কক্সবাংলা ডটকম(৪ অক্টোবর) :: সাহারা বলতে আমাদের চোখে ভেসে ওঠে ধু-ধু বিস্তীর্ণ বালির উত্তপ্ত এক প্রান্তর, বিশাল এক মরুভূমি। কোথাও সবুজের কোনো স্পর্শ নেই। পানির অভাবে কোনো খুব কম প্রাণি দেখা যায় এখানে, হাতেগোনা কিছু প্রাণী সংগ্রাম করে বেঁচে আছে এই প্রান্তরে, মানুষের বসবাস নেই বললেই চলে।
সবমিলে মৃত্যুপুরীর মতো নিস্তব্ধতা। তবে এই সাহারাই নাকি একসময় সবুজ ছিল। শুনতে হয়তো অদ্ভুত শোনাচ্ছে, কিন্তু এটিই সত্য যে আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমি একসময় সবুজ ছিল।
খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ সালে গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস সাহারার যে বর্ণনা দিয়ে গেছেন, তাও প্রাণহীন এক মরুভূমি। প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে গুটিকয়েক মানুষ টিকে আছে। তাহলে সাহারা সবুজ ছিল কবে? উত্তর হলো ৫০ লক্ষ বছর আগে। ঘন সবুজ ঘাসে ঢাকা ছিল সাহারার প্রান্তর। এছাড়াও গহিন বনও ছিল সাথে সবুজ চিরে বয়ে যাওয়া নদী যেটা আবার ভূ-মধ্যসাগরের সাথে সংযুক্ত ছিল।
১৮২২ সালে ইংরেজ গবেষক ডিকসন ডেনহাম প্রথম ধারণা করেন সাহারা হয়তো একসময় বরফে ঢাকা ছিল। বরফযুগে অবশ্য পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলই বরফের নিচে চলে গিয়েছিল। ১৯২০ সালে ইতালির টহলরত একদল সৈন্য সাহারার একটি গুহায় আশ্রয় নেয়।
তারা প্রথম জীবাশ্মের সন্ধান পায়। এরপর ইটালিয়ান গবেষক আরদিতো দেসিও এবং তার ছাত্র পেত্রোকচি অনুসন্ধান চালিয়ে বেশ কয়েকটি জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন। যেসব প্রাণীর জীবাশ্ম তাঁরা খুঁজে পান সেগুলো মরুভুমির প্রাণী নয়। এছাড়াও নদীর মোহনায় বাস করে এমন প্রাণীরও জীবাশ্ম পাওয়া যায়।
১৯৩৩ সালে আবার আরেকটি গুহায় চমকপ্রদ কিছু আবিষ্কৃত হয়। কৃতিত্ব এবারও একদল সেনার। ফরাসি একটি সৈন্যদল একটি গুহায় অনেক প্রাচীন গুহাচিত্র খুঁজে পায়। গবেষকদের অবাক করে দেয় চিত্রগুলো। কারণ, চিত্রগুলোতে বর্তমান ধু-ধু মরুভুমির বদলে সবুজ শ্যামল প্রান্তর এবং আবাদের জন্য উর্বর জমি দেখা যাচ্ছে।
ফটোগ্রাফার, শিল্পী এবং ইতিহাসবিদদের গবেষণার সমন্বিত ফলাফল হলো পূর্বের সাহারা এখনকার মতো রুক্ষ ছিল না। তাদের এই ফলাফলকে সমর্থন দেয় ফসিল আর পাথর পরীক্ষার তথ্য। গুহাচিত্রগুলোতে দেখা যায় অনেকটা মিশরীয় ধাঁচে পোশাকপরা এক জনপদের চাষাবাদ, শিকার, পশুপালন এবং তাদের সামগ্রিক জীবনযাত্রার ছবি।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, সাহারার এই আমূল পরিবর্তনের জন্য দায়ী মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন। একপর্যায়ে নদী-নালা, হ্রদ শুকিয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে সাহারা ‘মরুভূমি’ হয়ে যায়।
ধারণা করা হয়, ৫০/৬০ লক্ষ বছর আগে ভূ-মধ্যসাগর কিছুটা শুকিয়ে গিয়েছিল। এর ফলে আটলান্টিকের সাথে ভূ-মধ্যসাগরের সংযোগ হারিয়ে যায়। লবণের একটি স্তর জমা হয়। লবণ-পানির হ্রদকে কেন্দ্র করে একটি ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠে।
কিন্তু একটা সময় আবার পানিতে ভরে ওঠে ভূ-মধ্যসাগর। যারা লবণ-পানিতে বাস করত তারা অভিযোজিত না হতে পেরে বিলুপ্ত হয়। একই সময়ে বৃষ্টিপাত কমে যেতে শুরু করে। গাছপালা মরে যেতে শুরু করে। মানুষজন তাদের বসতি স্থানান্তর শুরু করে এবং একপর্যায়ে পরিত্যক্ত হয় সাহারা।
বর্তমানে সাহারায় গড় বৃষ্টিপাত বছরে ৩৫-১০০ মিলিমিটার। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেসিকা এবং তাঁর দলের গবেষণায় দেখা গেছে ১০০০-৮০০০ বছর পূর্বেও সাহারায় বর্তমান থেকে ১০ গুণ বেশি বৃষ্টিপাত হতো। ৮০০০ বছর পূর্বে থেকে সাহারা জনমানবহীন হতে শুরু করে।
সবথেকে মজার বিষয়, সাহারাতে বৃষ্টিপাত খানিকটা বেড়েছে, গত শীতে সাহারার কিছু অংশে বরফও পড়েছে। প্রকৃতির খেলা বড়ই অদ্ভুত!
Posted ২:১৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ অক্টোবর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta