবস্থিত মিয়ানমার রাষ্ট্রদূত মাউং ওয়াইকে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। কেবল বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও ইতোমধ্যে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আগে থেকেই ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে শিবির গেড়ে রয়েছে। এর মধ্যে দিল্লি, কলকাতা, হরিয়ানা, জন্মু, পাঞ্জাব ও চেন্নাইতে তাদের সংখ্যা বেশি। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে আরও রোহিঙ্গা ভারতে চলে আসতে পারে বলে জানানো হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশকুমার বিবৃতিতে সহযোগিতার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, ভারত সরকার সহযোগিতার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। ভারত সরকার মনে করে এই শরণার্থী আগমনের ফলে এক ভয়াবহ মানবিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে গত সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে এক প্রতিবেদন দেন।
প্রতিবেদনে হাইকমিশনার বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার কারণে বাংলাদেশের জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে তিনি অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের পাশে দাঁড়ানোর সুপারিশ করেন।
এদিকে, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে মিয়ানমার সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এতে বলা হয়, মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার সুপারিশ কার্যকর করার জন্য মন্ত্রীপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে।
মিয়ানমার সরকার আরও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে, তারা সকল বাস্তুচ্যুত পরিবারকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবে। তারা বলেছে, শুধু রোহিঙ্গা নয়, বহু হিন্দুসহ সংখ্যালঘু জাতির ম্রু, দাইংগেট ও কামান পরিবারও বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের দাবি, কফি আনানের রিপোর্ট থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই সন্ত্রাসবাদীরা মিয়ানমার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়।
এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন বলেন, মিয়ানমার সরকারকে কফি আনান রিপোর্ট বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে।
মিয়ানমার সরকারের লিখিত জবাব অনুযায়ী, ভারত সরকার মনে করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারবাসী বলে নীতিগতভাবে মেনে নিচ্ছে দেশটি। তবে সকল রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে না। যেহেতু তাদের অনেকেই আরাকান সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনীর সদস্য।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে ভারত
ভারতের সুপ্রিম কোর্টকে অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, ভারতে পালিয়ে আসা এবং বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। তাদের ভারতে শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া হবে না।
এদিকে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ভারত সাত হাজার টন ত্রাণসামগ্রী পাঠাবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল কে ভেনুগোপাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দাখিল করে বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের যোগসাজশ রয়েছে, তাই তাদের ভারত থেকে বিতাড়নের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার তাতে সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে না।
এই হলফনামায় বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পাকিস্তানের লস্কর-এ তৈয়বা, জয়শ-ই মহম্মদের মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে। তাই এসব রোহিঙ্গা ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। তাদের সঙ্গে আইএস সংস্থার যোগসাজশের প্রমাণ মিলেছে। ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের দেশ থেকে বিতাড়ন করা হচ্ছে।
দুই রোহিঙ্গার আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি বিচারাধীন। আগামী সপ্তাহে এর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
Posted ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta