বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সাথে গোপন আঁতাতের কারণ কি

রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৭
267 ভিউ
সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সাথে গোপন আঁতাতের কারণ কি

কক্সবাংলা ডটকম(২৫ নভেম্বর) :: মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও শক্তি মোকাবেলায় ইসরায়েলের সাথে সৌদি আরব এক ধরনের সখ্যতা গড়ে তুলেছে। এই সম্পর্ক ধীরে ধীরে গতে উঠছে, তবে এটি খুবই স্পর্শকাতর সম্পর্ক।

কূটনীতি ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদদাতা জনাথন মার্কাস লিখেছেন, তলে তলে এই দুটো দেশের মধ্যে কি হচ্ছে প্রায়শই তার কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের চিফ অফ স্টাফ জেনারেল গাদি আইজেনকট যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক একটি সৌদি সংবাদপত্র এলাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইরানকে মোকাবেলায় তার দেশ সৌদি আরবের সাথে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের জন্যেও প্রস্তুত রয়েছে।

“আমাদের মধ্যে স্বার্থের মিল রয়েছে ইরানি চক্র মোকাবেলার ব্যাপারে আর এব্যাপারে আমরা সৌদি আরবের সাথেই আছি,” বলেন তিনি।

এর কিছু দিন পর, প্যারিসে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনের পর, সৌদি আরবের সাবেক এক বিচার-মন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল করিম ইসা, যিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, তিনি ইসরায়েলি একটি সংবাদপত্র দ্যা মারিভকে বলেছেন, “ইসলামের নামে কোন সহিংসতা বা সন্ত্রাসের কোথাও কোন যৌক্তিকতা নেই, এমনকি ইসরায়েলেও।”

আরব বিশ্বের ভেতর থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার এরকম প্রকাশ্য নিন্দা খুব একটা দেখা যায় না।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও শীর্ষস্থানীয় সৌদি রাজকুমারদের সাথে সাম্প্রতিক দুটো বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন। ওই বৈঠকে সৌদি রাজকুমাররা তাকে বলেছেন, “আপনারা তো আর আমাদের শত্রু নন।”

জনাথন মার্কাস লিখেছেন, এধরনের বার্তা তো আর দুর্ঘটনাবশত দেওয়া হয় না। এসব বার্তা দেওয়া হয় খুবই সতর্কভাবে। এসবের লক্ষ্য থাকে ইরানকে সতর্ক করা। এবং ইসরায়েলের সাথে গড়ে উঠা সম্পর্কের ব্যাপারে সৌদি আরবের লোকজনকে অবহিত করা।

ইরানের হুমকি

কোনো এক পর্যায়ে এটি ‘পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট জোট।’ ইরাকে ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনের শাসন ধ্বংস হওয়ার পর দেশটিতে ‘সুন্নি আরব’ কৌশলের পরিবর্তে ‘শিয়া ইরান’ কৌশল গুরুত্ব পেতে শুরু করে।

এর ফলে নতুন ইরাকে শিয়া রাজনৈতিক নেতৃত্ব আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করে ইরানের সাথে। ফলে ইরাকি শিয়া মিলিশিয়ারা সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকারের পক্ষ হয়ে লড়াই করছে।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট আসাদকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয় ইরান, তার সাথে ছিলো রাশিয়ার সামরিক সহযোগিতা- এর ফলে পরিস্থিতি প্রেসিডেন্ট আসাদের অনুকূলে চলে আসে।

এর ফলে তেহরান থেকে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা পর্যন্ত একটি ইরানি করিডোর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। অনেক সুন্নি নেতাই এটিকে দেখছেন আরব মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি পারস্য দেশের অনুপ্রবেশ হিসেবে।

একারণে ইরান ও সৌদি আরবের শত্রুতা শুধু কৌশলগত কারণেই নয়, ধর্মীয় কারণেও।

বর্তমানে সিরিয়ার যে পরিস্থিতি তাতে দেখা যাচ্ছে যে ইরান এবং লেবাননের হেযবোল্লাহ গ্রুপের মতো তার মিত্ররাই যুদ্ধে জয়লাভ করছে বলে মনে হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব ও ইসরায়েল এই দুটো দেশই নিজেদের সম্পর্ক আরো জোরালো করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

দুটো দেশেরই চেষ্টা হচ্ছে – ইরান যাতে কখনো পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি প্রতিরোধে যে আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছে তার ব্যাপারেও এই দুটো দেশ খুব একটা সন্তুষ্ট নয়। এছাড়াও উভয়েই মনে করে লেবাননের প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত হেযবোল্লাহ গ্রুপ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে উঠেছে।

ট্রাম্প ফ্যাক্টর

তবে সেখানে আরো অনেক কিছুই ঘটছে। এটা যে শুধু ইরানের উত্থান তা নয়। আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও এখানে আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে নতুন যে প্রশাসন তার মধ্যপ্রাচ্য নীতি। তার সাথে আছে আরব স্প্রিং এবং সিরিয়ার ভয়াবহ যুদ্ধের মতো বিষয়ও।

প্রথমত ওয়াশিংটনের নতুন প্রশাসন নিয়ে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের কোন অভিযোগ নেই। এ দুটো দেশই সফর করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং সেসময় তিনি ওই দুটো দেশের কৌশলগত পরিকল্পনাকে স্বাগতও জানিয়েছেন। আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, তার এই সফরের সময় ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে তেহরানের সাথে শক্তিধর দেশগুলোর যে চুক্তি হয়েছে তারও কড়া সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

শুধু তাই নয়, ওয়াশিংটন তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের কাছে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রও বিক্রি করছে।

বিবিসির জনাথন মার্কাস লিখছেন, তবে সহানুভূতি জানানো আর বাস্তবিক কৌশল সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। ইসরায়েল এবং সৌদি আরব দুটো দেশই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন ঠিকই কিন্তু দুটো দেশের সরকারই ভালো করে জানে যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি তাদের কাছ থেকে সরে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারে তার দেশকে আরো সক্রিয় হতে হবে।

একই সাথে এটাও স্পষ্ট মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষীয়মাণ মার্কিন নীতি ও রাশিয়ার ফিরে আসার সাথে নতুন করে সামঞ্জস্য তৈরিতে কাজ করছে সৌদি আরব ও ইরান- এই দুটো দেশই।

ইসরায়েলি ভীতি

এখানে আরো কিছু মৌলিক বিষয়ও কাজ করছে। যুবরাজ মোহাম্মদ একদিকে যেমন ইরানি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তেমনি অন্যদিকে তিনি তার দেশকে আরো আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়েও নতুন এক কৌশল গ্রহণ করেছেন।

শেষের উদ্যোগটি এসেছে ‘আরব বসন্ত’ এবং ‘ইসলামপন্থী সহিংসতার’ হুমকির কারণে।

যুবরাজ মোহাম্মদ মনে করেন, ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্যে মধ্যপ্রাচ্যে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। আর সেই পরিবর্তনের সূচনা ঘটাতে হবে নিজের ঘরেই। তিনি মনে করছেন, ইরানকে মোকাবেলা করার মতো সৌদি আরবের সংস্কারও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

বিবিসির সংবাদদাতা জনাথন মার্কাস আরো লিখেছেন, সৌদি আরবের বহু মানুষের সাথে তার ব্যক্তিগত আলোচনায় মনে হয়েছে, যুবরাজ মোহাম্মদের এই সক্রিয় হয়ে উঠার একটা ঝুঁকিও আছে, ইসরায়েলও সেরকম মনে করে।

সিরিয়ার যুদ্ধের ভয়াবহতা তারা একটু দূর থেকে দেখেছে। কোনো কোনো ইসরায়েলি মনে করে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার যেন স্বাভাবিক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

ইসরায়েল সিরিয়াকে দেখে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতে বিষয়ে একটি ‘ল্যাবরেটরি’ বা পরীক্ষাগার হিসেবে। আর একারণে তারা যুবরাজ মোহাম্মদ যা কিছু করার চেষ্টা করছেন সেটাকে তারা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের এই মিত্রতা কতো দূর পর্যন্ত যেতে পারে? এটাও নির্ভর করছে বহু কিছুর উপর। সৌদি আরবে সংস্কারের যেসব উদ্যোগ যুবরাজ নিয়েছেন সেগুলো কি সফল হবে? তিনি কি মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের প্রভাব বলয় আরো বাড়াতে পারবেন?

এই দুটো দেশের সম্পর্ককে যদি আরো উজ্জ্বল করতে হয় তাহলে তাকে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে তাদেরকে কিছু অগ্রগতি ঘটাতে হবে। সৌদি আরব বহু দিন ধরেই বলে আসছে, রাষ্ট্র হিসেবে সৌদি আরবকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে ইসরায়েলকে কিছু একটা করতে হবে।

সেখানে অর্থপূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠার আগে, যেখানে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা, সেরকম কিছু না হলে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্ক একটা ছায়ার নিচেই থেকে যাবে।

267 ভিউ

Posted ২:৫৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com