মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

হুমায়ূন আহমেদ’র লেখনীর রহস্য

বৃহস্পতিবার, ০৩ জানুয়ারি ২০১৯
314 ভিউ
হুমায়ূন আহমেদ’র লেখনীর রহস্য

কক্সবাংলা ডটকম(৩ জানুয়ারি) :: রহস্যময় জগত নিয়ে নন্দিত কথাসাত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বরাবরই ভীষণ রকমের আগ্রহী ছিলেন। নিজের লেখনীর ছোঁয়ায় সেই রহস্যকে আরো ঘনীভূত করতেন তিনি। বিশেষ করে প্যারালাল জগতের রহস্য নিয়ে লেখকের আগ্রহ ছিল সীমাহীন। এই প্যারালাল জগত নিয়েই ১৯৮৯ সালে ‘নিষাদ’ নামক একটা উপন্যাস রচনা করেন হুমায়ূন আহমেদ। এই উপন্যাস সেই সময়ে ভীষণ সাড়া ফেলে দিয়েছিলো, নিষাদে বর্ণিত প্যারালাল জগতের ধাঁধায় বিভ্রান্ত হয়ে সাময়িকভাবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে– এমন রোগীর খবরও তখন পাওয়া গিয়েছিলো!

নিষাদ উপন্যাসের বিষয়বস্তু সত্যি মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতোই ছিল; Image Source: mediafire.com

২২ বছর পর আবারো সেই প্যারালাল জগত নিয়ে উপন্যাস রচনা করেন হুমায়ূন আহমেদ। তবে আগের উপন্যাসের তুলনায় একদম ভিন্ন মোড়কে সাজান এবারের উপন্যাসকে, নাম দেন ‘পুফি’। নিষাদ আর পুফির সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে দুটি উপন্যাসই মিসির আলি সিরিজের। যদিও প্রথমটির একদম কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন মিসির আলি, তার সংলাপও অনেক বেশি ছিল। কিন্তু পুফিতে মিসির আলি চরিত্রটির স্থায়িত্ব তুলনামূলকাভবে কম।

গল্পের শুরু হয় আবুল কাশেম জোয়ার্দার নামক মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোককে নিয়ে, নির্ভেজাল এই মানুষটি এজি অফিসের একজন অফিসার। স্ত্রী সুলতানা ও মেয়ে অনিকাকে নিয়ে সুখের সংসার তার। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিলো, তবে সমস্যার শুরুটা হয় তার মেয়ে অনিকার ছ’নম্বর জন্মদিনে!

সেই জন্মদিনে অনিকাকে তার ছোট মামা রঞ্জু একটি বিড়াল উপহার দেন। পুফি নামক বিড়ালটির পুরো শরীর কুচকুচে কালো, শুধু লেজটা সাদা। শৈশবের একটা দুর্ঘটনার কারণে জোয়ার্দার সাহেব পশু-পাখি একদমই পছন্দ করতেন না। তাই পুফির আগমনটাও তার মনে অস্বস্তির জন্ম দেয়। তবে পুফিকে নিয়ে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা শৈশবের সেই অস্বস্তিকেও ছাড়িয়ে যায়।

উপন্যাসে বর্ণিত পুফির সাথে এই ছবিটির বেশ সাদৃশ্য পাওয়া যায়; Image Source: Chicken Smoothie

পুফি নামক বিড়ালটি একই সময়ে দুই ভিন্ন স্থানে উপস্থিত হতে শুরু করে! অনিকা তার পোষা বিড়াল পুফিকে নিয়ে মামার বাড়িতে বেড়াতে যায়, অথচ অনিকা যাওয়ার পরপরই সেই পুফিকে জোয়ার্দার সাহেব তার নিজের বাড়িতে দেখতে পান! দুটি বিড়ালের মাঝে পার্থক্য একটিই, অনিকার বিড়ালের ডান চোখের ওপর সাদা দাগ আর জোয়ার্দারের কাছে আসা বিড়ালের সাদা দাগ বাঁ চোখের ওপরে। এই বিড়ালের আগমনের সাথে কিছু মৃত মানুষও জোয়ার্দার সাহেবের কাছে আসা শুরু করে। শেষপর্যন্ত সমস্যা সমাধানে জোয়ার্দার শায়লা নামক এক সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হন।

এদিকে শায়লাকে নিয়েও জোয়ার্দার সাহেবের একটি পুরনো গল্প আছে। এই মেয়ের সাথে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু একটি মিথ্যা গুজবের ফলে সেই বিয়ে ভেঙে যায়। জোয়ার্দার সাহেবের এই প্রাক্তন বাগদত্তা শায়লা তার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে থাকে। সে জোয়ার্দারকে একটা ডিজিটাল ক্যামেরা দেয়, যাতে জোয়ার্দার মৃত মানুষ কিংবা ঐ বিড়ালের ছবি তুলতে পারে। জোয়ার্দার সত্যিই মৃত মানুষ এবং ঐ বিড়ালের ছবি তুলে নিয়ে আসে, রহস্য আরো ঘনীভূত হয়।

রহস্য উদঘাটনের জন্য শায়লা জোয়ার্দারের অফিস থেকে ঠিকানা নিয়ে তার বাসায় যায়। সেখানে অপেক্ষা করছিলো আরো বড় চমক। বাসায় গিয়ে যে জোয়ার্দারের সাথে তার কথা হয়, সে সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন মানুষ। সেই জোয়ার্দার একজন চিরকুমার মানুষ, তার বাসায় আর কেউ থাকে না। থাকার মতো ছিল শুধু একটি বিড়াল আর সেটার নামও পুফি!

ব্যাখ্যাতীত জগত নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের আগ্রহ সবসময়ই বেশি ছিল; Image Source: Bangla Tribune

জোয়ার্দারের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে শায়লা নিজে আরো বড় রহস্যের জালে আটকা পড়ে যায়। একবার সে বিবাহিত জোয়ার্দারের দেখা পায়, তো অন্যবার দেখা পায় চিরকুমার জোয়ার্দারের! শেষপর্যন্ত রহস্য উদঘাটনের জন্য শায়লা তার শিক্ষক মিসির আলির শরণাপন্ন হন। প্রথমে পুরো ব্যাপারটি উড়িয়ে দিলেও পরে সবকিছু জানতে পেরে মিসির আলি নিজেও চিন্তিত হয়ে পড়েন।

জোয়ার্দার কি সব সত্যি কথা বলছেন, নাকি নিজের প্রাক্তন বাগদত্তা শায়লার সাথে দেখা করার জন্য এই কাহিনী সাজিয়েছেন? আর জোয়ার্দার সত্যি কথা বললে এরকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটার কারণ কী? পুফি বিড়ালের রহস্যটাই বা কী? কেন তাকে দুটি ভিন্ন জগতেই দেখা যাচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে উপন্যাসটি পড়তে হবে।

মাঝারি আকারের এই উপন্যাসে গল্পের প্রয়োজন অনুযায়ী বেশ কিছু চরিত্রের আবির্ভাব হয়েছে, প্রতিটি চরিত্রই গল্পকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছে।

জোয়ার্দার

উপন্যাসে জোয়ার্দারের দুটি সত্তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে; এক জগতে জোয়ার্দার বিবাহিত, অন্য জগতে অবিবাহিত। দুটি জগতের জোয়ার্দারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন। বিবাহিত জোয়ার্দার নির্ভেজাল একজন মানুষ, কিন্তু নির্ভেজাল জীবন কাটাতে গিয়ে তিনি অনেকটা আত্মবিশ্বাসহীন একজন মানুষ হয়ে গেছেন। চরিত্রে দৃঢ়চেতা মনোভাবেরও অভাব রয়েছে। এ কারণেই শায়লার সাথে একটা তুচ্ছ কারণে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কিছুদিন পরেই অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে সুখের সংসার শুরু করেছিলেন।

অন্যদিকে চিরকুমার জোয়ার্দারের প্রতিটি সংলাপেই আত্মবিশ্বাসের পরিচয় পাওয়া যায়। শায়লার সাথে প্রতিটি কথোপকথনেই তিনি বেশ স্বতঃস্ফুর্ত ছিলেন। শায়লার সাথে বিয়ে ভাঙার পর তিনি নিজেও আর বিয়ে করেননি, একাকী জীবন পার করেছেন। জীবন সংসারের সমস্ত চাপ উপেক্ষা করে পুরনো বাগদত্তার সাথে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের জন্য চিরকুমার জীবন বেছে নেওয়াটা এই চরিত্রটিকে মজবুত করেছে।

শায়লা

পেশায় সাইকিয়াট্রিস্ট শায়লা চিরকুমারী এক নারী, মিথ্যা অপবাদে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর জেদ নিয়ে লেখাপড়া করে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে জোয়ার্দারের কথা ভুলতে পারেনি বলে আর বিয়েও করেননি। যদিও জোয়ার্দারের প্রতি এই ভালোবাসার কথা তিনি তাকে জানাতে চান না। জোয়ার্দারের সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে শায়লা নিজেই সেই সমস্যার জালে বন্দী হয়ে গিয়েছিলেন। বিবাহিত জোয়ার্দার নাকি চিরকুমার জোয়ার্দার– কোন জোয়ার্দারের জগত আসল এই একটি প্রশ্ন তার পুরো জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছিলো।

সুলতানা

বিবাহিত জোয়ার্দারের স্ত্রী, ভীষণ সন্দেহবাতিক মহিলা। এ কারণেই শায়লার সাথে স্বামীর যোগাযোগ নিয়ে হুলস্থূল কাণ্ড বাঁধিয়ে বসেন। উপন্যাসজুড়ে ছোটোখাট ব্যাপারে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া চালিয়ে গেছেন। তবে যেভাবে কৌশল করে নিজের ছোট ভাই রঞ্জুর কুকীর্তির ব্যাপারে জেনেছেন তাতে তার বুদ্ধির পরিচয়টাও পাওয়া যায়।

মিসির আলি

মিসির আলি সিরিজের যত বই আছে সেগুলোর মধ্যে এই বইটিতেই মিসির আলির স্থায়িত্বকাল সবচেয়ে কম। উপন্যাসের শেষদিকে তার আবির্ভাব হয়, তবে আগমনের সাথে সাথে নিজের প্রখর পর্যবেক্ষণ শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। প্রথমদিকে শায়লার বর্ণিত রহস্যকে পাত্তা না দিলেও পরে সেই রহস্য সমাধানের চেষ্টা করেছেন। শেষপর্যন্ত এই বিশাল রহস্যের যোগসূত্র খুঁজে বের করতে সক্ষমও হয়েছেন। স্থায়িত্বকাল কম হলেও পুফি উপন্যাসে মিসির আলির প্রভাব ছিল অনেকখানি।

রঞ্জু

দুষ্টু ধনী লোকের আদর্শ উদাহরণ সুলতানার ছোট ভাই রঞ্জু। প্রথমে দুলাভাইকে শায়েস্তা করতে এলেও পরে নিজেই কাবু হয়ে যান। অলৌকিক ক্ষমতার কবলে পড়ে এই চরিত্রটিকে বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তবে তার একটি ঘৃণ্য কাজই পুফি উপন্যাসের সমস্ত রহস্যকে একটা নির্দিষ্ট সমাধানের দিকে এগিয়ে দেয়।

এছাড়াও সুলতানার দুই কাজের মেয়ে তুষার-তুহিন, জোয়ার্দারের কলিগ খালেক, বরকতউল্লাহর মতো আরো কিছু চরিত্র ছিল যারা মূলগল্পে তেমন কোনো বড় ভূমিকা রাখেনি।

যাদের ব্যাখ্যাতীত জগত নিয়ে আগ্রহ আছে, তারা অবশ্যই পুফি উপন্যাসটি পড়বেন। উপন্যাসজুড়ে লেখক খুব সুক্ষ্মভাবে এক অদ্ভুত জগত নিয়ে রহস্যের জাল বুনেছেন, তবে দক্ষতার সাথে সেই রহস্যের যৌক্তিক কারণও বের করে দিয়েছেন। প্যারালাল রিয়েলিটির ধাঁধায় মাথায় কিছুট জট লেগে যেতেও পারে, তবে মনোযোগ দিয়ে পুরো উপন্যাস পড়লে সেই জট খোলার উপায়টাও পেয়ে যাবেন। আর যারা ইতিমধ্যে উপন্যাসটি পড়েছেন কিংবা এই লেখাটি পড়ার পর উপন্যাসটি পড়বেন বলে ভাবছেন, তাদের জন্য নিচে একটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। যদি প্রশ্নটির উত্তর আপনি যুক্তিসহ দিতে পারেন, তাহলে পুফি উপন্যাসের রহস্যভেদের পুরো প্রক্রিয়া আপনি বুঝতে পেরেছেন সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।

বিবাহিত জোয়ার্দার আর চিরকুমার জোয়ার্দার এই দুজনের মধ্যে কে আসল জগতের মানুষ আর কে প্রতিবিম্ব জগতের মানুষ?

314 ভিউ

Posted ১২:১৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ জানুয়ারি ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com