রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

Apocalypto : মুগ্ধতা জাগানো মায়া সভ্যতার সিনেমা

মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০১৯
303 ভিউ
Apocalypto : মুগ্ধতা জাগানো মায়া সভ্যতার সিনেমা

কক্সবাংলা ডটকম(১১ নভেম্বর) :: মেক্সিকোর দক্ষিণে এবং উত্তর-মধ্য আমেরিকাতে বসবাস ছিল মায়ানদের। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ২৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিল মায়া সভ্যতার ব্যাপ্তিকাল। সভ্যতা হারিয়ে গেছে কয়েক হাজার বছর আগে, কিন্তু উৎকর্ষের বিচারে আজও বিস্মরিত হয়নি মায়ানরা।

সেই সভ্যতার সূর্যাস্তের দিনগুলোর প্রেক্ষাপটে প্রোটাগনিস্ট মায়ান যুবক জ্যাগুয়ার প, তার পরিবার ও সম্প্রদায়কে ঘিরেই সাজানো হয়েছে ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এপিক-অ্যাডভেঞ্চার ঘরানার ছবি অ্যাপোক্যালিপ্টো

মেল গিবসনের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় নির্মিত ছবিটির নির্মাণব্যয় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘরে হলেও বক্স অফিসে ১২০.৭ মিলিয়ন কুড়াতে সক্ষম হয়েছিল সিনেমাটি। পেয়েছে সমালোচকদের প্রশংসাও। বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড ঘরে তুলবার পাশাপাশি রূপসজ্জা, শব্দগ্রহণসহ সহ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে অস্কার মনোনয়নও পেয়েছিল এই সিনেমা।

উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতানুরাগীদের জন্য আরেকটি তথ্য হচ্ছে, পাকিস্তানি সঙ্গীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খানের যন্ত্রসঙ্গীত ও কণ্ঠশিল্প- দুইই ছিল এই সিনেমায়!

apocalypto-2006-jaguar-paw-seven
প্রোটাগনিস্ট জ্যাগুয়ার প, তার স্ত্রী ও নবজাতক; Image Source: Touchstone Pictures

এই যুগে এসে কয়েক হাজার বছরের পুরনো একটি সভ্যতাকে ফুটিয়ে তোলার কাজটি সহজ ছিল না। সেই কঠিন কাজটি অবলীলায় করা হয়েছে সিনেমায়। দুর্দান্ত সেট ডিজাইন ও রূপসজ্জার সঙ্গে ছিল অসাধারণ দৃশ্যায়ন। একেবারে এক বসাতেই দেখে শেষ করার মতো একটি সিনেমা; দেখা শেষ হয়ে গেলেও আবার ইচ্ছে হবে বিশেষ বিশেষ দৃশ্যগুলো টেনে দেখার।

গলা-অবধি পানিতে এক সন্তানকে পিঠে রেখে আরেক সন্তানকে জন্মদান, হাতে করে সদ্যজাত শিশুকে পানি থেকে হাতে উঠিয়ে বাঁচিয়ে রাখার সেই জীবন্ত দৃশ্যগুলো চোখ আর মনকে বিশেষভাবে ছুঁয়ে যাবেই।

মুভির দুরন্ত সব দৃশ্য পাঠ্যবইতে পড়া আদিমকালের মানুষদের জীবন-যাপন, প্রাকৃতিক প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা এসব যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ধরা দেবে।

Female Role Seven In Apocalypto 2006
সিনেমার সবচাইতে বিখ্যাত সিকোয়েন্সের একটি দৃশ্য; Image Source: Touchstone Pictures

সিনেমাটির একটি চমকপ্রদ দিক হচ্ছে, এতে নামিদামি কোনো অভিনেতাই নেই, সকল কুশীলবই নতুন। নতুন অভিনেতাদের কাছ থেকে এধরনের নিখুঁত অভিনয় বের করে আনা চাট্টিখানি কথা নয়!

পুরো সিনেমার সংলাপগুলো ছিল মায়ান ভাষাতেই। যার কারণে সবাইকে আগে এ ভাষা রপ্ত করতে হয়েছে। মায়ান ভাষা হলেও ইংরেজি সাবটাইটেল থাকায় আর সিনেমার কাহিনী প্রাণবন্ত হওয়ায় দর্শককে বুঝে উঠতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।

নাটকীয়তা, রোমাঞ্চ, অ্যাকশান কিছুরই কমতি নেই সিনেমাটিতে। কিন্তু এত সুনাম, এত প্রাপ্তি আর সফলতার পরেও অ্যাপোক্যালিপ্টোর বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক সমালোচনা, রয়েছে ইতিহাস বিকৃতির গুরুতর অভিযোগ। নৃতত্ত্ববিদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদেরা এর কড়া সমালোচনা করেছেন বেশ কয়েকটি ইস্যুতে।

সমালোচকদের অনেকেই মনে করেন, সিনেমাটি মায়ানদের নিয়ে হলেও আদতে মায়ানদের প্রকৃত ইতিহাস তুলে না ধরে তাদেরকে দেখানো হয়েছে হিংস্র, বর্বর, পাশবিক ও উগ্রবাদী হিসেবে। সেই সঙ্গে খুব কৌশলে সাদা চামড়া মানুষদের তুলে ধরা হয়েছে সভ্য, উদার, ত্রাণকর্তা হিসেবে।

Apocalyto 2006 | Mayan Civilization
অ্যাপোক্যালিপ্টো সিনেমায় নরবলির দৃশ্য; Image Source: Touchstone Pictures

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্ব সভ্যতার বিকাশে মায়ানদের অনেক অবদান রয়েছে। মায়ানদের পূর্ণাঙ্গ লিখিত ভাষা ছিল। ছিল শিল্পকর্ম, স্থাপত্যশিল্প, গণিতবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যায় সমান পারদর্শিতা। অনেকের মতে শূন্য আবিষ্কারের কৃতিত্ব এই মায়ানদেরই। নিজস্ব ট্যাটু, সাংকেতিক চিহ্ন, রণকৌশল, দিনপঞ্জিসহ সব কিছু মিলিয়ে মায়ান সভ্যতা সৌন্দর্য এখনো বিশ্ববাসীকে অবাক করে। কিন্তু সিনেমায় মায়ানদের ইতিবাচক দিকগুলো সেভাবে উঠে আসেনি।

সিনেমাটিতে নরবলি দেওয়ার যে অংশটি দেখানো হয়েছে, তা নিয়েও রয়েছে তীব্র সমালোচনা। নরবলির প্রথা মায়ানদের মধ্যে ছিল বটে, তবে সে নরবলি গণহারে হতো না। গণহারে নরবলি দেওয়া ছিল মূলত অ্যাজটেকদের সংস্কৃতি।

কোনো কোনো সমালোচক আপোক্যালিপ্টোএর কড়া সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, পরিচালক মেল গিবসন মায়ানদের নিয়ে সিনেমা বানাননি; মায়ানদের খুব সূক্ষ্মভাবে ও কৌশলের সাথে অপমান করা হয়েছে। তাদের মতে এই সিনেমা মায়ানদের নিয়ে রীতিমতো মিথ্যাচার এবং মায়া সভ্যতা নিয়ে এক বিরাট অসভ্যতা।

মেক্সিকোতে অ্যাপোক্যালিপ্টোর এক প্রদর্শনীতে প্রতিবেদকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন মেল গিবসন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন; এই সিনেমার সমালোচনা করেন যারা, তারা আগে একটু হোমওয়ার্ক করে আসুন। আমি করেছিলাম।

দার্শনিক ও লেখক উইলিয়াম জেমস ডিউর‍্যান্ট বলেছিলেন, “যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজে নিজেই ধ্বংস হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো মহান সভ্যতাকে জয় করা যায় না।” উক্তিটি ব্যবহার করা হয়েছে সিনেমায়। এর মাধ্যমে বলতে পরিচালক বোঝাতে চেয়েছেন, মায়ানরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করেছে! কিন্তু সমালোচকরা এটিও মানতে নারাজ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী, অনাবৃষ্টি, কৃষিজমির অতিরিক্ত ব্যবহার, নিপীড়ন- এসব কারণে মায়া সভ্যতার বিলুপ্তি হয়েছে বলে অনেকে মনে করলেও এ সভ্যতার পতনের সুনির্দিষ্ট কারণ অবশ্য সকলের কাছেই ধোয়াশা।

Mel Gibson In Making Apocalypto 2006
শ্যুটিং চলাকালে মেল গিবসন ও কলাকুশলীরা; Image Source: Touchstone Pictures

যা-ই হোক, ইতিহাস বিকৃতির এই আলোচনাকে এক পাশে সরিয়ে রেখে একটু অন্যভাবেও বিবেচনা করা যেতে পারে। পরিচালক হয়তো মায়ানদের পরিস্থিতির গল্প বলার ছলে আমাদের বর্তমান সময়েরই গল্প বলে গেছেন। মানুষের পতনের আসল কারণ হলো নিজেদের মধ্যে দাঙ্গা, অন্তর্দ্বন্দ্ব। সিনেমাটিতে রূপকার্থে ফুটে উঠেছে একটি সমাজ, একটি জাতির ধ্বংস ও অবক্ষয়ের কারণ।

সিনেমার মূল চরিত্র এত নিপীড়ন, এত নির্যাতন সহ্য করেও নিজের পরিবারের সাথে বনেই থেকে গেছেন, শেষ দৃশ্যে সাগরতীরে নোঙ্গর ফেলা জাহাজ আর মানুষ দেখলেও বনই তার নিজের পরিচয়, নিজের পৈতৃক পরিচয়। নিজের আবাসভূমি, জন্মভূমির টান সত্যিকারের মানুষ কখনো ফেলে যেতে পারে না- এই দর্শনই ফুটে উঠেছে মূল চরিত্রের মধ্য দিয়ে।

ইতিহাস সম্পর্কিত বিতর্ক বাদ দিলে টান টান উত্তেজনায় ঠাসা চিত্রনাট্য, অসাধারণ সঙ্গীত, মনোমুগ্ধকর সেট, কস্টিউম, কালার গ্রেডিং মিলিয়ে ছবিটি দু’ ঘণ্টা অন্তত আপনাকে স্ক্রিনের সামনে বসিয়ে রাখবেই। আগে যদি দেখে থাকেন, সম্ভব হলে এইচডি প্রিন্ট আর আর বড় ডিসপ্লে ও ভালো সাউন্ড সিস্টেমে সিনেমাটি আবার দেখুন।

Apocalypto 2006 | Movie Poster
অ্যাপোক্যালিপ্টো সিনেমার পোস্টার; Image Source: Touchstone Pictures

পুনশ্চ: প্রযুক্তিবিপ্লবের সাথে সাথে বিনোদন-শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বইয়ের জায়গাটি ধীরে ধীরে ইলেকট্রনিক বা অনলাইন মিডিয়াগুলো নিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া নাগরিক ব্যস্ততার ইঁদুরদৌড়ে বই পড়বার চেয়ে সিনেমা দেখা অধিক সময়সাশ্রয়ী। যুগের এমন চাহিদাবদলের কারণে বইয়ের চাইতে সিনেমার মাধ্যমেই যেন ইতিহাসের ঘটনাগুলো এখন বেশি লোকের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে।

কিন্তু এও সত্য যে, ইতিহাস সরলরৈখিক নয় এবং অনেক বেশি ধূসর। ইতিহাস বইয়ের হাজার হাজার পৃষ্ঠা এতটা নিখুঁতভাবে দুই-তিন ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের সিনেমায় ফুটিয়ে তোলাও দুরূহ কাজ। পাশাপাশি ঐতিহাসিক বর্ণনাই যেখানে পক্ষপাতমুক্ত নয়, সেখানে চলচ্চিত্র-নির্মাতারা যে এ থেকে মুক্ত হবেন, সে আশাও বাড়াবাড়ি। আর এই সত্যটিকে মাথায় রেখেই আসলে দেখতে হবে সিনেমাটি।

 

 

303 ভিউ

Posted ৪:০৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com