শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ার নেপথ্যে

রবিবার, ০২ মে ২০২১
265 ভিউ
কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ার নেপথ্যে

বিশেষ প্রতিবেদক :: নববর্ষ উপলক্ষে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ১৩৭ জন বিদেশিসহ মোট ২৩ হাজার ৪৭ বন্দিকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দিয়েছে বলে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গত ১৭ এপ্রিল খবর প্রকাশিত হয়েছিল।এছাড়া মিয়ানমারে নির্বাচন পরবর্তী সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধরপাকড় চলছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি উইন মিন্ট ও ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চিকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল করায় পরিস্থিতি ভালো নেই। এ কারণেও অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে।

এসব কারণে নতুন করে কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা বেড়েছে। আর চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ১০৪ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।

এর আগের দুই মাসে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল ২৯ রোহিঙ্গা। এছাড়া কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে ৩১ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসের তুলনায় পরবর্তী দুই মাসে মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা বেড়েছে তিনগুণের বেশি। এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই সীমান্তে গত ২১ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে টহল জোরদার করেছেন তারা।

বিজিবি পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা যেমন বেড়েছে, আমাদের প্রতিহত করার চেষ্টাও বেড়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতেই আমরা মিয়ানমার সীমান্তে টহল দ্বিগুণ করেছি। ওই সীমান্তে আমাদের নজরদারি সার্বক্ষণিকই ছিল। বিজিবি সদস্যদের টহল বৃদ্ধিতে এটা আরও জোরদার হয়েছে।

বিজিবি সদর দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ১৬ ও ফেব্রুয়ারিতে ১৩, অর্থাৎ প্রথম দুই মাসে মাত্র ২৯ জন মিয়ানমারের নাগরিক অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। পরবর্তীতে শুধু মার্চেই অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে ৫৬ জন। এছাড়া এপ্রিল মাসে (২৯ এপ্রিল পর্যন্ত) ৪৮ জনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিজিবির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই হিসাবে চলতি বছরে মোট ১৩৩ জন মিয়ানমারের নাগরিককে পুশব্যাক করেছে বা ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। যার মধ্যে শুধু মার্চ-এপ্রিলেই ফেরত পাঠানো হয়েছে ১০৪ জনকে।

সর্বশেষ বুধবার সাত অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীটির টেকনাফ ব্যাটালিয়ন। নাফ নদী দিয়ে নৌকায় করে আসা ওই সাত জনের সবাই ছিল পুরুষ। একাধিকবার চেষ্টা করেও অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে টেকনাফ বিজিবির (দুই নম্বর ব্যাটালিয়ন) কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে কক্সবাজার বিজিবির (৩৪ নম্বর ব্যাটালিয়ন) অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ জানান, সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নতুন করে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। যদিও জানুয়ারি থেকে গত ২১ এপ্রিল পর্যন্ত টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ৮০ এবং কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন ২০ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবির সদর দফতর।

এ ধরনের ‘পুশব্যাক’ দুঃখজনক উল্লেখ করে বাংলাদেশি মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন গণহত্যার মুখে জীবন বাঁচাতে দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল, আমরা কিন্তু মানবিকতায় জাগ্রত হয়ে তাদের সানন্দে আশ্রয় দিয়েছিলাম। আজও সে দেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, এখন পর্যন্ত সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে তা বলার কোনও সুযোগ নেই।

তার মতে, এরকম অমানবিক পরিস্থিতিতে বর্বরতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যারা আশ্রয় নিতে চায়, যেকোনও দেশেরেই উচিত মানবিকতার জায়গা থেকে তাদের আশ্রয় দেওয়া। তাদের ফিরিয়ে দেওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। মানবিক দিক বিবেচনা করে আশ্রয় দেওয়াই আমাদের জন্য শ্রেয়।

পহেলা ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থান পরবর্তী মিয়ানমার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ৩১ মার্চ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক ভাষ্য জানায়, সেখানকার ঘটনাপ্রবাহ মানুষকে দেশের অভ্যন্তরে ও সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে। সুরক্ষার জন্য পালিয়ে আসা সবাইকে আশ্রয় ও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এই অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আমরা জরুরি আহ্বান জানাচ্ছি।

বিজিবি পরিচালক (অপারেশন্স) কর্মকর্তা ফয়জুর বলেন, আমরা শুধু অবৈধ অনুপ্রবেশ আটকাচ্ছি। অনুপ্রবেশকারী বৈধ না অবৈধ সেটুকুই আমরা যাচাই করি। দুর্গম সীমান্ত এলাকা ও মিয়ানমারের পরিস্থিতির বিবেচনায় সবিস্তারে যাচাই-বাছাই করারও কোনও সময়-সুযোগ থাকে না। যে কারণে আমরা তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেই।

বিজিবি কর্মকর্তা ফয়জুর বলেন, মিয়ানমার সম্প্রতি জেলে আটকে থাকা অনেক নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে। তাদের অনেকের আত্মীয়-স্বজন বাংলাদেশে রয়েছে। যে কারণে তারা এদিকে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফের লেদার নতুন শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা মোস্তফা কামাল বলেন, কারামুক্তদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদের পরিবার আগে থেকেই বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। যে কারণে তারা এখানে আসতে চাচ্ছে। এছাড়া কিছু অসুস্থ রোহিঙ্গা নারীও এখানে চিকিৎসা নিতে আসছে শুনেছি। কারণ, সেখানে (রাখাইনে) তাদের চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই।

প্রসঙ্গত, নববর্ষ উপলক্ষে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ১৩৭ জন বিদেশিসহ মোট ২৩ হাজার ৪৭ বন্দিকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দিয়েছে বলে দ্য গার্ডিয়ান, ভয়েস অব আমেরিকাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গত ১৭ এপ্রিল খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-১৬) অধিনায়ক পুলিশ সুপার (এসপি) মো. তারিকুল ইসলাম বলেন,‘আমরা খবর পেয়েছি, সে দেশে কারামুক্ত হওয়া ছয়শ রোহিঙ্গা এপারে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে’।

তিনি জানান, চলতি বছরে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত ৩১ রোহিঙ্গাকে আটক করে উখিয়ায় ইউএনএইচসিআর-এর ট্রানজিট পয়েন্টে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ গত বুধবার মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের গজরবিলের বাসিন্দা কবির আহমদ ও তার স্ত্রী বেগম বাহার টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে শালবন রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা এদের হেফাজতে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ট্রানজিট পয়েন্টে ‘কোয়ারেন্টিনের’ জন্য পাঠায়।

‘এই দম্পতি ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সহিংসতার ঘটনায় সেনাবাহিনীদের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গিয়েছিল। সম্প্রতি কারামুক্ত হয়ে টেকনাফ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এপারে আশ্রয় নেয়। এর আগে তাদের স্বজনরা এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছিল’- বলেন এপিবিএন-১৬ অধিনায়ক।

‘অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো বিজিবিকে অবহিত করা হয়েছে। যাতে প্রয়োজনীয় এলাকায় তারা টহল জোরদার করতে পারে’, বলেন তিনি।

লেদার পুরনো শরণার্থী শিবিরের উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, রাখাইন থেকে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে একটি পরিবারে আমার ক্যাম্পে এসেছিল। পরে তারা কোথায় আশ্রয় নিতে চলে যায় তা আমি জানি না।

সীমান্তের ওপর নজর রাখেন এমন এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, ‘এখন প্রতিদিন কোনও না কোনও সীমান্তে দিয়ে মিয়ানমারের লোকজন অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝখানে প্রায় তিন বছর অনুপ্রবেশের ঘটনা বন্ধ থাকলেও গত ফ্রেব্রুয়ারির শুরুতে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের মাসখানেক পর নতুন করে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে।’

এসপি মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি, সেদেশে কারামুক্তি পাওয়া আরও ৬শ রোহিঙ্গা এপারে অনুপ্রবেশের সম্ভবনা রয়েছে। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে।’

265 ভিউ

Posted ৪:২৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০২ মে ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com