কক্সবাংলা ডটকম(১৫ মার্চ) :: বিশ্বজুড়ে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সবচেয়ে মিল পাওয়া যায় হলিউড সিনেমা কন্ট্যাজিয়নের। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ চলচ্চিত্রের গল্পকে ২০২০ সালের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির প্রায় নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী বলছেন অনেকে। ফলে আইটিউনস রেন্টাল চার্টে লাফিয়ে লাফিয়ে র্যাংকিং বাড়ছে এ ছবির। মানুষ অদূরভবিষ্যৎ ও সমসাময়িক বাস্তবতাকে বুঝতে কীভাবে ফিকশনকে ব্যবহার করে, তার এক উদাহরণ হতে পারে কন্ট্যাজিয়ন।
মহামারী নিয়ে চলচ্চিত্র অবশ্য কম হয়নি। বিজ্ঞান ও কল্পনার মিশেলে নির্মাণ করা হয়েছে ভীতিজাগানো বহু ফিকশন। হলিউডের একটি জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ঘরানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। বিজ্ঞানের উন্নতিই মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে—এমন ডিস্টোপিয়ান জগতের চিত্র উঠে এসেছে এসব চলচ্চিত্রে। সাধারণ থেকে অসাধারণ—সব ধরনের নির্মাতার হাতেই তৈরি হয়েছে মহামারীর ছবি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি দি ওমেগা ম্যান, ওয়ার্ল্ড ওয়ার জেড ও প্যান্ডেমিক।
১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে নির্মিত ডিস্টোপিয়ান ছবির সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয় ছিল পরমাণু অস্ত্রের ধ্বংসলীলা। এ পর্বের সমাপ্তি ঘটে একসময়, পরমাণু অস্ত্রের জায়গা নেয় জীবাণু অস্ত্র। জীবাণু ঘাতক মানবজাতির অস্তিত্বকে নিশ্চিহ্ন করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে—এমন গল্পই বারবার উঠে এসেছে একালের ডিস্টোপিয়ান চলচ্চিত্রে ।
এ ধারার শুরুর দিকের ছবি দি অ্যান্ড্রোমিডা স্ট্রেইন। ১৯৭১ সালে এটি মুক্তি পায়। মাইকেল ক্রাইটনের একটি উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি নির্মিত। বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতি মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি তৈরি করছে—এমন ধারণা বারবার ক্রাইটনের লেখায় উঠে এসেছে। টিভি সিরিজ ওয়েস্টওয়ার্ল্ড ও জুরাসিক পার্কে ধারণাটি সরাসরিই উপস্থাপন করা হয়েছে। দি অ্যান্ড্রোমিডা স্ট্রেইনও তার ব্যতিক্রম নয়।
একই ভাবধারার গল্প দেখা যায় ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী টুয়েলভ মাংকি ছবিতে। সম্ভাব্য ভয়াবহ প্লেগ মহামারীকে আগেই ঠেকিয়ে দিতে কাল ভ্রমণ হলো এ ছবির গল্প। এরপর ধরা যাক আউটব্রেকের কথা। বর্তমান সময়ের জন্য একটি মোক্ষম দৃষ্টান্ত হতে পারে। আফ্রিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হয়ে আসা একটি বানর থেকে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক এক ভাইরাস। একদল বিজ্ঞানী এ সংক্রমণ ঠেকাতে প্রাণান্ত চেষ্টা শুরু করেন।
এসব চলচ্চিত্রের গল্প কিন্তু সবসময় শুধু কল্পকাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, কখনো কখনো তা বাস্তব ঘটনার সঙ্গে কল্পনার মিশেলে দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছে। এই তো গত বছর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল দ্য হট জোন নামে একটি বাস্তব ঘটনানির্ভর সিরিজ সম্প্রচার করে। ১৯৮৯ সালে আফ্রিকা থেকে আনা শিম্পাঞ্জির মাধ্যমে ওয়াশিংটন ডিসির এক শহরতলিতে স্থাপিত গবেষণাগারে ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এক বিজ্ঞানী প্রাণ বাজি রেখে এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকিয়ে দেন—এটিই এ ছবির গল্প।
তবে নতুন করোনাভাইরাসের সঙ্গে আক্ষরিক অর্থে মিল পাওয়া যাচ্ছে কন্ট্যাজিয়নের। ছবিতে এক মার্কিন নারী এমইভি-১ নামের ভাইরাসে আক্রান্ত হন হংকংয়ের এক বাবুর্চির সঙ্গে করমর্দনের মাধ্যমে। বাবুর্চি শূকরের মাংস কাটতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। শূকরটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল বাদুড়ের মাধ্যমে। হংকং থেকে মিনেসোটা ফিরে ওই নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি মারা যান। তার স্বামী আক্রান্ত না হলেও ভয়ানক মানসিক আঘাত পান। দ্রুতই অন্যরা আক্রান্ত হতে শুরু করে, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী।
স্টিভেন সোডারবার্গ পরিচালিত ও স্কট জি বার্নসের লেখা চিত্রনাট্য এ ছবিকে ভাইরাস মহামারীর বাস্তব দৃশ্যের ভবিষ্যদ্বক্তায় পরিণত করেছে বলা যেতে পারে। এ ছবিতেও দেখানো হয় গুজব ও ভীতি কত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার মানুষকে কোয়ারান্টাইনে নেয়া হয়। সন্ত্রস্ত ও হতাশাগ্রস্ত মানুষ, চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা, জাল প্রতিষেধকের প্রচার, ভুতুড়ে বিমানবন্দর যেন আজকের কথাই বলে।
কন্ট্যাজিয়নের এ বাস্তব হয়ে ফিরে আসা অবাক করেছে চিত্রনাট্যকার স্কট বার্নসকে। ফরচুন ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, কন্ট্যাজিয়ন চলচ্চিত্রের মূল ধারণাটি ছিল এটা তুলে ধরা যে মহামারীর প্রাদুর্ভাবের জন্য আধুনিক সমাজ কতটা নাজুক।
কেট উইন্সলেট, জুড ল, লরেন্স ফিশবার্ন, মারিয়ন কটিলার্ড ও ব্রায়ান ক্র্যাস্টনের মতো অভিনেতারা রয়েছেন এ ছবিতে। কন্ট্যাজিওনের কাহিনী অনেক চরিত্রের গল্পের সমষ্টি। ভুক্তভোগী ও ভ্যাকসিন তৈরি করতে মরিয়া বিজ্ঞানীদের গল্প আছে এতে। গল্পের যে অংশটি আজকের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য সেটি হলো, কীভাবে একটি ভুল সিদ্ধান্ত অথবা হঠকারী পদক্ষেপ ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। বিশেষ করে আধুনিককালে পরস্পর সংযুক্ত বিশ্বে একটি ভুল সিদ্ধান্তের মধ্যে থাকতে পারে ধ্বংসের বীজ—এ চরম সত্যটি কন্ট্যাজিয়নে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে।
‘দ্য কামিং প্লেগ’ বইয়ের লেখক লরি গেরেট ছিলেন কন্ট্যাজিয়ন ছবির নির্মাণকালের পরামর্শক। সিনেমাটি মুক্তির সময় তিনি বলেছিলেন, এ ছবির গল্প কিছুটা কাল্পনিক, কিছুটা বাস্তব আর সামগ্রিকভাবে সম্ভাব্য।
সিএনএন অবলম্বনে
Posted ১১:৫৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৫ মার্চ ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta