কক্সবাংলা রিপোর্ট(৩০ ডিসেম্বর) :: গেল বছরও যেখানে পাসের হার ছিল ৮৪.৫৫% এ বছর সেখানে ৯০.৯৪%।গত বছর জিপিএ-৫ ছিল যেখানে ৯০৫ জন সেখানে এবছর পেয়েছে রেকর্ড ১৫৯৫ জন। এক লাফে পাসের হার বেড়েছে ৬.৩৯ ভাগ এবং ৬৯০ জন জিপিএ বেশি পেয়েছে ! এমনই চমকে দেওয়া ফলাফল হয়েছে এবার কক্সবাজার জেলায়।সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছে এবছর প্রতিটি ক্ষেত্রে ছেলেদের পিছনে ফেলেছে মেয়েরা।
৩০ ডিসেম্বর সকালে সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজার জেলাতেও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা ২০২১ এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এবছর এসএসসিতে কক্সবাজার জেলায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ২৫ হাজার ৭৬৯ জন। তাদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে ২৫ হাজার ৪৬৬ জন। আর পাশ করেছে ২৩ হাজার ১৫৯ জন। পাশের হার ৯০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে ছেলে পাশ করেছে ১০ হাজার ৯৯৪ জন এবং পাশের হার ৯০.৪৯%। আর মেয়ে পাশ করেছে ১২ হাজার ১৬৫ জন এবং পাশের হার ৯১.৩৬%।
এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৫৯৫ জন শিক্ষার্থী।এর মধ্যে ছাত্র ৭১২ জন আর ছাত্রী ৮৮৩ জন।গত বছরের তুলনায় এবছর ৬৯০ জন জিপিএ বেশি পেয়েছে। ২০২০ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯০৫ জন শিক্ষার্থী।এর মধ্যে ছাত্র ছিল ৫০০ জন আর ছাত্রী ৪০৫ জন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবারের মতো ২০২১ সালেও পাশের হার সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞান বিভাগে। এবছর বিজ্ঞানে অংশগ্রহনকারী ৪ হাজার ২৪৫ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে পাশ করেছে ৪ হাজার ১৩৩ জন। পাশের হার ৯৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে ছেলে পাশ করেছে ২ হাজার ২৫১ জন এবং মেয়ে পাশ করেছে ১ হাজার ৮৮১ জন। ছেলে পাশের হার ৯৭.৭০% এবং মেয়ে ৯৬.৯৬%। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৩৭১ জন। এর মধ্যে ছেলে ৬৩৭ জন এবং মেয়ে ৩৬৯ জন।
অপরদিকে ২০২০সালে বিজ্ঞানে ৩ হাজার ৯৭৪ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে পাশ করে ৩ হাজার ৭৭৩ জন। পাশের হার ছিল ৯৫ দশমিক ০৪ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮৫৬ জন। এর মধ্যে ছেলে ৪৮৭ জন এবং মেয়ে ৭৩৪ জন। ছেলে পাশের হার ছিল ৯৫.৮% এবং মেয়ে পাশের হার ছিল ৯৪.৯৯%।
এবছর ২০২১ সালে বাণিজ্য বিভাগে অংশগ্রহনকারী ৭ হাজার ৫৯৭ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে পাশ করেছে ৭ হাজার ৭ জন। এর মধ্যে ছেলে পাশ করেছে ৪ হাজার ২৬ জন এবং মেয়ে পাশ করেছে ২ হাজার ৯৮১ জন। পাশের হার ৯২ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬৯ জন। এর মধ্যে ছেলে ৫৬ জন এবং মেয়ে ১১৩ জন। ছেলে পাশের হার ৯০.৫১% এবং মেয়ে ৯৪.৬৬%।
অপরদিকে ২০২০সালে বাণিজ্য বিভাগে অংশ গ্রহন করে ৬ হাজার ৫৭০ জন। এর মধ্যে পাশ করে ৫ হাজার ৮৯৭ ছাত্রছাত্রী।ছেলে পাশ করে ৩ হাজার ২৯১ জন এবং মেয়ে পাশ করে ২ হাজার ৬০৬জন। পাশের হার ৮৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৫ জন। এর মধ্যে ছেলে ১৩ জন এবং মেয়ে ৩২ জন। ছেলে পাশের হার ছিল ৮৮.৫২% এবং মেয়েদের পাশের হার ছিল ৯১.৬৩%।
এবছর ২০২১ সালে মানবিক বিভাগে অংশগ্রহনকারী ১৩ হাজার ৬২৪ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে পাশ করেছে ১২ হাজার ১৯ জন। এরমধ্যে ছেলে পাশ করেছে ৪ হাজার ৭১৭ জন এবং মেয়ে পাশ করেছে ৭ হাজার ৩০২ জন। পাশের হার ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৫ জন। এর মধ্যে ছেলে ১৯ জন এবং মেয়ে ৩৬ জন। ছেলে পাশের হার ৮৭.৩৮% এবং মেয়ে ৮৮.৭৭%।
অপরদিকে ২০২০ সালে মানবিকে অংশগ্রহন করে ১০ হাজার ৫৫৩ জন। এর মধ্যে এর মধ্যে পাশ করে ৮ হাজার ১২১ ছাত্রছাত্রী। ছেলে পাশ করে ২ হাজার ৯৫৪ জন এবং মেয়ে পাশ করে ৫ হাজার ১৬৭ জন। পাশের হার ৭৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ৪ জন। এর মধ্যে ৪ জনই মেয়ে।কোন ছেলে ওই বছর জিপিএ পায়নি। ছেলে পাশের হার ছিল ৭৭.৯৪% এবং মেয়ে ৭৬.৯০%।
ফলাফলের পরিসংখ্যানে দেখা যায়,গত বছরের তুলনায় এবছর পাশের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তি অনেক বেড়েছে। ২০২০ সালে পাশের হার ছিল ৮৪.৫৫% । আর ২০১৯ সালে পাশের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ২০১৮ সালে ছিল ৭৪ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ছিল ৯১ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০২০ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯০৫ জন শিক্ষার্থী।এর মধ্যে ছাত্র ছিল ৫০০ জন আর ছাত্রী ৪০৫ জন। ২০১৯ সালে গতবছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৫৯০ জন। এর মধ্যে বালকের সংখ্যা ছিল ৩১৬ আর বালিকা ২৭৪ জন । ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭১৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বালক ছিল ৪০২ এবং বালিকা ৩১৫ জন।
এছাড়া জেলায় বরাবরের মতো এবছরও ভালো ফলাফল অর্জন করেছে কক্সবাজার শহরের দুটি প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় এবং কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এর মধ্যে কক্সবাজার সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় এবছর ২৬৬ জন ছাত্রের মধ্যে উত্তির্ন হয়েছে ২৬৩ জন। ফেল করেছে ৩ জন।জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪৫ জন।পাশের হার ৯৮.৮৭%। এ স্কুলে বিজ্ঞানে ২৩৪ জন ছাত্রের মধ্যে পাশ করেছে ২৩৩ জন। পাশের হার ৯৯.৫৭% এবং বাণিজ্যে ৩২ ছাত্রের মধ্যে পাশ করেছে ৩০ জন। পাশের হার ৯৪%।
অপরদিকে কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শতভাগ পাশ হওয়ার পাশাপাশি ১৮৬টি জিপিএ-৫ পেয়ে জেলায় শীর্ষে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার সকালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনা মূল্যে বই বিতরণ উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল পৌনে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের প্রধানের কাছ থেকে গ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
১০টা ৪৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ফলাফল ঘোষণা করেন। ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড মিলে এবার পাসের হার ৯৩.৫৮। এর মধ্যে নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৯৪.০৮।
এসময় তিনি বলেন, ‘আমি সকল শিক্ষাবোর্ডের ফলাফল ঘোষণা করছি। ফলাফল ওয়েবসাইটে পৌঁছে যাবে এবং অনলাইনেও জানা যাবে।’
গত ১৪ নভেম্বর শুরু হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শেষ হয় ২৩ নভেম্বর। করোনার কারণে এ বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এ পরীক্ষা নেয়া হয়।
এবারের এসএসসি পরীক্ষা হয় শুধু নৈর্বাচনিক বিষয়ে। অন্যান্য আবশ্যিক বিষয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়নের মাধ্যমে নম্বর দেয়া হয়।
যেভাবে ওয়েবসাইট থেকে ফল জানবেন
শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নাম্বার, পরীক্ষার নাম এবং বোর্ড সিলেক্ট করে ফলাফল জানা যাবে। প্রথমে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে পরীক্ষার ধরন নির্বাচন করুন। এরপর পরীক্ষার বছর, বোর্ড, রোল, রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিন। ওয়েব নিরাপত্তার জন্য একটি অংক সেখানে দেওয়া থাকবে সেটির যোগ ফল লিখে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলেই আপনি ফল পেয়ে যাবেন। তবে ফল জানার জন্য প্রতি বছর অতিরিক্ত ট্রাফিকের কারণে সার্ভার সংক্রান্ত সমস্যা হয়। তাই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেজাল্ট জানতে কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে।
এক্ষেত্রে প্রতিটি বোর্ডেরও নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখান থেকেও ফলাফল জানা যাবে।
এসএমএসে ফল জানবেন যেভাবে
মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফল পাওয়ার জন্য SSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। উদাহরণস্বরূপ: SSC DHA 123456 2021 পাঠিয়ে দিন ১৬২২২ নম্বরে। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের জন্য Dakhil লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে আবার স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পাসের সাল লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। উদাহরণস্বরূপ: Dakhil MAD 123456 2021 পাঠিয়ে দিন ১৬২২২ নম্বরে।
জানা যায়, এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২২ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। গত ১৪ নভেম্বর সকালে বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৪ জন বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। এ অনুযায়ী বৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ ছাড়া মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১৫১টি এবং কেন্দ্র বেড়েছে ১৬৭টি।
পরীক্ষা বিষয়ে দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর ৩ হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৩৫টি স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। তাদের মধ্যে ৯টি সাধারণ বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৭ হাজার ৬৭৬টি স্কুলের ১৮ লাখ ৯৯৮ জন পরীক্ষার্থী। এ ছাড়া কারিগরি বোর্ডের আরও ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৯ জন ও মাদ্রাসা বোর্ডে মোট ৩ লাখ ১০ হাজার ১৭২ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
এবারের পরীক্ষা হয়েছে সংক্ষিপ্ত (কাস্টমাইজড) সিলেবাসে। প্রতিটি বিভাগে ৩টি করে বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। বাকি বিষয়ে জেএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে এসএসসি ও সমমানে ফল দেওয়া হবে। গত ২৩ নভেম্বর শেষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
Posted ৪:১৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta