কক্সবাংলা ডটকম(১৮ জুন) :: আইসিসি’র ওয়ানডের কোনো বৈশ্বিক আসরে আগে কখনো ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল ম্যাচ দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। আজ ঘটতে যাচ্ছে সেই বিরল ঘটনাটি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসেরই সবচেয়ে সফল দল ভারত। এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ এই আসরের ফাইনালে উঠল দলটি। এর মধ্যে কেবল ২০০০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে হেরেছিল ভারত।
সেটা বাদ দিলে এই টুর্নামেন্টে শতভাগ সফল ভারত। ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার সাথে ফাইনালটা বৃষ্টিতে ভেসে গেলে যৌথভাবে সনাথ জয়াসুরিয়ার সাথে ট্রফি তুলে ধরেছিলেন ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলি। এরপর ২০১৩ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে শিরোপা জিতে ভারত।
দুই নম্বর র্যাংকিংধারী বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা এই টুর্নামেন্টে এসেছিল অন্যতম ফেবারিট হিসেবেই। আর টুর্নামেন্টে এখন অবধি ফলাফলও বিরাট কোহলির দলের শ্রেষ্ঠত্বই মেনে নেয়। আর আজকে লন্ডনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনাল জিতে গেলে দলটা চলে আসবে র্যাংকিংয়ের শীর্ষে। বজায় থাকবে ভারতীয় আধিপত্য।
অপর দিকে, টুর্নামেন্ট শুরুর আগেও পাকিস্তানকে নিয়ে কেউ আশার বাণী শোনাচ্ছিলেন না। ভারতের বিপক্ষে ১২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে পাকিস্তান। তবে, এরপরেই যেন অনেকটা বদলে যায় পাকিস্তান। পরের সবগুলো ম্যাচ জিতে আন্ডারডগ হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করা সরফরাজ আহমেদের দলটাই আজ ফাইনালে। আর আজ জিতে গেলে সেটাকে পাকিস্তানের প্রত্যাবর্তন হিসেবেই দেখা হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বলার মতো কোনো পারফরম্যান্স নেই। সেদিক থেকে এই টুর্নামেন্টে জিততে পারলে ক্রিকেটাররা দেশের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারেন বলে মনে করছেন ইমরান খান।
তিনি বলেন, ‘যেভাবে আমরা ভারতের কাছে প্রথম ম্যাচটা হেরেছি, তাতে আমার মতে এটা আমাদের গৌরব পুনরুদ্ধারের একটা সুযোগ। বাজে ভাবে হারার পর এটা আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর মিশন। ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপ বেশ ভালো। ওরা দারুণ ফর্মে আছে। এই ক্ষেত্রে আমাদের স্পিনার আর পেসার হাসান আলীকে মূল ভূমিকা রাখতে হবে। ভারতকে চাপে ফেলতে হবে। আর আমাদের চাপ নিতে পারতে হবে।’
ইমরান খানের সতীর্থ ও সাবেক অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদ সরাসরি কাউকে ফেভারিট বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ইস্যুগুলোকে মাঠের বাইরে রেখে খেলোয়াড়দের খেলতে নামতে হবে। এটা আমাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার একটা সুযোগও। দুই দলেরই আমি ফাইনাল জয়ের সমান সুযোগ দেখছি। এটা ঠিক যে ভারত, শক্তিমত্তায় আমাদের চেয়ে এগিয়ে। তবে, এমন বড় ম্যাচে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে।
তবে, সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি ফাইনালে এগিয়ে রাখছেন ভারতকেই। তিনি বলেন, ‘আমার সবসময়ই মনে হয় পাকিস্তান যখন ভারতের মুখোমুখি হয়, তখন ওরা অনেক বেশি চাপ নেয়, সুযোগ কাজে লাগাতে পারে না। দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা এমনকি ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও পাকিস্তান যেমন খেলেছে সেটা ভারতের বিপক্ষে দেখা যায়নি। আর ফাইনালে শক্তিমত্তায় পাকিস্তানের চেয়ে ভারত অনেক বেশি এগিয়ে থাকবে। দলে কোনো দুর্বলতা নেই বললেই চলে। আশা করি, ফাইনালটা দারুণ হবে। পাকিস্তান তাদের সাধ্যমতো লড়াই করবে।’
অন্যদিকে, লঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা এ ম্যাচটাকে দেখছেন ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ম্যাচ হিসেবে। তিনি আইসিসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এক কলামে লিখেছেন, ‘ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ম্যাচ দিয়ে শেষ হচ্ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আশা করি শেষটাও ভালোই হবে।’
আইসিসি ইভেন্টে ভারত-পাকিস্তানের পরিসংখ্যান
ভারত বনাম পাকিস্তান এই একটা ম্যাচই যথেষ্ট যে কোনও ক্রিকেট প্রেমিকে মাঠমুখো করতে। শুধু ক্রিকেট প্রেমিই নন, যাঁরা কখনও ক্রিকেটকে ভালবেসে স্টেডিয়ামে যাননি বা টিভিতেও চোখ রাখেননি, তাঁরাও এক রাশ উত্তেজনা সঙ্গে নিয়ে চোখ রাখেন টেলিভিশনের পর্দায়। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ শুধু ক্রিকেট মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এর উত্তাপ ছড়িয়ে পরে দেশ থেকে দেশান্তরে।
আইসিসি ইভেন্টে ভারত-পাকিস্তান দু’দলই বহুবার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। তবে, অধিকাংশ সময়ই ভারতের কাছে পর্যুদস্ত হতে হয়েছে পাকিস্তানকে।
এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে ছ’বার ভারতের মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু ছ’বারের চেষ্টায় এক বারও হারাতে পারেনি ভারতকে। এমনকি ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ী ইমরান খানের পাকিস্তানও হারাতে ব্যর্থ হয় ভারতকে। ১৯৯২-এর পর ১৯৯৬ তেও ভারতের কাছে পর্যুদস্ত হয় পাকিস্তান। এর পর আর কখনই ভারতকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান।
১৯৯৯, ২০০৩, ২০১১, ২০১৫ প্রতিটি বিশ্বকাপেই ভারতের মুখোমুখি হলেও হারের মুখ দেখতে হয়েছে প্রতিবেশি এই রাষ্ট্রটিকে। শুধু বিশ্বকাপেই নয় টি২০ বিশ্বকাপেও চার বার পাকিস্তানকে হারিয়েছে ভারত। ২০০৭ সালে পাকিস্তানকে হারিয়েই প্রথমবারের জন্য টি২০ বিশ্বকাপ জিতেছিল ধোনির ভারত। এর পর ২০১২ এবং ২০১৪ তেও ভারতের কাছে নতিস্বীকার করতে হয় পাকিস্তানকে।
তবে, বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের কাছে বারবার ঠোক্কর খেতে হলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের ফলাফল তুলনামূলক ভাল। আইসিসির এই ইভেন্টে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছে চার বার। যার মধ্যে ভারত জিতেছে ২টি এবং পাকিস্তান ২টি।
২০০৪ সালে ইংল্যান্ডে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। এরই পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০০৯-এ সেঞ্চুরিয়ানে। পাকিস্তানের ৩০২ রানের জবাবে ভারতের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ২৪৮ রানে। কিন্তু এর পর থেকে ধীরে ধীরে পরিসংখ্যানে উন্নতি ঘটায় টিম ইন্ডিয়া।
২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ডাক-ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে পাকিস্তানকে দু’উইকেটে হারিয়ে দেয় ধোনির ভারত। চলতি চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফিতেও পাকিস্তানকে হার স্বীকার করতে হয় ভারতের সামনে।