বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে আগুনের ঘটনায় সোমবার যেখানে আগুনের সূত্রপাত সেই ৮ নম্বর শিবির এলাকা থেকে সন্দেহভাজন সাত-আটজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে উখিয়া থানা পুলিশ। সোমবার রাতেই তাদের আটক করা হয়।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে উগ্রবাদী ‘আলেকিন’ গোষ্ঠীর দু্ই পক্ষের বিরোধ চলছে। যে এলাকায় আগুনের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে একটি পারিবারিক বিরোধও চলছিল। এসব মিলিয়ে ঘটনাটিকে ‘নাশকতা’ বলে সন্দেহ করছে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ।
তাদের দাবি, প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করা, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া ব্যাহত করা এবং দেশে মুজিববর্ষ উদযাপনের সময় ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে নাশকতা ঘটানো হতে পারে। ওই এলাকা থেকেই পুলিশ সন্দেহভাজন কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
এদিকে আগুনের ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অনেকে বলছে, ঘটনা পরিকল্পিত নাশকতা। তবে এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে চায় না রোহিঙ্গারা। তাদের সন্দেহ, ক্যাম্পটিতে অনেক দাপুটে এবং শক্তিশালী হিসেবে পরিচিত যারা তারাই এর পেছনে।
‘কথিত দাপুটে’ রোহিঙ্গারা দল বেঁধে শিবিরে শিবিরে অরাজকতা কায়েমের চেষ্টা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাই, মুক্তিপণ আদায় ও ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকারও অভিযোগ সাধারণ রোহিঙ্গাদের।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আগুনের ঘটনার পর আমার কাছে যেসব খবরাখবর এসেছে তাতে মনে হচ্ছে, এটা একটি ‘পরিকল্পিত’ ঘটনা।” তিনি জানান, রোহিঙ্গারা তাঁকে জানিয়েছে যে একই সঙ্গে কয়েকটি স্থানে আগুন ধরার কারণেই দ্রুত আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই আগুন সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বালুখালীর পুড়ে যাওয়া ক্যাম্প পরিদর্শনে যান পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন। ঘটনাস্থলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন লাগার নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে নাকি স্বাভাবিক উপায়ে ক্যাম্পে আগুন ধরেছে, তা অনুসন্ধানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে আগুন লাগার পেছনে কারও হাত কিংবা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে রেহাই দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত,গত সোমবার বেলা তিনটার দিকে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় ৭ ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পুলিশের তথ্যমতে, আজ দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১১ জন। তবে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, নিহতের সংখ্যা ১৫। অগ্নিকাণ্ডে ৪টি ক্যাম্পের ১০ হাজারের বেশি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গৃহহীন হয়ে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পাশে, পাহাড়–জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। ঘটনা তদন্তে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
Posted ২:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta