রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের উল্লম্ফন : দুশ্চিন্তার ভাঁজ শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের

সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
382 ভিউ
উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের উল্লম্ফন : দুশ্চিন্তার ভাঁজ শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের

কক্সবাংলা ডটকম(১৪ ফেব্রুয়ারি) :: করোনা চলাকালে এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট পাসের হারের এই উল্লম্ফনকে ‘গণপাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন তিন কারণে এই গণপাস। এগুলো হচ্ছে- সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া, মাত্র ৩টি বিষয়ে পরীক্ষা হওয়া, ইংরেজি-গণিত-আইসিটির মতো কঠিন বিষয়গুলোর পরীক্ষা না হওয়া। উচ্চ মাধ্যমিকে স্বাভাবিকের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যক পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কপালে। তাদের আশঙ্কা, কাক্সিক্ষত ফলাফল নিয়েও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পছন্দমতো সাবজেক্টে ভর্তির সুযোগ মিলবে তো? সেই সঙ্গে তিন বিষয়ে পাস করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মান ধরে রাখতে পারবে কিনা- এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন শুধু এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের গড় হার ৯৫ দশমিক ৫৭। এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট ১১ লাখ ১৫ হাজার ৭০৫ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন। মোট জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২২ জন, যাদের গড় নম্বর প্রতিটি বিষয়ে ৮০ থেকে ১০০ এর মধ্যে।

এবার পাসের হার বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান বলেন, সবাই এক গ্রেডিং সিস্টেমে পরীক্ষা দিয়েছে। এখানে ফেল করা কঠিন। কারণ কেউ কিছু লিখলেই মার্ক পাবে। যতটুকু লিখবে ঠিক ততটুকুই মার্ক পাবে। সবাই হয়তো জিপিএ ৫ কিংবা জিপিএ ৪ পাবে না; কিন্তু এই ব্যবস্থায় পাস করবে এটাই স্বাভাবিক। এখন লিখলেই নম্বর। পাসের হার বাড়ার এটিই মূল কারণ বলে মনে করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য।

অন্যদিকে মহামারির কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসার সুযোগ পায়নি। পরে জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তাদের মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্ধতিগত পার্থক্যের কারণে ২০২০ সালের সঙ্গে ২০২১ সালের ফলের তুলনা করে পাসের হারে বাড়া-কমার হিসাব করা যৌক্তিক হবে না। তবে আগের বারের চেয়ে এবার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ২৭ হাজার ৩৬২ জন।

এদিকে মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় সার্বিকভাবে পাস করে ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মোট ৪৭ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী পাঁচে পাঁচ জিপিএ পেয়েছিল।পাসের হার বাড়াকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রমা বিজয় সরকার বলেন, তিন বিষয়ে পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বেশি ছিল। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হওয়ায় পড়াশোনার সময় বেশি পেয়েছে তারা। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষার সঙ্গে সাবজেক্ট ম্যাপিংটা খুব ভালো ছিল। যে কারণে পাসের হার বেড়েছে।

রাজধানীর বোরহানউদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান বলেন- ইংরেজি, গণিত, আইসিটির মতো বিষয়গুলো না থাকার কারণে এবার শিক্ষার্থীরা ভালো করেছে। অন্য সময় ইংরেজির পেছনে তারা বেশি সময় নষ্ট করে। ফলে অন্য বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতে পারে না। এছাড়া ইংরেজি দিয়েই পরীক্ষা শুরু হয়। ইংরেজি খারাপ হলেই তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অন্য পরীক্ষাগুলো খারাপ দেয়। এবার তা হয়নি।

উচ্চশিক্ষা ভর্তি নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা :

উৎকণ্ঠার সময় পেরিয়ে ফলাফল এলেও উৎকণ্ঠা আরো বেড়েছে। কাক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে কিনা, পছন্দমতো সাবজেক্ট পাবে কিনা, সব নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী মেহেজাবিন বলেন, আমার ইচ্ছা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার আগে প্রস্তুতির সময় কম। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়ে বড় সিলেবাসের ভর্তি পরীক্ষা দেয়া অনেক চ্যালেঞ্জের। তাই একটু চিন্তিত আছি।

একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আরেক শিক্ষার্থী মাহিয়া নাজনিন বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় সম্পূর্ণ বিষয়ে জানি না। প্রস্তুতির কম সময়ের মধ্যে সব বিষয়ে কাভার দিতে পারব কিনা জানি না। তাই সামনে আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাব। এই চ্যালেঞ্জটা প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর জন্য। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব।

জিপিএ ৫ পাওয়া জান্নাতুল প্রজ্ঞা বলেন, যে রেজাল্ট হয়েছে আমি খুবই খুশি। কিন্তু সামনে এডমিশন পরীক্ষা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ লং সিলেবাসে পরীক্ষা হবে। সময়ও কম। এখন থেকেই প্রিপারেশন নিচ্ছি।

মাইসা নামে এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, করোনার মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে শর্ট সিলেবাসে পরীক্ষা হলেও আমরা খুশি। কারণ অটো পাসের চেয়ে পরীক্ষা ভালো। কিন্তু সামনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে চিন্তায় আছি। কারণ শর্ট সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় সব বিষয়ে বেসিক নেই। তারপর অনলাইনে ক্লাস করে সব বিষয়ে শেখা যায় না। তবে আমার মেয়ের প্রতি ভরসা আছে সামনেও ভালো কিছু করবে বলে আশা করছি।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন :

উচ্চশিক্ষায় সুযোগ কতটুকু মিলবে এ নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উদ্বেগের মধ্যেই সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি যুগে কারিগরি শিক্ষার কদর বাড়ছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এদিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান বলেন, জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাকে আমাদের গুরুত্ব দেয়া উচিত। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। চাকরির বাজার উন্মুক্ত হচ্ছে।

তিন বিষয়ে পাস করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার গুণগত মান ধরে রাখতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই শিক্ষাবিদ বলেন, কোভিডে সারা বিশ্বে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সময় এবং শেখানোর ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এটি পুনরুদ্ধার বড় চ্যালেঞ্জ। কীভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেব, এ নিয়ে আমরা কাজ করছি।

সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা কম নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. রমা বিজয় সরকার বলেন, রাজধানী ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির চাপ বেশি থাকে, এটি সত্য। তবে একটু বাইরের দিকে এই চাপ কম। আমি বিশ্বাস করি, এবার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে না। তারা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে নতুন উদ্যমে পড়াশোনা করে ভর্তি পরীক্ষায় মনোযোগী হবে এবং নতুন স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যাবে।

মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান বলেন, ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তবে অসম্ভব তো নয়। সবাই কাক্সিক্ষত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে না এটি সত্য। তবে নিরাশ হলে চলবে না। এজন্য সবাইকে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে।

382 ভিউ

Posted ৫:২৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com