কক্সবাংলা ডটকম(১১ ডিসেম্বর) ::“যদি তোমায় আমি চাঁদ বলি
ভুল হবে আমার তুমি চাঁদের চেয়েও সুন্দর…”
যুগ যুগ ধরে এমন অসংখ্য উপমায় মানুষ মানুষের সৌন্দর্যকে প্রকাশ করেছে। বলা হয়ে থাকে, সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ সুন্দরের পূজারী। এ জন্য তার নানা আয়োজন সেই আদিম যুগ থেকেই। এরপর যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে মানুষের সৌন্দর্যবোধ। সুন্দর হতে আর সেই সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে মানুষ কত কিছুই না করেছে, করছে।
কারো হয়তো নাকটা একটু অন্যরকম। সেই নাক নিয়ে নানা কথা বলছে অনেকেই। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তার নাকটাকে আরেকটু উঁচু করতে হবে।
আবার কারো মনেহলো বয়সের কারণে চেহারায় বলিরেখা পড়েছে। চামড়ায় পড়েছে ভাঁজ। কিংবা মুখটা একটু ঝুলে গেছে, সেটাকে একটু আঁটসাঁট করতে হবে। কেউ আবার ভাবছেন চেহায়য় একটু তারুণ্য আনতে। এর সবই এখন সম্ভব। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্য মানুষের এসব ইচ্ছাকে বাস্তবরূপ দিয়েছে।
আর্থিক সামর্থ্য থাকলে আজকাল অনেকেই নিজেকে তার চাওয়া অনুযায়ী সুন্দর করতে কসমেটিক সার্জারির জন্য শল্যবিদের ছুড়ি-কাঁচির নিচে সঁপে দিচ্ছেন। তাতে কেউ হয়তো নিজের পরিবর্তিত চেহারা নিয়ে সন্তুষ্ট হচ্ছেন কেউ বা নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে হয়ে যাচ্ছেন আরও অসুন্দর।
সম্প্রতি ইরানের ১৯ বছল বয়সী এক নারী প্রিয় অভিনেত্রী হলিউডের অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মত স্বপ্নের সুন্দরী হতে কয়েক মাসের মধ্যেই নিজেকে অন্তত ৫০ বার ডাক্তারের ছুড়ি কাঁচির নিচে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। তাতে অবশ্য তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বরং নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে নিজেকে বিদঘুটে করার জন্য খবর হয়েছেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের।
এতো আধুনিক সময়ের কথা। সেই প্রায় ৭ হাজার বছর আগে প্রাচীন মিসরে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন গ্রামবাসী চোখের পাতায় রং ব্যবহার করতো। বলা হয়ে থাকে, সেই থেকেই সৌন্দর্যবর্ধনকারী সার্জারি বা
কসমেটিক সার্জারির উৎপত্তি। বর্তমানে এ ধরনের সার্জারিকে এসথেটিক সার্জারিও বলা হয়ে থাকে।
শল্যবিদরা জানান, শরীরের বিভিন্ন স্থানের ওপর ভিত্তি করে প্রচলিত কসমেটিক সার্জারিগুলোকে মোটামুটিভাবে চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
১. মুখমণ্ডলের কসমেটিক সার্জারি:
নাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রয়েছে রাইনেপ্লাস্টি। কুঁচকে যাওয়া ত্বকের জন্য ফেসলিফট। বিনা অপারেশনে কুঁচকে যাওয়া ত্বকের জন্য সর্বাধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে ফেসলিফট। এছাড়া রয়েছে, চোখের পাতার জন্য (ব্যাগি আইস) ব্লিফারোপ্লাস্টিক, ব্রন, মুখের দাগ ও সূক্ষ্ম বলিরেখা দুর করা, চোয়াল ও চিবুক ঠিক করা এবং অবাঞ্ছিত তিল অপসারণের জন্য রয়েছে ডার্মাব্রেশন ও মাইক্রোডার্মা ব্রেশন। এছাড়া কেবল মুখের ব্রন চিকিৎসার জন্য রয়েছে ফটোথেরাপি।
২. স্তনের কসমেটিক সার্জারি:
ছোট স্তনকে সিলিকন ব্রেস্ট ইমপ্লান্টের মাধ্যমে বড় করার জন্য রয়েছে অগমেন্টেশন ম্যামোপ্লাস্টি; অস্বাভাবিক বড় স্তনকে ছোট করে দেহের সাথে মানানসই আকার দেয়ার জন্য রিডাকশন ম্যামোপ্লাস্টি এবং ঝুলে যাওয়া স্তনকে সঠিক স্থানে ‘আপলিফট’ করার জন্য ম্যাস্টোপেক্সি।
৩. পেটের জন্য:
পেটের জন্য যে সব কসমেটিক সার্জারি রয়েছে সেগুলো হচ্ছে, ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে পেটের বাড়তি মেদ বের করে ফিগার সুন্দর করার জন্য লাইপোসাকশন। এই পদ্ধতিতে ঊরু, নিতম্ব, হাত, গলা ও পুরুষ স্তনের আকৃতিও ঠিক করে নেয়া যায়। এছাড়া অ্যাবডোমিনোপ্লাস্টির মাধ্যমে ঝুলে পড়া পেটের ত্বক ও বাড়তি মেদ কেটে ফেলে পুনর্গঠনের মাধ্যমে পেটের আকার সুন্দর করে দেয়া হয়।
অন্যান্য:
অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে মোটা ও ঝুলে যাওয়া হাতের পুনর্গঠনের সার্জারির জন্য ব্রাকিওপ্লাস্টি এবং ঊরুর প্লাস্টিক সার্জারির জন্য রয়েছে থাইলিফট।
বাংলাদেশে এ ধরনের সার্জারির প্রবণতা কেমন? সুযোগই বা কতটা? এসব বিষয়ে জানতে চ্যানেল আই অনলাইন কথা বলেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে।
আলোচিত এ ডাক্তার বলেন: এটা তো জরুরি সার্জারি নয়, তাই এখানে সেভাবে এখনও শুরু হয়নি। আমাদের এখানে মূলত পুড়ে যাওয়া রোগী বা দুর্ঘটনায় যাদের অঙ্গহানি ঘটে সে ধরনের রোগীর সংখ্যাই বেশি।তাদের নিয়েই আমাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। কসমেটিক সার্জারির ব্যবস্থা থাকলেও ওইভাবে আলাদা ইউনিট এখনও গড়ে ওঠেনি।
তবে খুব দ্রুতই আলাদাভাবে কসমেটিক সার্জারি বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন ডা. সামন্ত লাল সেন।
একজন আবাসিক চিকিৎসক অবশ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেলেও কসমেটিক সার্জারি হচ্ছে। অনেকেই নিজের চেহারার পরিবর্তন আনতে কসমেটিক সার্জারি করাচ্ছেন। তবে সাধারণ চিকিৎসার তুলনায় কসমেটিক বা এসথেটিক সার্জারির খরচ অনেক বেশি হওয়ায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে করাতে পারছেন না।
নির্দিষ্ট সংখ্যা না বলতে পারলেও এসথেটিক সার্জারির হার দিন দিন বাড়ছে বলে জানান বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ওই ডাক্তার।
Posted ১:১৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta