কক্সবাংলা রিপোর্ট :: ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটমুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলেই বদলে যাবে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এরই সব সংশয় কাটিয়ে এ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প একধাপ এগিয়ে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। জাপানের জাইকার মারুবেনি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সর্বশেষ দুইদফা বৈঠক করে তারা এ মহাসড়কে পিপিই প্রায় সম্প্ন্ন করেছে। আর সর্বশেষ সৌদি সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের আগ্রহ দেখায় এর সম্ভাবনা আরো একধাপ এগিয়েছে।মূলত পর্যটন এলাকা কক্সবাজার, মহেশখালীর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র ও প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করতে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন,কক্সবাজার-চট্টগ্রাম ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে সৌদি সরকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ২৮ নভেম্বর রবিবার দুপুরে সংসদ ভবন অফিস কক্ষে সৌদি আরবের পরিবহন এবং লজিস্টিক সার্ভিস মন্ত্রী প্রকৌশলী সালেহ নাসের এ. আল-জাসেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের জানান, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব দিলে সৌদি আরবের পরিবহন ও লজিস্টিক সার্ভিস মন্ত্রী প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তথ্য চেয়ে অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
জানা যায়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের আঞ্চলিক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সেতু প্রতিস্থাপন, ইন্টারসেকশন, বাজার, লেভেল ক্রসিং, রিজিড পেভমেন্ট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে কুমিল্লা (ময়নামতি) ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উন্নয়ন ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে। শিকলবাহা ক্রসিং থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫৯ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার লিংক রোড থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৭৬ কিলোমিটারসহ মোট ২৩৫ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এডিবির অর্থায়নে সুইডিশ কনসালট্যান্ট নামে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান উন্নীতকরণ কাজের জরিপ করেছে।
সূত্র জানায়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ সম্ভাব্য প্রাথমিক প্রকল্প ব্যয় থেকে ৯০০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা কমিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১২ হাজার ৯০০ কোটি টাকায় প্রস্তাবনা তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল। প্রকল্প প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলেও তা সরকারি অর্থায়নে না পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে বাস্তবায়ন হবে এ নিয়ে বহু বৈঠক হয়।
২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধনের সময় মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের ঘোষণা দেন। এরপরই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ১৩৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীতকরণে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকায় প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করেছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এডিবির অর্থায়নে ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সুইডিস কনসালটেন্ট নামে একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজের জরিপ শেষ করে। এরপর চার বছরে তিনবার প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ শেষে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। জরিপের পর প্রথম দফায় ২২৫ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। এতে শুধু নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, গত বছর প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজারের সমাবেশে এ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের ঘোষণা দিলে এটির ১৩৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীতকরণে ফের প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা।
মহাসড়কের আগে গৃহীত ২২৫ কিলোমিটারের পরিবর্তে পটিয়া মইজ্যারটেক থেকে কক্সবাজারের রিংরোড পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে সওজের সদর দফতরে পাঠানো হয়েছিল।
পটিয়া মইজ্যারটেক থেকে কক্সবাজার রিংরোড পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার সড়ক ফোর লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে সড়কটি হবে প্রায় ৮২ ফুট। সড়কের উভয় দিকে ২৪ ফুট চওড়া এবং মধ্যে ডিভাইডার থাকবে। এর পাশে উভয় দিকে ১২ ফুট করে হালকা যানবাহন চলাচলের সুবিধাও থাকছে। ফোর লেন প্রকল্পে চট্টগ্রাম অংশে ৬৮ কিলোমিটার ও কক্সবাজার অংশে রয়েছে ৬৮ কিলোমিটার মহাসড়ক।
ফোর লেনে উন্নীতকরণে দুই জেলায় ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে ৩১৫ দশমিক ৮৯ হেক্টর। এ ছাড়া, এ প্রকল্পে রয়েছে পিসি গার্ডার সেতু ৩৩টি, কালভার্ট ১৩৯টি, ফুটওভার ব্রিজ ১৩টি ও ফ্লাইওভার দু’টি। ফ্লাইওভারের একটি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাটে, অন্যটি হবে কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার চিরিংগায়।
তৃতীয় দফায় ১২ হাজার ৯০০ কোটি টাকায় নতুন প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এতে চার লেনে উন্নীতকরণে ব্যয় কমেছে ৯০০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
অন্যদিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের পাঁচটি যানজট এলাকা চিহ্নিত করে এসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব স্থানে অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগেই থাকে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এসব বাইপাস নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ প্রকল্পের বর্তমান পিডি ও সওজের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আফতাব হোসেন খান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে গত মাসের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
Posted ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৯ নভেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta