কক্সবাংলা ডটকম(১১ ফেব্রুয়ারি) :: বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মাদ জাবেদ পাটোয়ারি বলেছেন, আমরা আশা করছি র্যাব তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে যাতে সাগর-রুনি হত্যা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়
আট বছর আগে রাজধানীর নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি। তারপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ আটটি বছর। কিন্তু কেন আর কারা তাদের হত্যা করেছিল এখনও সে বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কিছুই জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী
আলোচিত হত্যাকাণ্ডটির তদন্তভার দেওয়া হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। এখন পর্যন্ত তারা উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এখন পর্যন্ত আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ৭১ বার।
সর্বশেষ গত সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ছিল এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। তদন্ত কর্মকর্তাদের ব্যর্থতায় এবারও যথারীতি তা পিছিয়েছে। আগামী ২৩ মার্চ এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করেছে ঢাকার একটি আদালত।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টেলিভিশনের নিউজ এডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন সাগর সারোয়ার আর এটিএন বাংলা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন মেহরুন রুনি। ২০১২ সালের এই দিনে রাজাবাজার এলাকার ফ্ল্যাটবাড়িতে খুন হন তারা।
তখন এই দম্পতির একমাত্র সন্তান মেঘের বয়স ছিল ৫। বাবা-মায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় রুমেই ছিল সে।
এই জোড়া খুনের ঘটনা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল দেশব্যাপী। প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি উঠেছিল সব মহল থেকে। দুই সহকর্মীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছিলেন দেশের সাংবাদিকরা।
ঘটনার পরপরই সাগর-রুনির বাসায় গিয়েছিলেন তৎকালীন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। ছোট্ট মেঘকে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাবা-মা হত্যার বিচার পাওয়ার। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন তো “আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে” খুনিদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে ঘড়ির কাঁটার হিসেবে ৭০১২৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিচার তো দূরের কথা উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতিও দেখা যায়নি তদন্তকাজে।
প্রাথমিকভাবে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ-কে (ডিবি) সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়। কিন্তু, তারা কোনো কূল-কিনারা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটির তদন্তভার হস্তান্তর করা হয় র্যাবকে।
কিন্তু, আটটি বছর পেরিয়ে গেলেও র্যাবও এ মামলার তদন্তকাজে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি কিংবা কোনো অপরাধীকে ধরতে সক্ষম হয়নি।
র্যাবের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত মামলাটির তদন্ত করেছেন- মো. মইনুল ইসলাম, মহিউদ্দিন আহমেদ, মো. জাফর উল্লাহ, মো. ওয়ারেছ মিয়া, মো. শহিদার রহমান ও বর্তমান এডিসি খন্দকার মো. শফিকুল আলম এই ৬ কর্মকর্তা।
র্যাবের দাবি, তারা গুরুত্ব সহকারেই মামলাটির তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং অগ্রগতি সম্পর্কে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে জানাচ্ছেন।
এখন পর্যন্ত বাহিনীটির পক্ষ থেকে অগ্রগতি সম্পর্কে আটটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। কিন্তু সেগুলোর একটিতেও এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য বা প্রমাণ উঠে আসেনি।
এখন পর্যন্ত ১৫৮ ব্যক্তিকে জেরা করেছেন তদন্তকারীরা। তাদের মধ্যে ছিলেন ২৭ সাংবাদিকও। নেওয়া হয়েছে শিশু মেঘের জবানবন্দিও।
তদন্তের স্বার্থে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোর ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ল্যাবরেটরিতে।
তবে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে মামলাটির তদন্তকাজে সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। পাশাপাশি, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত হত্যা মামলায় গ্রেফতার ছয় ব্যক্তিকে সাগর-রুনি হত্যা মামলায়ও গ্রেফতার দেখানো হয়।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রায় ছয় মাস পর অর্থাৎ ওই বছরের ২৩ আগস্ট রাজধানীর বাসায় খুন হয়েছিলেন ডা. নারায়ণ।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দাবি, ডা. নারায়ণ হত্যাকাণ্ডের আলামত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিলে যায়।
তবে উপরোক্ত অভিযুক্তদের কেউই সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেনি।
ব্যর্থ তদন্ত?
শেষবারের মতো ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় র্যাব। বাহিনীটির তৎকালীন এএসপি মহিউদ্দিন আহমেদ ছিলেন মামলাটির তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা।
এই দীর্ঘসূত্রিতায় হতাশ সাগর-রুনির স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, প্রকৃত সত্য চাপা দেওয়া হয়েছে।
সাগরের মা সালেহা মুনিরের জিজ্ঞাসা, “আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেক স্পর্শকাতর মামলার সমাধান করেছেন। তবে কেন তারা সাগর-রুনি হত্যা মামলার কোনো কিনারা করতে পারছেন না?”
সম্প্রতি ঢাকা ট্রিবিউনকে তারা বলেন, গত একবছরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেননি।
শোকার্ত এই মা আক্ষেপ করে বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে তারা চাইলে সন্দেহভাজনদের ছেড়ে দিতে পারেন।”
এই মামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য সোমবার একাধিক চেষ্টা সত্ত্বেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এডিসি খন্দকার মো. শফিকুল আলমের সঙ্গে।
মামলার এই দীর্ঘসূত্রিতায় সাগর-রুনির স্বজনদের মতো হতাশ তাদের সহকর্মীরাও। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “হত্যাকাণ্ডের আট বছর পেরিয়ে গেলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখনও মূল খুনিদের খুঁজে বের করতে ব্যর্থ।”
মঙ্গলবার বগুড়ায় এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মাদ জাবেদ পাটোয়ারি বলেছেন, ‘‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি এখন র্যাব তদন্ত করছে। তারা নিয়মিতভাবে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করছে। আমরা আশা করছি নিশ্চয়ই র্যাব তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে যাতে সাগর-রুনি হত্যা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়।’’
Posted ৭:১০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta