শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গেল জাজ মাল্টিমিডিয়া

মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট ২০১৮
362 ভিউ
৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গেল জাজ মাল্টিমিডিয়া

কক্সবাংলা ডটকম(২৭ আগস্ট) :: ভুয়া রফতানি নথি তৈরি করে জনতা ব্যাংক থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ তুলে নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। এই গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটির কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ২৬ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার ৬২৩ টাকা। ৩১ জুলাই জনতা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এম এ আজিজের নামে একটি চিঠি ইস্যু করেছে।

ব্যাংক বলছে, এই এমএ আজিজই হচ্ছেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার। তবে ব্যাংকের এ দাবি অস্বীকার করেছেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার।

এম এ আজিজ বলেছেন, ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের তার ভাই। তবে তিনি জনতা ব্যাংক থেকে কোনও টাকা নেননি। রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের সঙ্গে তার কোনও সম্পৃক্ততা নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘জনতা ব্যাংক যার নামে চিঠি ইস্যু করেছে তিনি আর আমি একই নই। জনতা ব্যাংক যে ঠিকানা ব্যবহার করেছে, সেই ঠিকানাও আমার নয়। জনতা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে আমার ভাই। দোষ করলে ভাই করেছে। ভাইয়ের দোষ আমার কাঁধে আসবে কেন?’

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুছ ছালাম আজাদ বলছেন, ‘রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান এম এ আজিজকে আমরা এম এ কাদেরের ভাই বলেই জানি। যিনি সিনেমা তৈরি করেন বলেই শুনেছি।’

চামড়া খাতের উদ্যোক্তারাও বলছেন, রিমেক্স ফুটওয়্যারের মালিক ক্রিসেন্ট গ্রুপের এম এ কাদের ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার এম এ আজিজ দুই ভাই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ আজিজ ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার আজিজ একই ব্যক্তি। তারা চামড়াজাত পণ্যের এই ব্যবসা পৈতৃক সূত্রে পেয়েছেন।

বর্তমানে দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত নাম জাজ মাল্টিমিডিয়া। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রেও বিনিয়োগ করেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে বেশ কয়েকটি ব্যবসা সফল সিনেমাও হয়েছে।

জনতা ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, আজিজের বড় ভাই কাদেরের কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত, পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও রফতানি করা একাধিক প্রতিষ্ঠান আছে। এরমধ্যে রয়েছে, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ, ক্রিসেন্ট ফুটওয়্যার, রূপালী কম্পোজিট লেদার, লেক্সকো লিমিটেড ও গ্লোরী অ্যাগ্রো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রিসেন্ট লেদারের রফতানির অর্থ দেশে না এলেও নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে একের পর এক বিল কিনেছে জনতা ব্যাংক। ভুয়া রফতানি বিল কিনে গ্রুপটির হাতে নগদে টাকা দিয়েছে তারা। এখন রফতানির টাকা ফেরত আসছে না। এর বাইরে সরকারের নগদ সহায়তা তহবিল থেকেও ক্রিসেন্ট গ্রুপ নিয়েছে এক হাজার ৭৫ কোটি টাকা। বিদেশে রফতানির এক হাজার ২৯৫ কোটি টাকা আটকা রয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রুপটি সরকারি ব্যাংক ও সরকারের তহবিল থেকে ২০১৩ সাল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ১৩০ কোটি টাকা নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রফতানি বিল কেনার ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম মানেনি জনতা ব্যাংক। বিলের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়নি তারা। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান টাকা দিতে পারবে কিনা, সে ব্যাপারে কোনও খোঁজ-খবর নেয়নি ব্যাংকটি। জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখায় মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ক্রিসেন্ট গ্রুপের ছয় প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির ঋণ ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের অনুসন্ধানে এরই মধ্যে জালিয়াতির বিষয়টি চিহ্নিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইমামগঞ্জ শাখার এডি লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি জনতা ব্যাংক ও দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। রফতানির আড়ালে ক্রিসেন্ট গ্রুপের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের প্রাথমিক প্রমাণও পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে এম এ কাদেরকে ফোন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

কী আছে ব্যাংকের চিঠিতে: চিঠিতে লেখা হয়েছে, আপনি অবগত আছেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়, ঢাকার ২৪শে জুন, ২০১৮ তারিখের পত্র (সূত্র নং-এফইপিডি(এফইএমপি/০৩/(এ)/২০১৮-৫৬৩৩) এবং জনতা ব্যাংক লিমিটেড প্রধান কার্যালয়ের ফরেন ট্রেড ডিপার্টমেন্ট-এক্সপোর্ট-এর পত্র (সূত্র নং-এফটিডি/ইমামগঞ্জ/এডি লাইসেন্স/স্থগিত/১৮, তারিখ ২৫ জুন-২০১৮) মোতাবেক জনতা ব্যাংক লিমিটেড ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখায় পরিচালিত আপনার প্রতিষ্ঠানের দায়দেনা জনতা ব্যাংক লিমিটেড লোকাল অফিস, ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা ঠিকানা হচ্ছে, হাউজ নং-৫৩৬, রোড নং-১১, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি, আদাবর-১১, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

ব্যাংকটির বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের (এফটিডি) উপ-মহাব্যবস্থাপক রূহুল আমীন খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে রিমেক্স ফুটওয়্যারের সব দায়দেনা পুরান ঢাকার ইমামগঞ্জ থেকে লোকাল অফিসে স্থানান্তর করার বিষয়টি জানানো হয়।

রিমেক্স ফুটওয়্যারের দায়দেনার একটি হিসাবও উল্লেখ আছে চিঠিতে। তাতে দেখা যায়, গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত রিমেক্স ফুটওয়্যারের কাছে রফতানি বিল ক্রয় (এফডিবিপি) বাবদ জনতা ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৫৩৫ কোটি ৮৫ লাখ ৭৪ হাজার ২৯০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি প্যাকিং ক্রেডিট (পিসি) বাবদ ১৬৬ কোটি ৮৬ লাখ ৮০ হাজার ৪৫৭ টাকা ঋণ নিয়েছে। সাধারণত রফতানি পণ্য শিপমেন্টের জন্য এ ধরনের ঋণ দেওয়া হয়। রিমেক্স ফুটওয়্যার রফতানির জন্য অগ্রিম ক্যাশ সাবসিডি হিসেবে নিয়েছে ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪২ টাকা। এছাড়া রফতানি বিল প্রত্যাবাসন না হওয়ায় প্রায় ১০৪ কোটি টাকা ফোর্সড লোন সৃষ্টি হয়েছে।

রিমেক্স ফুটওয়্যারের অন্য দায়গুলো হলো—সিসি হাইপো ৯৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭০ টাকা, সিসি প্লেজ ১০৮ কোটি ৯০ লাখ ৭ হাজার ৮৬৪ টাকা, আইএফডিবিসি ৭১ লাখ ৫ হাজার টাকা এবং এলসি বাবদ ১ কোটি ৩২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত রিমেক্স ফুটওয়্যারের কাছে জনতা ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার ৬২৩ টাকা। মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও জনতা ব্যাংকের কেনা রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের রফতানি বিলের অর্থ দেশে আসছে না।

চিঠিতে বলা হয়েছে, পিসি ঋণ অগ্রিম ক্যাশ সাবসিডি, পিএডি ক্যাশ ও লোন জেনারেল ( ফোর্সড) এ ঋণ হিসাবগুলো দ্রুত সমন্বয় করা অপরিহার্য। তাছাড়া সীমাতিরিক্ত ইসিসি হাইপো, ইসিসি প্লেজ, সিসি হাইপো, সিসি প্লেজ দায় সমন্বয় করে ওই হিসাবগুলো নিয়মিত রাখা অত্যাবশ্যক। আমদানি বিল বাবদ অপরিশোধিত আইএফডিবিসি ও এলসি ( যেসব ডকুমেন্ট ব্যাংকে জমা রয়েছে) দায়গুলো দ্রুত সমন্বয় করা আবশ্যক। এম এ আজিজকে দেওয়া চিঠিতে ব্যাংকের সব দায় পরিশোধের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধও করা হয়েছে।

362 ভিউ

Posted ৩:২১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com