কক্সবাংলা ডটকম(২৮ অক্টোবর) :: ইলিশের মা মাছ রক্ষা এবং ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে ২২ দিন বন্ধ থাকার পর আজ থেকে আবারও নদ-নদীতে ইলিশ ধরা শুরু হচ্ছে। গত ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন দেশের ৩৭ জেলার ৭ হাজার কিলোমিটার নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল মৎস্য মন্ত্রণালয়।
এই ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি করা, বাজারজাত করা, মজুত রাখাসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর নিষেধাজ্ঞার সময় ১৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় টাক্সফোর্সের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
ইলিশ মূলত লোনাপানির মাছ। ডিম ছাড়ার আগে নদীর মিঠাপানিতে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। একটি মা ইলিশ সর্বনিম্ন দেড় লাখ ও সর্বোচ্চ ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম দেয়।
মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার শাহের খালী থেকে হাইতকান্দী পয়েন্ট, ভোলার তজুমুদ্দীন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দীন থেকে পশ্চিম সৈয়দপুর আওলিয়া পয়েন্ট,পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া থেকে গণ্ডামার পয়েন্ট পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
সূত্র আরও জানায়, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যেই বঙ্গোপসাগর ও কক্সবাজার জেলার সকল নদ-নদীতে এ সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এ ছাড়াও দেশের সুন্দরবনসহ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা এবং মোহনাসমূহেও এই ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়েছিল। ইলিশ ধরা রোধকল্পে দেশের মাছঘাট,আড়ত,,হাটবাজার,চেইন শপসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ২২ দিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানও পরিচালিত হয়েছে।
মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪-০৫ থেকে ২০০৭-০৮ সাল পর্যন্ত জাটকা আহরণ নিষিদ্ধের সময়ে জেলে পরিবারপ্রতি মাসে ১০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৪০ কেজি করে দেওয়া হচ্ছে।
তাছাড়া ২০০৭-০৮ সালে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৩৫টি জেলে পরিবার এ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত থাকলেও বর্তমানে তা ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪-এ উন্নীত হয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতাগ্রহণের আগের ৭ বছরে জেলেদের জন্য খাদ্যশস্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ৬ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন। কিন্তু বিগত ২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে এ সহায়তা দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৫ মেট্রিক টন।
প্রকৃত জেলেদের শনাক্ত করে নিবদ্ধকরণ ও পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে জুন ২০১৭ পর্যন্ত ১৬ লাখ ২০ হাজার মৎস্যজীবী-জেলের নিবন্ধন ও ডাটাবেইজ প্রস্তুত এবং ১৪ লাখ ২০ হাজার জেলের পরিচয়পত্র বিতরণ সম্পন্ন করে সরকার ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদনবৃদ্ধিতে সচেষ্ট রয়েছে। এর মধ্যে ইলিশ আহরণে জড়িত প্রায় ৭ লাখ জেলে এবং মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে ২২ দিনের জন্য ৩ লাখ ৯৫ হাজার জেলে পরিবারকে পরিবারপ্রতি ২০ কেজি করে প্রায় ৭ হাজার টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৩০৫ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রফতানি করে ৪ হাজার ২৮৭ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে; যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ২৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ মৎস্যখাতে জড়িত এবং ১১ শতাংশের অধিক লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক দশমিক ১৫ শতাংশ। তাই একক প্রজাতি হিসেবে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানে এর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিকটন, যা বৃদ্ধি পেয়ে গত ৯ বছরে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ অবস্থান প্রথম। বিশ্বের মোট ইলিশের ৭০-৭৫ ভাগ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭-১৮ সালে ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ১০ বছর আগে দেশের মাত্র ২১টি উপজেলার নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। এখন ইলিশ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ১২৫টি উপজেলার নদীতে। বিশ্বের মোট ইলিশের ৭৫ শতাংশই উৎপাদিত হচ্ছে বাংলাদেশে। বাকি ইলিশ উৎপাদিত হয় প্রধানত ভারত ও মিয়ানমারে। দেশের নদীতে ধরা পড়া মোট মাছের ১১ শতাংশই ইলিশ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরে গত বছর আশ্বিন মাসের প্রথম চাঁদের পূর্ণিমার দিন এবং এর আগের তিন দিন ও পরের ১১ দিনসহ মোট ১৫ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। আর এ বছর আশ্বিন মাসের প্রথম চাঁদের পূর্ণিমার দিন এবং এর আগে চার দিন ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বিশ্বে প্রতিবছর ৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়। এর ৭৫ শতাংশই আহরিত হয় বাংলাদেশে। সার্বিক প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় জিডিপিতে এর হিস্যা ১ শতাংশের বেশি। মৎস্য অধিদফতরের হিসাবে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ লাখ টনের বেশি ইলিশ উৎপাদিত হয়। আর চলতি বছর উৎপাদন সাড়ে ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
Posted ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta