মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

আবহাওয়ার হেঁয়ালি আচরণে ঘটছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

বুধবার, ২১ অক্টোবর ২০২০
822 ভিউ
আবহাওয়ার হেঁয়ালি আচরণে ঘটছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

কক্সবাংলা ডটকম(২১ অক্টোবর) :: শরতের পর হেমন্তেও থাবা বসিয়েছে বৃষ্টি। কমছে না উষ্ণতা। শুধু শরৎ বা হেমন্ত নয়, যেভাবে আবহাওয়ার ধরন দিনকে দিন বদলে যাচ্ছে, তাতে আর কয়েক বছর পর বসন্তের অস্তিত্বও থাকবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়ার হেঁয়ালি আচরণে গ্রীষ্ফ্মে থাবা বসাচ্ছে শীত, ঝোড়ো হাওয়া বইছে শীতে কিংবা বর্ষাকালেও ঘটছে বজ্রপাত আর শিলাবৃষ্টি। যদিও সুস্পষ্টভাবে স্থির হয়ে দেখা দিচ্ছে না নতুন কোনো ঋতুচক্র।

গত কয়েক বছরের পর্যবেক্ষণ বলছে, অনেক সময় শীত থাকছে ফাল্কগ্দুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত। কিন্তু তার পরেই তাপমাত্রা চড়ে যাচ্ছে ৩৫ ডিগ্রির ওপরে। দখিনা বাতাসে থাকছে উষ্ণতা। আবার শীতের পরেই লাফ দিয়ে চলে আসছে গ্রীষ্ফ্ম। আবার দেশের এক স্থানে বৃষ্টিপাত তো অন্য স্থানে থাকছে প্রচণ্ড গরম। গবেষকদের মতে, আবহাওয়ার এই রূপ বদল ঘটছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা দেশের ষড়ঋতুর ওপর ভালোভাবেই জেঁকে বসেছে। যার প্রভাব পড়ছে জীবন ও প্রকৃতিতে। ঝুঁকিতে পড়ছে কৃষি, বাড়ছে দুর্যোগ, বাস্তুচ্যুত হচ্ছে মানুষ। নতুন নতুন রোগও মোকাবিলা করতে হচ্ছে মানুষকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, আবহাওয়ার এ বৈরী আচরণ চলছে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বজুড়েই।

দীর্ঘতর হচ্ছে বর্ষাকাল :

সাধারণত জুন থেকে আগস্ট বা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষাকাল ধরা হলেও এবার অক্টোবরজুড়েই থাকছে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, আগে বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু যেভাবে বোঝা যেত, এখন আর তা বোঝা যায় না। খুব ধীরে ধীরে বড় হয়ে যাচ্ছে বর্ষাকাল। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বর্ষার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ভাদ্রের ভ্যাপসা গরম।

বাড়ছে বজ্রপাত :

মুহুর্মুহু বজ্রপাত। ঝোড়ো হাওয়া। সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। তবে কি চরিত্র পাল্টাচ্ছে বর্ষা? না হলে বর্ষায় ঘন ঘন বজ্রপাত কিছুটা অস্বাভাবিকই। আবহাওয়াবিদদের বক্তব্য, যে হারে গাছ কাটা ও দূষণ বেড়েছে, স্বাভাবিকভাবেই তার কোপ পড়েছে বর্ষা ঋতুপ্রবাহের ওপর। গত ১০ বছরে দেশে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। বজ্রপাতে চলতি বছরের শুরু থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ২৩৯ জন এবং বেসরকারি হিসাবে ৩৮২ জন মারা গেছেন। বিশ্বে বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যান, তাদের এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশের।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, তাপমাত্রা ও বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি, জনজীবনে ধাতব পদার্থ ব্যবহারের আধিক্য, মোবাইল ফোন ব্যবহার ও এর টাওয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি, বনভূমি বা গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস, জলাভূমি ভরাট, নদী শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ। এসবের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণায়নের সম্পর্ক বেশ নিবিড়।

অস্থির হতে পারে এবারের শীতকাল :

স্বভাব-শীতল শীতও কি চরিত্রবিরুদ্ধ উষ্ণতারই উপাসক হয়ে উঠছে, বদলে যাচ্ছে কোন কারণে- গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্নেষণ করে এ প্রশ্ন তুলছেন আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, সাগরের পানি যত গরম হবে, ততই ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপ দানা বাঁধবে। ফলে শুধু শীত নয়, সামগ্রিকভাবেই বদলে যাবে ঋতুচক্রের মেজাজ। রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং শীতের বদলে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে পরিবেশের সবখানে। বিশেষ করে শীতের ফসল এবং ফুলের পরাগমিলনে ব্যাঘাত ঘটছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা গেছে, গত ৫০ বছরে দেশের তাপমাত্রা বাড়ার হার শতকরা ০.৫। তাপমাত্রা বাড়ার এই ধারা অব্যাহত থাকলে প্রকৃতি থেকে শীত ঋতু উধাও হয়ে যাবে।

অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় আবহাওয়া সংস্থা বলেছে, প্রশান্ত মহাসাগরে ‘লা নিনা’ নামে একটি বিশেষ পরিস্থিতির কারণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এতে আগামী তিন মাস ঝড়-বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই বাংলাদেশসহ উত্তর-পূর্ব ও মধ্য ভারত এবং মিয়ানমারে বৃষ্টির প্রবণতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। সব মিলে অস্থির হতে পারে এবারের শীতকাল।

শীতের দেখা নেই, অথচ কুয়াশা :

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, কুয়াশা দেখা দিলেও শীত পাকাপাকিভাবে এখনই আসছে না। কয়েক দিন বৃষ্টির পর চলতি মাসের শেষের দিকে শীত পুরোপুরি শুরু হতে পারে। কুয়াশার আগমন সম্পর্কে তিনি বলেন, ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুস্তর শীতল থাকলে বায়ুতে মিশে থাকা জলীয় বাষ্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়। ভূপৃষ্ঠ রাতে দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে পড়লে ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুস্তর ঠান্ডা ও আর্দ্র হয়। এটা কুয়াশা তৈরির উপযুক্ত অবস্থা সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, ইদানীং ঢাকা শহরে যে কুয়াশা দেখা যাচ্ছে, তা ঠিক সাদা নয়, বরং কালচে রঙের। বাতাসে কার্বন ও ধূলিকণা জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে তাকে গাঢ় করে তুলছে।

মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় যে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে, তার পেছনেও দূষণকে দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজনীন আফরোজ হক বলেন, দূষণ বেশি হলে কুয়াশাও বেশি হবে।

ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা বাড়ছে :

আবহাওয়া অধিদপ্তরে সংরক্ষিত ১৯৬০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা ও পরের তিন বছরের ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়ে মোট ৩৬টি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে ১৫টিই এসেছে মে মাসে। গত ২১ মে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে। আম্পানের কারণে প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ ১১০০ কোটি টাকা বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। সাত জেলায় মারা যান ১৬ জন। ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত ‘জলবায়ু সেবা পরিস্থিতি ২০২০’ শীর্ষক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যা-সাইক্লোনসহ নানা দুর্যোগে বাংলাদেশে গত ৪০ বছরে পাঁচ লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ধকল সইতে না সইতেই গত ২৭ জুন শুরু হয় দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘতম বন্যা। এ বছর ৫১ দিন ধরে চলা বন্যায় দেশের ৩৭ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। আক্রান্ত হয় ৯০ লাখ মানুষ। ২০২০ সালের বন্যায় দেশের ৪০ জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৯২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৬ টাকা।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ‘ক্লাইমেট সেন্ট্রালের’ এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বন্যার আঘাতের শিকার হবে বাংলাদেশের চার কোটি ২০ লাখ মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ‘বাংলাদেশের জলবায়ু’ শীর্ষক গবেষণার অন্যতম গবেষক বজলুর রশীদের মতে, বছরজুড়ে গড়পড়তা প্রতি মাসেই স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি বৃষ্টি হয়েছে। রংপুরে ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চলতি বছর। দেশে সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি হয়েছে ৩৩ শতাংশ বেশি। বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় বন্যার পরিমাণও বাড়ছে। সামগ্রিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন দেশে দুর্যোগের পরিমাণ ও তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বন্যার ক্ষেত্রেই নয়, বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, তীব্র তাপদাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসও বেশি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সাধারণত আগস্টে বঙ্গোপসাগরে দুই থেকে তিনটি লঘুচাপ হয়। কিন্তু এ বছর হয়েছে পাঁচটি। সেপ্টেম্বরেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল।

কৃষির ক্ষতি :

কৃষিবিজ্ঞানীদের অভিমত, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় প্রতিবারই কিছু ফসল নষ্ট হয়। এ রকম আবহাওয়ায় বিভ্রান্ত হন চাষিরাও। শীতের মৌসুমে জাঁকানো ঠান্ডার বদলে কখনও গুমোট আবহাওয়ায়, কখনও বৃষ্টিতে ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে। তাপমাত্রা বাড়ার ফলে ফসলের বৃদ্ধি যেমন মার খাচ্ছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আগাছা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে বছরে বোরো ও আমন ধানের উৎপাদন ১০ শতাংশ কমে যেতে পারে। অর্থাৎ, প্রায় ৪০ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন কমতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যশোরের অভয়নগর, কেশবপুর ও মনিরামপুরে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ফসল ও মৎস্য সম্পদের ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়ছে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত সামনের দিনগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের ক্ষতি আরও বাড়বে বলে মনে করেন।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। উষ্ণায়নের কারণে প্রকৃতির পরিবর্তন হয়েই চলেছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বর্তমান অবস্থার মূল কারণ। আগামীতেও এখানে নানা ধরনের আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা যাবে। ফলে এটা মনে রেখেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পরিকল্পনা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

822 ভিউ

Posted ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২১ অক্টোবর ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com