কক্সবাংলা ডটকম(২৭ জুলাই) :: সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রি রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে সরকার, যা এ যাবত্কালের সর্বোচ্চ। কেবল জুনেই ৫ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে বলে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। সবমিলে গত অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৫১৮ কোটি টাকার। ওই অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের মোট দেনার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। বছরটিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এরপর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর পরের দুই অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে খুব বেশি উত্সাহ দেখা যায়নি সাধারণ মানুষের মাঝে। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকেই হু হু করে বেড়েছে সঞ্চয়পত্র ক্রয়। মূলত ওই সময়ে অতিরিক্ত তারল্যের দোহাই দিয়ে আমানতের সুদহার কমাতে থাকে ব্যাংকগুলো।
দেশের ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহারও কিছুটা কমিয়ে আনে। অব্যাহতভাবে আমানতের সুদহার হ্রাস করতে গিয়ে তা মূল্যস্ফীতির নিচে নামিয়ে আনে ব্যাংকগুলো। এ অবস্থায় আমানতের সুদের ওপর নির্ভরশীল সাধারণ মানুষ সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকে পড়ে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ১১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকার। সে হিসাবে অর্থবছরটিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ১৮ দশমিক ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটে। ওই অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের দেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ২৮ হাজার ৭৩২ কোটি টাকার। ২০১৫ সালের জুনে সঞ্চয়পত্রে সরকারের দেনার পরিমাণ এক লাফে ১ লাখ ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
বছরটিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ে ৩৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকার। বছরটিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৩২ শতাংশ বেড়ে এ খাতে সরকারের ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮১৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নেয়া ঋণে ১০-১২ শতাংশ সুদ সরকারকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। অথচ ট্রেজারি বিলের বিপরীতে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ সুদে ৯১ দিন মেয়াদি এবং ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সুদে পাঁচ বছর মেয়াদি ব্যাংকঋণ নিতে পারত সরকার। সঞ্চয়পত্র থেকে চাহিদার অতিরিক্ত ঋণ পাওয়ায় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিতে পারছে না।
উল্টো ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকার আগের বকেয়া থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এতে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্রের উচ্চ মুনাফার হার সরকারের সুদ ব্যয়ভার বাড়াবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি গতকাল চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বলেন, সঞ্চয়পত্রের উচ্চ মুনাফার হার সরকারের সুদ ব্যয়ভার বাড়াবে।
এছাড়া মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বন্ড বাজারের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে। তাই অচিরেই সঞ্চয়পত্রগুলোর মুনাফার হার বিদ্যমান বাজার সুদহারের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে হবে।
তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেয়া যেতে পারে কিংবা আমাদের আউটলেটগুলোয় ক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের সংযুক্তি থাকতে পারে, এতে একজন নাগরিক অধিক সঞ্চয়পত্র কিনছেন কিনা, তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
Posted ৯:০০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta