কক্সবাংলা ডটকম(৮ সেপ্টেম্বর) :: ১০ লাখ রোহিঙ্গার সমাবেশ ঘটিয়ে বক্সবাজারকে ‘রোহিঙ্গা রাজ্য’ ঘোষণা করতে আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারেটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামিক ফ্রন্টের (আরিফ) নামের দুটো জঙ্গি সংগঠন বিদেশী অর্থ এবং অস্ত্রের মদতে পরিকল্পিতভাবে মিয়ানমারে প্রবেশ করে সাম্প্রদায়িক উশকানি দিয়ে, নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা চালিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে বাধ্য করছে।
এই দাবী জানায় ২০১২ সালে ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন আন্দোলন কমিটি’ নামের সংগঠনটি। ২০০৯ সাল থেকে এই সংগঠন বক্সবাজার এবং আশেপাশের এলাকায় রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে আন্দোলন করে আসছে।
২০১২ সালে প্রথম আলোর কাছে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের বক্সবাজার জেলা সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল বারী একইভাবে বক্সবাজারকে দখল করে ‘রোহিঙ্গা’ রাজ্য বানানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন। (সূত্র: প্রথম আলো, ২৩/০৬/২০১২)।
আর রোহিঙ্গা মদতে আন্তর্জাতিক এনজিও,পশ্চিমা দেশ সহ পাকিস্তান-সৌদি কানেকশন এখন পরিস্কার হচ্ছে। আরসা সৌদি অর্থায়নে চালিত একটি জঙ্গি সংগঠন। মিয়ানমারে পুলিশ চেকপোস্টে এবং সেনাবাহিনীর উপর কোন কারণ ছাড়াই আক্রমণের কারণেই বার্মিজ সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রাম নির্মূলে নামে। আরএসও, আরিফ, আরসা এটাই চেয়েছিলো।
রোহিঙ্গারা আক্রমণের শিকার হলেই বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। রোহিঙ্গারা সম্ভবত এখন কক্সবাজারের উখিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেছে। ১৯৯১ সালে উখিয়ায় কয়েকশ একর পাহাড় কেটে ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এরপর এই শিবিরের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে কয়েক হাজার একর সংরক্ষিত পাহাড় কেটে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। টেকনাফে ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে ২০১২ সালেই আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে,মিয়ানমারের আরাকান নয়, কক্সবাজারই হতে পারে কথিত ‘রোহিঙ্গা রাজ্য’। আর কক্সবাজার শহর এবং আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে বসতি স্থাপন করে এ পরিকল্পনায় আনা হয়েছে। এবারো যে ৪ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে তারা এখানেই ফের বনবিভাগের বন ও পাহাড় দখল করে বসতি স্থাপন করে নিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাই এই বিষয়ে মূল ভূমিকা রাখছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে,উপমহাদেশের পটভূমিতে পাকিস্তান আফগানিস্থানের মত আরেকটি ইসলামী ক্ষত তৈরির চেষ্টা ইসলামী আন্দোলনকারীদের বহুদিনের। উপমহাদেশের মুসলমানদের প্যান ইসলামী দর্শনে আত্মস্থ করার লক্ষ্যে কখনো কাশ্মির কখনো রোহিঙ্গা চুলকানি জারি রাখতে হঠাৎ হঠাৎ চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হয়।
হামলার পাল্টা জবাব দিতে যখন সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব আক্রোশ সাঁড়াশী অভিযানে প্রয়োগ করতে শুরু করে তখনই প্যান ইসলামিক চেতনা গোটা উপমহাদেশকে ধর্মীয় পরিচয়ে বিভক্ত করে ফেলে। এটাই দরকার ইসলামপন্থিদের।
তারা তাদের লক্ষে বার বারই সফল হয়ে যাচ্ছে। তুরস্কের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মেহমেত সিমসেক ভুয়া রোহিঙ্গা ছবি টুইট করে নিজেই পরে সেটা মুছে দেন। কি পরিমাণ রোহিঙ্গা নির্যাতনের ছবি বাংলাদেশে সয়লাব সেটা আমরা নিজেরাই জানি।আর সুচি সেটাই এখন বড় করে দেখাতে পারছে।
ইসলামপন্থিরা তাদের যে কোন প্রচারণায় মিথ্যার আশ্রয় নেয় ধর্ম সম্মতভাবেই। মতিঝিলে হাজার হাজার আলেমকে হত্যা করা হয়েছে- এরকম ডাঁহা মিথ্যা কথা হুজুর শ্রেণির লোকরা মসজিদে দাঁড়িয়ে বলেছে। ইসলামের মিথ্যা বলা অপরাধ। কিন্তু দ্বিনের স্বার্থে মিথ্যা বলা জায়েজ।
অপরদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানদের রাজনীতিটা আমাদের কাছে আগেই পরিস্কার ছিলো। তার স্ত্রীর রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশ সফর বড় ধরণের ইসলামী ধান্দা। বাংলাদেশ সরকার না পারছে মিয়ারমানের সঙ্গে রোহিঙ্গা ফয়সালা করতে, না পারছে এই ইস্যুতে ধান্দাবাজদের রুখতে।
অনেকেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে জঙ্গিবাদ কানেকশন, সন্ত্রাসবাদীদের মদদ ইত্যাদির কথা তুললেই ধরে বসেন আমরা বুঝি নিপীড়িত সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা আর আশ্রয়ের বিরোধী। এই লোকগুলো গর্দভ না ধান্দাবাজ বুঝা মুশকিল। সাধারণ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া আর এর পিছনে জঙ্গি রাজনীতির অনুসন্ধানকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক না।
ছোট ছোট বাচ্চাদের মৃত্যুমুখে আমরা ফেলতে পারি না। তাদের আশ্রয় দিতে হবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের জিহাদী সশস্ত্র আন্দোলন এই মুহূর্তে বার্মিজদের কাছে অখণ্ডতার জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ বলে মনে হচ্ছে। বার্মিজরা রোহিঙ্গাদের কোনভাবেই বিশ্বাস করছে না। এমনকি বক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদেরও একই ভয়।
এ কারণেই বার্মাতে অন্যান্য জাতির মুসলমানদের কোন সমস্যা না হলেও রোহিঙ্গারা অচ্ছুৎ হিসেবে বিবেচিত। এত কিছুর মধ্যেও রোহিঙ্গা সমস্যার একটা সমাধান পাওয়া গেছে। তাদের জিহাদী সংগঠন থেকে ফিরিয়ে আনা। আরসার মত সংগঠনকে নির্মূল করা। পাকিস্তান-সৌদি কানেকশনকে ভাল একটা জবাব দেয়া। কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব?
Posted ৯:৩০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta