কক্সবাংলা ডটকম(১০ এপ্রিল) :: সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে (সোমবার) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেন।
এদিকে ডিএসইতে গত কয়েক কার্যদিবসের মতো তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটে পড়ে। ক্রেতা সংকটে পড়ে নতুন করে আরও ১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) চলে এসেছে। এতে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৩ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকে।
অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটে পড়ার দিনে ডিএসইতে ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৮টির এবং ১৮৭টির দাম অপরিবর্তিত। দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখানো একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২০১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৪৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৯৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন লেনদেনের শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সূচকের পতনের আভাস পাওয়া যায়। লেনদেনের সময় ১০ মিনিট গড়ানোর আগেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। তবে লেনদেনের শুরুর দিকে লেনদেনে ভালো গতি ছিল। প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেনে ডিএসইতে ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়ে যায়।
লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দরপতনের মাত্রা বাড়ায় লেনদেনের গতি কমে আসে। এতে দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৬৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৯৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ১৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
বাজারটিতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আমরা নেটওয়ার্কের ২৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেমিনি সি ফুড।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, জেনেক্স ইনফোসিস, ইস্টার্ন হাউজিং, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, মিডল্যান্ড ব্যাংক, বাংলা শিপিং কর্পোরেশন এবং লিগাসি ফুটওয়্যার।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেয়া ১১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৭টির এবং ৫৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
লোকসানি ও দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দরে অস্বাভাবিক উত্থান
অপরদিকে এক বছরের বেশি সময় ধরে ধুকতে থাকা শেয়ারবাজারে লোকসানি ও দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দরে অস্বাভাবিক উত্থানের প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার (১০ এপ্রিল) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে যে ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, তার মধ্যে পাঁচটিই লোকসানি।
বাকি পাঁচটি কোম্পানির মধ্যে একটি টানা চার বছর লোকসান দেওয়ার পর গত অর্থবছরে সামান্য মুনাফা করতে পেরেছে। চলতি অর্থবছরে কিছুটা বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলছে। একটি কোম্পানি গত এক যুগে দুই বছর নামমাত্র কিছু ডিভিডেন্ড দিয়েছে। আরেকটি কোম্পানি গত এক যুগেও কোনো বছরে শেয়ার প্রতি এক টাকার বেশি ডিভিডেন্ড নিতে পারেনি। একটি কোম্পানি গত অর্থবছরে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে এই নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কেবল একটি মৌলভিত্তির শক্তিশালী কোম্পানি।
এসব কোম্পানির প্রায় সবগুলোই স্বল্প মূলধনী। শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বারবার বলে আসছেন, শেয়ার সংখ্যা কম, কেবল এই কারণে লোকসানী হলেও শেয়ার নিয়ে প্রায়ই কারসাজি করা যায়। নানা সময় এসব কোম্পানির শেয়ারের দর অনেকটাই বাড়ে, কিন্তু পরে কমে আসে।
দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন হওয়া দুটি কোম্পানি হলো বিচ হ্যাচারি ও বিডি ওয়েল্ডিং। দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৯.৮৬ এবং ৯.৬৯ শতাংশ।
২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত লোকসানের কারণ ডিভিডেন্ড দিতে না পারা বিচ হ্যাচারি ২০২১ সালে শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা এবং গত বছর ১৫ পয়সা ডিভিডেন্ড দিয়েছে। চলতি বছর অর্ধবার্ষিকে শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা মুনাফা করার কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি। আগের দিন শেয়ারদর ছিল ৩৬ টাকা ৫০ পয়সা, এক দিনে ৩ টাকা ৬০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকা ১০ পয়সা।
বিডিওয়েল্ডিংয়ের উৎপাদন বন্ধ। নতুন একটি কোম্পানি এটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার কিনে পর্ষদে এসেছে। ২০১৯ সালে সবশেষ শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা ডিভিডেন্ড ঘোষণা করলেও তা আর বিতরণ করা হয়নি।
তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা শ্যামপুর সুগারের দর বেড়েছে ৭.২৭ শতাংশ। গত দুই দশকেও কখনও ডিভিডেন্ড দিতে না পারা কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ২৬ টাকা ৬৯ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে শেয়ার প্রতি ৭৯ পয়সা লোকসান দেয়া লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারদরে উত্থান অব্যাহত রয়েছে। গত ১৯ মার্চ শেয়ারদর ছিল ৪২ টাকা ৩০ পয়সা। এক মাসেরও কম সময়ে তা এদিন একশ টাকা ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে। দিন শেষে ৬.৮৯ শতাংশ বেড়ে দর দাঁড়িয়েছে ৯৭ টাকা ৭০ পয়সা।
২০০১ সাল তালিকাভুক্তির পর কখনও ডিভিডেন্ড দিতে না পারা মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে ৬.০২ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ২৯ টাকা ৯০ পয়সা। দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ৭০ পয়সা।
গত এক যুগের মধ্যে ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা এবং ২০২১ সালে ৫ পয়সা লভ্যাংশ দেওয়া সমতা লেদারের শেয়ারদর ৫.১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ টাকা ১০ পয়সা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি কেবল চার পয়সা মুনাফা করতে পেরেছে কোম্পানিটি।
দুই দশকে কখনও ডিভিডেন্ড দিতে না পার জিলবাংলা সুগার মিলসের শেয়ারদর বেড়েছে ৫.০৯ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ১২৯ টাকা ৫০ পয়সা, দিনের শেষ লেনদেন হয়েছে ১৩৬ টাকা ১০ পয়সা। অর্ধবার্ষিকে কোম্পানিটি ১০ টাকার শেয়ারে লোকসান দিয়েছে ৩২ টাকা ৮৪ পয়সা।
এছাড়া এপেক্স ফুটওয়্যারের দর ৬.৫৭ শতাংশ, গত বছর তালিকাভুক্ত বিডিথাই ফুডের দর ৫.৭৬ শতাংশ এবং সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে ৩.০৪ শতাংশ। শীর্ষ দশের বাইরে আরও ছয়টি কোম্পানির দর এক শতাংশের বেশি, তিনটির দর বেড়েছে দুই শতাংশের বেশি।
Posted ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta