রবিবার ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

১৯৯৬ সালের শীর্ষ সেই ১৫ সেনা কর্মকর্তা এখন কে কোথায় ?

শনিবার, ২০ মে ২০১৭
1126 ভিউ
১৯৯৬ সালের শীর্ষ সেই ১৫ সেনা কর্মকর্তা এখন কে কোথায় ?

কক্সবাংলা ডটকম(২০ মে) :: ১৯৯৬ সালের ১৮-২১ মে সেনাবাহিনীর ভেতরে ও বাইরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস এবং সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিমের মধ্যে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কথিত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার অভিযোগে জেনারেল নাসিমসহ ৭ উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ওই মাসের ২৬ তারিখ তদন্ত আদালত গঠন করে ১৫ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়। মোট ১২ দিন চলা তদন্তের প্রতিবেদন ৮ জুন হস্তান্তর করা হয় পরিবর্তিত পরিস্থিতে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়া জেনারেল মাহবুবুর রহমানের কাছে।

তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাত জনকে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং অন্য আট জনকে দেওয়া হয় বাধ্যতামূলক অবসর।

চাকরিচ্যুত সাত কর্মকর্তা ছিলেন, লে. জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম বীর বিক্রম, মেজর জেনারেল আয়েনউদ্দিন বীর প্রতীক, মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু বক্‌র বীর প্রতীক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিল্লুর রহমান এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফি মাহমুদ।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস

বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয় মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিরন হামিদুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবিদুর রেজা খান, মেজর জেনারেল এজাজ আহমেদ চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজুল হক, লে. কর্নেল আনিসুল হক মৃধা, মেজর সৈয়দ মাহমুদ হাসান এবং মেজর জেনারেল গোলাম কাদেরকে।

ওই ১৫ সেনা কর্মকর্তার কে এখন কোথায় আছেন?

একুশ বছর আগে ঘটা ওই ঘটনার বর্ষপূর্তির এ সময়ে  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেজর জেনারেল গোলাম কাদের এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিল্লুর রহমান আর বেঁচে নেই।

অন্যদের মধ্যে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান এবং হেলাল মোর্শেদ খান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

অন্যদের বেশিরভাগই খুব বেশি দৃশ্যপটে নেই।

লে. জেনারেল(অবঃ) আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম বীর বিক্রম: তৎকালীন সেনা প্রধান লে. জেনালের নাসিমই ছিলেন কথিত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় প্রধান অভিযুক্ত। ১৯৯৬ সালের ২০ মে ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠান। পরিস্থিতি রাষ্ট্রপতির পক্ষে নিয়ন্ত্রণে আসার পর ২১ মে তাকে আটক করা হয়। ওই বছরের ১২ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দুই দিনের মাথায় ১৪ জুন তদন্ত আদালতের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি তাকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্তের আদেশ দেন। তখনও অবশ্য নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়নি।

লে. জেনারেল(অবঃ) আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম বীর বিক্রম

২০০১ সালের জুন মাসে ‘আমি জেনারেল নাসিম বলছি’ বইটি লেখা ছাড়া ওই ঘটনার পর তিনি খুব একটা প্রকাশ্যে আসেননি। বর্তমানে মহাখালী ডিওএইচএস-এ বসবাস করছেন জেনারেল নাসিম।

মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম: জেনালের নাসিমের ঘনিষ্ঠতম সহযোগী হিসেবে সেনাবাহিনীর বগুড়া ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি হেলাল মোর্শেদ খানকে ১৮ মে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়, বরখাস্ত করা হয় ২১ জুন।

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে এ পদে নিয়োগ দেয়। এরপর ২০১০ সাল এবং ২০১৪ সালে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

মিরপুর ডিওএইচএস-এ থাকেন হেলাল মোর্শেদ খান।

মেজর জেনারেল আয়েনউদ্দিন বীর প্রতীক: ১৮ জনু বরখাস্ত হওয়া সেনাবাহিনীর ময়মনসিংহ ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল আয়েনউদ্দিন বীর প্রতীক ওই ঘটনার পর খুব একটা প্রকাশ্যে আসেননি বলে জানিয়েছেন তার একজন সাবেক সহকর্মী।

বর্তমানে তিনি মহাখালী ডিওএসএইস এ বসবাস করছেন। সেনাবাহিনীতে তাকে একজন আইন বিশেষজ্ঞ মনে করা হত। অনেক কোর্ট মার্শালেই তিনি আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক: ১৯৯৬ সালের ১৫ জুন বাধ্যতামূলক অবসর পাওয়া সেনাবাহিনীর যশোর ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি সৈয়দ ইবরাহিম বর্তমানে কল্যাণ পার্টি নামক একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ দলটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ।

মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে মেধাবী অফিসারদের একজন হিসেবে তাকে মনে করা হত। এরশাদ আমলে শান্তি বাহিনীর একটি অংশকে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন।

অনেকগুলোর বইয়েরও লেখক জেনারেল ইবরাহিম।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিরন হামিদুর রহমান: ১৮ মে হেলাল মোর্শেদের সঙ্গে বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি)-এর উপমহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা মিরন হামিদুর রহমান বর্তমানে দেশের একটি শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপে কর্মরত আছেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজুল হক: সেনাবাহিনীর সিগন্যাল ব্রিগেডের তৎকালীন অধিনায়ক আজিজুল হককে তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে জেনারেল নাসিমকে সহযোগিতার অভিযোগে ১৫ জুন বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি মহাখালী ডিওএইচএস-এ বসবাস করছেন।

অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। অন্যরা ঢাকার বিভিন্ন ডিওএসএইস-এ বসবাস করেন।

যেভাবে এ ১৫ জন ওই ঘটনায়
রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস যে কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি এবং বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ দেন তারা সবাই লে. জেনারেল নাসিমের অনুগত এবং কথিত অভ্যুত্থান চেষ্টায় তাকে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ আনা হয়।

লে. জেনারেল নাসিমের আদেশে সেনা নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হয়েছিলেন বগুড়া ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ খান এবং ময়মনসিংহের জিওসি মেজর জেনারেল আয়েনউদ্দিন । যশোরের জিওসি মেজর জেনারেল ইবরাহিমও পাঠিয়েছিলেন কিছু সৈনিক।

মেজর জেনারেল আয়েনউদ্দিন বীর প্রতীক

পরিস্থিতি অনুকুলে আনতে লে. জেনারেল নাসিম তার বিশ্বস্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু বক্‌রকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ৪৬ ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রোকন উদ-দৌলার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিতে। তবে তিনি রুকন-উদ-দৌলার কৌশলের কারণে দায়িত্বভার বুঝে নিতে পারেননি।

তৎকালীন সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় কারণ তিনি ৪৬ ব্রিগেডের বদলির আদেশ তৈরি করেছিলেন।

লে. জে নাসিমের  আদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের দায়িত্ব থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রহিমের কাছ দায়িত্ব বুঝে নিতে যান মেজর জেনারেল গোলাম কাদের। সঙ্গে ছিলেন তার অধীনস্থ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবিদুর রেজা। কিন্তু বিগ্রেডিয়ার জেনারেল রহিম দায়িত্ব ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রয়োজনে মৃত্যু পর্যন্ত লড়াইয়ের ঘোষণা দিলে তারা দুজনই ফেরত চলে আসেন। কিন্তু পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রহিমের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এ দুজন অফিসারকে জেনারেল নাসিমের অনুরক্ত হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়।

আর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফি মোহাম্মদ মেহবুব এবং বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জিল্লুর রহমানকে দোষী সাব্যস্তের কারণ তারা যথাক্রমে বগুড়া ব্রিগেডের জিওসি হেলাল মোর্শেদ এবং ময়মনসিংহ ব্রিগেডের জিওসি আয়েনউদ্দিনের অধীনস্থ এবং অনুগত ছিলেন।

চাকরিচ্যুত এবং বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত অন্য কর্মকর্তারাও কোন না কোনভাবে নাসিমের প্রতি অনুগত থেকে তাকে কথিত অভ্যুত্থান চেষ্টায় সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ আনে তদন্ত আদালত।

এসবই ঘটে রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের আদেশে দু্ই সেনা কর্মকর্তার বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশে।

ওই সময়ের কথা কথা উল্রেখ করে সাবেক সেনা কর্মকর্তারা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়ার আগে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সংবিধানে যে সংশোধনী আনে তাতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। শুরুতে বিষয়টি কেউ খেয়াল করেনি। পরে অবশ্য এক ধরনের ‘দ্বৈত শাসনের’ বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

তখনকার সেনা কমান্ডের চাওয়া ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর মত প্রধান উপদেষ্টার অধীনে থাকবে, তা না হলে ‘চেইন অব কমান্ড’ নষ্ট হবে বলে তাদের আশঙ্কা ছিল। এর আগে বিএনপি আমলে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হলেও তাদের কার্যক্রম নিয়ে বিএনপি সরকার এবং রাষ্ট্রপতি সন্তুষ্ট ছিলেন না। সেসময় সেনাবাহিনী অস্ত্র উদ্ধারে একটি তালিকা উপেক্ষা করে স্বাধীনভাবে অভিযান পরিচালনা শুরু করে। এসব কারণে সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিমের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক

দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে রাষ্ট্রপতি সেনাপ্রধানকে উপক্ষো করে ১৮ মে, ১৯৯৬ মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিরন হামিদুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আদেশ জারি করলে। এ ঘটনায় বিধিভঙ্গ হয়েছে দাবি করে সেনা সদর বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ বাতিলের অনুরোধ জানায়।

কিন্তু নানা ঘটনাপ্রবাহ– যাকে কেউ অভ্যুত্থান চেষ্টা আর কেউ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা চেষ্টা হিসেবে দাবি করেন– এর মধ্য দিয়ে রাষ্টপতি বিশ্বাস নিজের অনুগত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিজের পক্ষে নিয়ে ২১ মে সেনাপ্রধান নাসিমসহ ৭ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আটক করেন। নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান।

 

1126 ভিউ

Posted ১১:০৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২০ মে ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com