দীপক শর্মা দীপু(৪ সেপ্টেম্বর) :: মা বাবা বৃদ্ধ হলে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেন অনেকে। ঘরে পরিবারের সাথে রাখতে চাননা। বৃদ্ধ মা বাবাকে ঘরের বাইরে রাখতে পারলেই স্বস্তি পান সন্তানরা। সমাজের অপসংস্কৃতির এই সময়ে সাধারণ মানুষ এখনো তাদের মা বাবাকে সম্মান করেন, পরিবারের সাথে রাখতে ভালবাসেন। তেমন একজন মানুষ হচ্ছেন কৃষক মনির হোসেন হাওয়ালাদার। দীর্ঘ ২৩ বছর বাবাকে খুঁেজ ফিরেছেন।
অবশেষে ২৩ বছর পর বাবাকে খুঁজে পেয়ে খুশিতে আনন্দাশ্রু ঝরিয়েছেন ছেলে।
এমন দৃশ্য দেখে অনেকে কেঁদেছেন, নিজেরা অনুপ্রাণিত হয়েছেন বৃদ্ধ বাবার প্রতি ছেলের এমন ভালবাসা দেখে। আর ২৩ বছর পর হারিয়ে যাওয়া মানুষটিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার মহৎ কাজটি সমন্বয় করেছেন বাংলাদেশ রেডক্রিস্টে সোসাইটি কক্সবাজার ইউনিটের পারিবারিক যোগাযোগ পুন: স্থাপনকারি দল।
৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮ টার দিকে কক্সবাজার রেডক্রিসেন্ট অফিসে ২৩ বছর পর পিতা পুত্রের মিলন হয়। বাবাকে দেখে ছিনতে পেরে কেঁদে বুকে জড়িয়ে ধরেন। বাবাও অবাক দৃষ্টিতে ছেলেকে দেখেন।
ছেলে মনির হোসেন হাওলাদার বলেন, তাদের বাড়ি চাঁদপুর জেলা সদরের মুন্সির হাট বাজারের হাসাদি গ্রামে। তার বাবা আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার নিজের চায়ের দোকান পরিচালনা করতেন। তার বয়স যখন ৭ বছর তখন তার বাবা হঠাৎ হারিয়ে যান। বাবা হারিয়ে যাওয়ার কারনে তারা দুইভাই আর স্কুলে পড়ালেখা করতে পারেননি। তারা চাষাবাদ করতেন। এর ফাঁকে ফাঁকে তারা বাবাকে খুঁজেন।
আত্মীয় স্বজনসহ গ্রামবাসী তাদের শান্তনা দিয়ে বলেন, এতদিনে হয়তো তোদের বাবা মারা গেছে। আর কষ্ট পেয়ে কি হবে। কিন্তু না তারা বিশ^াস করেছিল তাদের বাবা বেঁচে আছেন। সেই আশা থেকে বাবাকে ২৩ বছর খুঁজে ফেরা।
এদিকে ১০ দিন আগে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে কোন একব্যক্তি ৭০ বছরের বৃদ্ধ অসুস্থ্য আবদুর রাজ্জাক হাওয়ালাদারকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে রেখে চলে যান। একটু সুস্থ্য হয়ে উঠলেও তিনি কথা বলতে পারেননা। এর কারনে তার ঠিকানা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। পরে হাসপাতালের কর্মকর্তা সালমান খান বাপ্পা রেডক্রিসেন্টকে খবর দেন।
রেডক্রিসেন্টের পারিবারিক যোগাযোগ পুন: স্থাপন দলের মাঠ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান রাব্বী তার পরিবারের ঠিকানা খোঁজার চেষ্টা করেন। বৃদ্ধ হাওলাদার কথা বলতে না পারলেও ঠিকানা হাতে লিখে দিয়েছেন। তবে গ্রামের ঠিকান ঠিক বললেও জেলা কুমিল্লা লেখায় ( আগে তখন চাঁদপুর কুমিল্লার জেলার আওতায় ছিল।) ঠিকানা খোঁজা কঠিন হয়।
পরে ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার পর চাঁদপুর রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের সহায়তায় আত্মীয় স্বজনকে খবর দেয়া হলে তার বড় ছেলে মনির হোসেন হাওয়ালাদার, হারিয়ে যাওয়া বৃদ্ধের ভাই শহিদুল্লাহ হাওয়ালাদার, বাল্য বন্ধু মকবুল হোসেন ও ভগ্নিপতি নুরুল আমিন চাঁদপুর থেকে কক্সবাজারে ছুটে আসেন। স্ত্রী আয়াতুর নেছা অসুস্থ্য হওয়ার কারনে কক্সবাজারে আসতে পারেননি।
কক্সবাজার শহরের বিজয় সরণীস্থ রেডক্রিসেন্ট অফিসের কর্মকর্তারা আত্মীয় স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেন হারিয়ে যাওয়া বৃদ্ধ আবদুর রাজ্জাক হাওয়াদারকে। শুধু তাই নয় তাদের চাঁদপুরে যাওয়ার খরচ দেয়া হয়।
এসময় রেডক্রিস্টে সোসাইটির কক্সবাজার ইউনিটের সহ সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছার জানান, রেডক্রিসেন্ট ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে হারিয়ে যাওয়া ১৬ জন মানুষকে তাদের পরিবারে ফিরিয়ে দিয়েছে। এই ছাড়া শত শত রোহিঙ্গাদের তাদের পরিবারের সাথে সংযোগ করে দেয়া হয়েছে। এই জন্য রেডক্রিসেন্ট এর আওতায় একটি দল কাজ করছে।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রেডক্রিসেন্ট কক্সবাজার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্টের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, ডেপুটি পরিচালক জয়নাল আবেদিন,এটিএম মহসিন, নির্বাহী সদস্য জহিরুল ইসমলা , জয়নুল আবেদিন ও ইউনিট অফিসার ইয়াহইয়া বখতিয়ার।
Posted ২:১৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta