কক্সবাংলা ডটকম(৩০ জুন) :: ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ফাইনাচল ম্যাচ প্রথম থেকেই পেণ্ডুলামের মতো দুলল।শেষ পর্যন্ত সাত রানে জিতে বিশ্বজয়ী হল ভারত।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে হারা ম্যাচ ৭ রানে জিতল বিশ্বসেরা ভারত।
ব্যাটিংয়ে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বিরাট, বোলিংয়ে সেই স্বপ্ন সার্থক করলেন বুমরা, হার্দিক, আরশদীপ।
ভারতের ১৭৬ রানের জবাবে খেলতে নেমে শুরুতেই হেন্ডরিকস এবং মার্করামকে আউট করে বড় ঝটকা দিয়েছিলেন আরশদীপ এবং বুমরা।
তবে ডি কক এবং স্টাবসের সৌজন্যে কিছুটা লড়াইয়ে ফেরে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩১ বলে ৩৯ করে আরশদীপের বলে আউট হন ডি কক, ২১ বলে ৩১ করেন স্টাবস।
তবে স্টাবসের উইকেট পড়ার পরে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ব্যাটে ঝড় তোলেন ক্লাসেন।
ক্লাসেন এবং মিলারের সৌজন্যে খড়কুটোর মতো উড়ে যান কুলদীপ এবং অক্ষর।
একটা সময় যখন ৪ ওভারে মাত্র ২৬ রান বাকি তখন ক্লাসেনকে সাজঘরে ফেরান হার্দিক।
বল করতে নেমে দলে কুলদীপ, জাডেজা এবং অক্ষরের মতো স্পিনাররা থাকলেও ফাইনালে কিছুই করতে পারেননি।
পিচ থেকেও খুব একটা সাহায্য পাননি ভারতীয় স্পিনাররা।
জোরে বোলার বলতে বুমরা, আরশদীপ এবং পান্ডিয়া সাধ্যমতো চেষ্টা করেন। ১৭ থেকে ১৯ ওভার পর্যন্ত লড়াই করে ভারত।
শেষ ৩ বলে বাকি ছিল ১১ রান, উইকেটে ছিলেন রাবাডা এবং মহারাজ। পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। বোলার হার্দিকের ফিনিশে ৭ রানে হার চোকার্সদের।
ফাইনাল ম্যাচে টার্নিং পয়েন্ট কোনগুলি?
৩৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর বিরাট কোহলি-অক্ষর প্যাটেলের ব্যাটে ভর করে দুর্দান্ত কামব্যাক করে ভারত। শুরুতে ৩ উইকেট হারানোর পর, পুরোনো কোহলিকে দেখা যায়। পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। চতুর্থ উইকেটে ৭২ রান যোগ করেন বিরাট এবং অক্ষর।
এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। অবশেষে ফাইনালে চেনা মেজাজেই পাওয়া গেল কিং কোহলিকে। ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেললেন। ছয়টি চার এবং দুটি ছক্কা মারলেন।
রোহিত, সূর্য এবং পন্থ পর পর আউট হয়ে যাওয়ায় আচমকাই চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। সেই সময় কোহলির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল বাঁহাতি অক্ষরকে। ডান বাম কম্বিনেশনে জমে গেল ভারতের ব্যাটিং।
কোহলির সঙ্গে জুটি বেধে দলকে নির্ভরযোগ্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া এবং ৪৭ রানের ইনিংসের তুলনা কোনও কিছুর সঙ্গেই সম্ভব নয়।
টুর্নামেন্টের শুরুতে তাঁর প্রথম একাদশে থাকা নিয়েই অনেকেই প্রশ্ন তুলে ছিলেন। ব্যাট-বল হাতে কার্যকরী ভূমিকা সেইভাবে নিতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপের শেষ লগ্নে নিজের কার্যকারিত প্রমাণ করলেন অক্ষর প্যাটেল।
একটা সময় জয়ের খুব কাছকাছিতে পৌঁছে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা। ২৪ বলে দরকার ছিল ২৬ রান। বিশেষ করে হেইনরিখ ক্লাসেনের ব্যাটে ভর করে।
প্রোটিয়া এই মিডল অর্ডার ব্যাটারকে ফিরিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরালেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। ২৭ বলে ৫২ রান পাণ্ডিয়ার বলে পন্থের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন। সেই সঙ্গে ম্যাচে ফিরল ভারতও।
কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে থাকা সূর্য সবাইকে চমকে দিয়ে ক্যাচটা তালুবন্দি করলেন। প্রথমে বল ধরে ব্যালেন্স রাখতে পারেননি বলে বলটি শূন্য ভাসিয়ে নিজে বাউন্ডারির বাইরে চলে যান। এরপর সেই ক্যাচ ফের ধরলেন। সেই ম্যাচে প্যাভিলিয়নে ফেরালেন কিলার মিলারকে।
২০তম ওভারের প্রথম বলে ডেভিড মিলারের যে ক্যাচটা সূর্যকুমার যাদব নিলেন, তা শুধু এই বিশ্বকাপ নয়, ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ক্যাচ হয়ে থাকল।
অবশ্যই বলতে হবে ভারতীয় পেসারদের দুরন্ত পারফরম্যান্স। বুমরাহ-অর্শদীপ-পাণ্ডিয়া এই তিন পেসারই জয়ের অন্যতম নায়ক। বিশেষ করে ১৮ এবং ১৯ নম্বর ওভারে যেভাবে বোলিং করলেন বুমরাহ এবং অর্শদীপ তাতেই ম্যাচের ভাগ্য বদলে গেল। আর শেষ ওভারে এসে বাকি কাজটা সমাপ্ত করলেন পাণ্ডিয়া।
হার্দিক পাণ্ডিয়া ৩ ওভারে ২০ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। অর্শদীপ সিং ৪ ওভারে ২০ ও জসপ্রীত বুমরাহ ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নিলেন ২টি করে উইকেট।
৭ বার ফেল! ৩২ বছর বাদে স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি পৌঁছেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা৷ কিন্তু তারা পারল না, পারল ভারত৷ পারলেন রোহিত শর্মা৷ তৃতীয় ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের বিরল আনন্দ পেয়ে গেলেন হিটম্যান৷
৭ মাস আগে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হেরেছিল ভারত৷ রোহিত-বিরাটরা দীর্ঘদিন ধরেই চাইছিলেন এই অধরা মাধুরীকে ছুঁয়ে ফেললেন৷ পারলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেই৷
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেই পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রথমবার টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি জিতেছিল ধোনির টিম ইন্ডিয়া৷
আর ২০২৪ সাল অনেকগুলি বছর, অনেক চেষ্টার পর এবার হল কিন্তু সেই দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে রইল এবারেও ভারতের সঙ্গে, কারণ এবার প্রতিপক্ষও ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা৷
একাধিক বিতর্ক, একাধিক প্রশ্ন দল নির্বাচন নিয়ে, কিন্তু সব কিছু বাদ দিয়ে ফের একবার ভারত দেখাল কেন তারা এক কেন তারা মেন ইন ব্লু৷
গোটা টুর্নামেন্টে ফ্লপ হলেও ফাইনালের মঞ্চে জ্বলে উঠলেন বিরাট কোহলি৷ তিনিই তাই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ৷ তাঁর আর রোহিতের সম্পর্ক নাকি ভাল নয়. কিন্তু এই ফ্রেম বলে দিল দলের জয়ের জন্য সব সেরাদেরই একে অপরকে দরকার আর তাই জার্সি সকলকেই এক করে দেয় বারবার৷
এবারের আইপিএল থেকে খুবই খারাপ সময় কাটিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া৷ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে তাঁর পারফরম্যান্স প্রাক্তন অধিনায়ক রোহিত শর্মা আর তিনি নাকি দুটি ক্যাম্প, কিন্তু কোথায় কি মেন ইন ব্লু -র জার্সি গায়ে পরতেই আবার একটাই মন্ত্র দেশের হয়ে সেরাটা দেওয়া৷
ভারতীয় ক্রিকেটে নাকি ১৮-২০ বছর বয়সে জার্সি গায়ে ঢুকে পড়তে না পারলে নাকি হয় না, কিন্তু সেই কথাও যে কথার কথা তা প্রমাণ করে দেন সূর্য কুমার যাদব৷ ব্যাট হাতে তো দায়িত্ব পালন করেছেনই পাশাপাশি এক অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরে একেবারে রূপকথাকে সত্যি করে দিয়েছেন৷
তিনি বোলার৷ কিন্তু দলের তাবড় ব্যাটসম্যানরা হঠাৎই ফাইনালে নড়ে গেলে তাঁকে উপরে তুলে আনা হলে সেই দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করেছেন অক্ষর প্যাটেল৷
যখনই বল হাতে তাঁর দিকে ভরসা করে এগিয়ে দিয়েছেন তখনই তিনি অধিনায়কের মর্যাদার দাম দিয়েছেন তিনি জসপ্রীত বুমরাহ৷
তাই এদিনের ফাইনালে এদিন সকলের জয়, সকলেই যার যার মতো করে গেমচেঞ্জার তাই টিম ইন্ডিয়া আজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন৷ না হয় ছোট ফর্ম্যাটে তাতেই বা কী বেশ কয়েকবার আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালেও উঠেও অধরা মাধুরী ছুঁয়ে ধরা হয়নি রোহিতের আজ তাই তিনি ও তাঁর দল দারুণ সুখী৷
আর দলের আরেক নায়ক কোচ রাহুল দ্রাবিড়৷ না তাঁরা ক্রিকেটার হিসেবে পারেননি৷ সেই স্বপ্ন এবার কোচ হিসেবে ছুঁয়ে ফেললেন ভারতীয় ক্রিকেটের দ্য ওয়াল৷ বিদায়ী কোচ হাতে তুলে নিলেন বিশ্বকাপ৷
Posted ২:২৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta