মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান

শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮
335 ভিউ
সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান

কক্সবাংলা ডটকম(২০ ডিসেম্বর) :: একাত্তরের পর ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা ‘টার্গেটেড’ জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু না হওয়ায় দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তারা মনে করেন, এই পরিস্থিতি উত্তরণে রাষ্ট্র, সরকার এবং প্রশাসনের যেমন ভূমিকা রয়েছে তেমনি প্রত্যেকটি বিবেকবান মানুষেরও ভূমিকা রয়েছে। আর তাই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধে সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

‘একাদশ সংসদ নির্বাচন-২০১৮ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুসহ প্রান্তিক মানুষের ভোটাধিকার ও মানবাধিকার সুরক্ষা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এই আহ্বান জানান।

বৃহস্পতিবার ভোরের কাগজের কনফারেন্স রুমে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এএলআরডি, দেশ টিভি ও ভোরের কাগজ এই বৈঠক আয়োজন করে। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুলতানা কামাল, সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশের পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

সুলতানা কামাল বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে যারা চলেন তাদের কাছে আমাদের কোনো প্রত্যাশা নেই। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কথা বলেন তাদের চেহারাটা কেমন? মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির চেহারা যদি এমন হয় যে, তারা নারী নির্যাতনকারী, শিশু হত্যাকারীদের সঙ্গে নিয়ে চলেন, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি ও সম্পদ কেড়ে নেন, ব্যাংক লুট করা, শেয়ারবাজার শূন্য করা মানুষগুলোই যদি আমাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের চেহারা নিয়ে আসে তাহলে সেই জায়গায় আমাদের বারবার প্রশ্ন তুলতে হবে এবং নাগরিক সমাজের অবশ্যই নৈতিক দায়িত্ব এবং সাহস করে বলতে হবে যে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এমন চেহারা দেখতে চাই না। আমরা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারসম্পন্ন বাংলাদেশ চাই।

নিজামুল হক বলেন, শুধু সরকার নয়, দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি ও আমাদের সবাইকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে সংখ্যালঘুরাও মানুষ। যতদিন পর্যন্ত এই বিশ্বাস না জন্মাবে ততদিন সংঘর্ষ থাকবে। দেশে অনেক আইন আছে। আইন দিয়েই সব হয় না। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনে এই পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ তাদের জমি ফেরত পাননি।

রানা দাশগুপ্ত বলেন; সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি গত দুই তিন দশক ধরে আমরা সামনে আনার চেষ্টা করছি। এ বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভাববার কথা থাকলেও তা তারা করেনি। পাকিস্তানি মানসিকতা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারিনি। তাই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জীবনে এই নির্যাতন। সংখ্যালঘু নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু না হওয়ায় দুর্বৃত্তরা উৎসাহিত হচ্ছে।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক অর্জন বিসর্জনের দিকে যাচ্ছে বলেই সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে কথা বলতে হচ্ছে। সংখ্যালঘু সমাজের ভেতর থেকে যদি মোকাবেলার শক্তি না গড়ে ওঠে তবে বিপন্ন হয়ে যাবে। সংখ্যালঘুদের ওপর রেওয়াজ মাফিক যে নির্যাতন হয় রাষ্ট্র এ বিষয়ে কোনো বিচার করেনি। রাজনৈতিক প্রণোদনায় দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনী পরিবেশ থাকলে এ নির্যাতন কম হতো বলে তিনি মনে করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি আসনের প্রতিটিতেই সেনাবাহিনী অবস্থান করবে- ১৭ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যে উদ্বে¦গ প্রকাশ করে গৌতম দেওয়ান বলেন, নির্বাচনের আগে ইসির এমন বক্তব্য সাধারণ মানুষের মনে শঙ্কা তৈরি করেছে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের নামে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ধর পাকড়, তল্লাশি চলছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন সেখানে বিঘ্নিত হচ্ছে।

এই অবস্থায় অনেকে ভোটকেন্দ্রে নাও যেতে পারে। আমরা আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই। রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে এবং সংসদে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের এবং নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি করেন তিনি।

শামসুল হুদা বলেন, ধর্মীয় ও সংখ্যাগত দিক দিয়ে যারা দুর্বল তাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন তা বছরজুড়েই চলছে এবং এ ক্ষেত্রে অজুহাতের অভাব হয় না। ডিজিটাল যুগে উছিলা এখন নতুন করে তৈরি করা যায়। যারাই আক্রান্ত হচ্ছে তারাই আসামি হচ্ছে। বিচার তারা পাচ্ছেন না। তারা জেলে পড়ে আছে আর আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যতদিন এই বিচারহীনতা ও তদন্তহীনতা, জবাবদিহিহীনতা রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে থাকবে ততদিন মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, রাজনীতিবিদদের দিক থেকেই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনটা আসে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই এই কাজটা করে। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কাছে অনুরোধ, নিজ এলাকায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা আপনারা দেন। সমাজে দুর্বৃত্ত থাকবে। কিন্তু তাদের প্রতিহত করার ক্ষমতা প্রশাসনের থাকতে হবে।

শ্যামল দত্ত বলেন, নির্বাচন দেশের মানুষের কাছে উৎসব হলেও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর কাছে তা শঙ্কার। তাই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ যতই এগিয়ে আসছে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মনে আশঙ্কা ততই বাড়ছে। এই উৎসবে যাতে সংখ্যালঘুরাও শামিল হতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

সারা হোসেন বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় আমরা দেশ বা রাষ্ট্রকে দোষারোপ করছি। কিন্তু নাগরিক সমাজেরও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা আছে। সংবিধানকে এখন যে অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এটি বাহাত্তরের সংবিধান নয়। নিরপেক্ষতা আমাদের সংবিধানেও নেই। আমাদের মাঝেও নেই। বিচার ব্যবস্থা যখন সবলদের নিরাপত্তাই নিশ্চিত করতে পারে না তখন দুর্বলদের আশার জায়গাটি কোথায়?

সঞ্জীব দ্রং বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হতে আর মাত্র দুই বছর বাকি। কিন্তু সব নাগরিক মানবিক মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বসবাসের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি। স্বাধীনতার এত বছর পরও যথন সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগের কথা চিন্তা করে এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে? মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যখন ঘটবে তখন রাষ্ট্রকে সংবেদনশীল ও মানবিক হতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্র দিন দিন সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলেছে।

কাজল দেবনাথ বলেন, ভোট যিনি চাইছেন তিনি তা চাওয়ার যোগ্য কিনা এটি একটি বড় প্রশ্ন। আমাদের প্রত্যাশা, রাষ্ট্র, নির্বাচন কমিশন, সরকার এবং যারা রাজনীতি করেন ভোট চান তাদের প্রত্যেককে জাতির সামনে অঙ্গীকার করতে হবে যে, ‘নির্বাচন মানেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নির্যাতন’ এই স্টিগমা থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনতে হবে। একাত্তরের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ এবং বাহাত্তরের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।

335 ভিউ

Posted ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com