কক্সবাংলা ডটকম :: অননুমোদিত সৌদি আরব সফর করায় লিওনেল মেসিকে দুই সপ্তাহের জন্য নিষিদ্ধ করে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম লা’কিপ গত সপ্তাহে জানায়, বর্তমান চুক্তির দুই বছর শেষে তৃতীয় মৌসুমে মেসিকে রাখার অপশনটা কাজে লাগাতে আগ্রহী নয় পিএসজি।
কিন্তু সমর্থকদের জন্য এ খারাপ খবরকে এক হল্কায় উড়িয়ে দেয়ার মতো বিরাট সুখবর নিয়ে হাজির মেসি। গুঞ্জন উঠেছে, পিএসজি ছেড়ে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালে যোগ দিতে চলেছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
বর্তমান সৌদি লিগ চ্যাম্পিয়ন ক্লাবটি মেসিকে বছরে ৪০ কোটি ডলারের (প্রায় ৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা!) ভুবন কাঁপানো প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
আর্জেন্টাইন ফুটবলারের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, আগামী মাসে ৩৬ বছরে পা দিতে চলা মেসি আল হিলালের প্রস্তাব পেয়েছেন এবং এ মুহূর্তে পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নবায়নের কথা ভাবছেন না।
চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি পরবর্তী ক্লাব কিংবা নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘মেসির চুক্তিটা পাকা। পরের মৌসুমে তিনি সৌদি আরবে খেলবেন। চুক্তিটা অবিশ্বাস্য। এটা বিশাল চুক্তি। আমরা খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করছি।’
পিএসজির সঙ্গে মেসির বর্তমান চুক্তির মেয়াদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। এর পরই মেসি যেকোনো ক্লাবে নাম লেখাতে পারবেন। পিএসজির এক সূত্র এএফপিকে বলেছে, ‘ক্লাবটি যদি মেসির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে চাইত, তবে এটি আরো আগেই সেরে ফেলত।’
স্পেনের সংবাদমাধ্যম এল চিরিংগুইতা জানায়, আল হিলালের প্রস্তাব এরই মধ্যে গ্রহণ করেছেন মেসি। সেখানে এ-ও বলা হয়, মেসির সাবেক বার্সেলোনা সতীর্থ সের্জিও বুসকেটস ‘ফ্রি এজেন্ট’ হিসেবে আল হিলালে যোগ দেবেন। বার্সার সঙ্গে বর্তমান চুক্তিটা আলোচনা সাপেক্ষে শেষ করতে পারলেও জর্ডি আলবাও মেসির সঙ্গী হতে পারেন আল হিলালে। বুসকেটস ও আলবা দুজনই আকর্ষণীয় বেতন সেখানে পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাবেক ক্লাব বার্সেলোনা এবং ডেভিড বেকহ্যামের ক্লাব মায়ামি ইন্টারও সুযোগ পেলেই মেসিকে লুফে নিতে তৈরি। তারা নিজেদের আগ্রহের কথা এরই মধ্যে জানিয়েছে।
বর্তমানে সৌদি আরবের পর্যটন দূত হিসেবে চুক্তিবদ্ধ মেসি। গত বছর তিনি চুক্তি করেন। ২০২২ সালের মে মাসে সৌদি আরব সফরও করেন। এ ভূমিকায় কাজ করায় বছরে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার পান তিনি। সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে যেতে পিএসজির কাছে ছুটি চেয়েছিলেন। যদিও ছুটি মেলেনি। এর পরও মেসি ক্লাবকে অবহিত না করে পরিবার নিয়ে সৌদি আরব যান। সেখানে থেকেই তিনি নিষিদ্ধ হওয়ার খবর পান।
গত জানুয়ারিতেও তিনি সৌদি আরব সফর করেছিলেন। তখন সৌদি আরব লিগ স্টারসের মুখোমুখি হয়েছিল মেসির ক্লাব পিএসজি। ওই ম্যাচে তিনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদোর মুখোমুখি হয়েছিলেন।
সৌদি আরবের ক্লাবে নাম লেখালে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদোর সঙ্গে আবারো ডুয়েল হবে মেসির। রোনালদো বর্তমানে খেলেন সৌদি ক্লাব আল নাসরে। ক্লাবটি তাকে বছরে ২০ কোটি ডলার (প্রায় ২ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা!) দিচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। ফোর্বসের জরিপে রোনালদোই সর্বশেষ ১২ মাসে সর্বোচ্চ আয়কারী অ্যাথলিট হয়েছেন।
আল হিলাল এশিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে সফল ক্লাব, যারা ৬৫টি অফিশিয়াল শিরোপা জিতেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ক্লাবটি ১৮ বারের সৌদি লিগ চ্যাম্পিয়ন। যদিও আগের মতো সেই শৌর্য আর তাদের নেই। এখন সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী ও বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মেসিকে দলভুক্ত করে তারা হারানো গৌরব ফেরাতে মরিয়া।
বর্তমানে লিগ টেবিলে চতুর্থ স্থানে রয়েছে আল হিলাল। তারা দ্বিতীয় স্থানধারী আল নাসরের চেয়ে ৭ পয়েন্টে ও লিগ লিডার আল-ইত্তিহাদের চেয়ে ১০ পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছে।
সম্প্রতি ফরাসি সংবাদমাধ্যম বোমা ফাটায় এ বলে—মেসির সৌদি আরব যাওয়া নিয়ে ‘চুক্তি সম্পন্ন’! এরপর সেই খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। খবরে বলা হয়, চুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সই করার আগে ব্যক্তিগত শর্তাবলি ও খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করছেন ৩৫ বছর বয়সী ফুটবল সুপারস্টার।
ধারাবাহিক গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে মেসির বাবা হোর্হে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তার ছেলে সৌদি আরবের ক্লাবে পরের মৌসুম খেলতে চুক্তিপত্র কিংবা সমঝোতাপত্রে সই করেননি। এক ইনস্টাগ্রাম বার্তায় তিনি বলেন, ‘পরের মৌসুম নিয়ে কোনো ক্লাবের সঙ্গেই কিছু হয়নি। পিএসজির সঙ্গে লিওনেলের মৌসুম শেষ হওয়ার আগে এ ব্যাপারে কখনই কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। মৌসুম শেষ হলে তখন ভবিষ্যৎ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে চিন্তা করার সময় আসবে। আমরা নিশ্চিত করছি, এ মুহূর্তে কারো সঙ্গে কিছু হয়নি। মৌখিক, চুক্তি কিংবা সমঝোতা…কিছুই হয়নি এবং মৌসুম শেষ হওয়ার আগে হবেও না।’
এদিকে, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি বলেছেন, মেসি সুখী স্বস্তিদায়ক পরিবেশে কোথায় খেলবে সেটি তার কাছে মোটেও সমস্যার নয়। আল-কাস চ্যানেলকে স্ক্যালোনি বলেন, ‘ক্লাব সতীর্থ কিংবা সমর্থক বলেন, যেখানে সে স্বস্তি ও শান্তি খুঁজে পায় সেখানেই তাকে যেতে দিন না। জাতীয় দল হিসেবে এতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। সে সুখী থাকলেই আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে এবং তাকে সুখী রাখাও আমাদের দায়িত্ব।’
গত জানুয়ারিতে কোনো ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিহীন থাকা অবস্থায় সৌদি ক্লাব আল নাসরে নাম লেখান পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী রোনালদো। এবার সৌদিতে তার সঙ্গী হতে পারেন মেসি। যদিও তাকে প্রস্তাব করা অর্থের অংকটা চোখ ধাঁধানোই। বছরে ৪০ কোটি ডলার! এ দুটি চুক্তিতেই অবশ্য অর্থের সংস্থান করছে সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ সার্বভৌম সম্পদ তহবিল, যাদের মোট সম্পদ ৬২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
এক সূত্র খালিজ টাইমসকে বলেন, ‘রোনালদোর চুক্তির সময় দরকষাকষিতে খুব বেশি সময় লাগেনি। এখানে উদ্দেশ্যই বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের চুক্তিবদ্ধ করা। তাদের আনছে কিন্তু সৌদি আরব, কোনো নির্দিষ্ট ক্লাব নয়। অর্থও আসছে একটি জায়গা থেকে—পিআইএফ।’ রয়টার্স ও খালিজ টাইমস।
