শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজার-ঢাকা সরাসরি রেল সংযোগ স্থাপনে উদাসীনতা : ৩টি বড় বাধা চিহ্নিত

শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২
320 ভিউ
কক্সবাজার-ঢাকা সরাসরি রেল সংযোগ স্থাপনে উদাসীনতা : ৩টি বড় বাধা চিহ্নিত

কক্সবাংলা রিপোর্ট :: সরকারের অগ্রাধিকার অবকাঠামো প্রকল্পের অন্যতম দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্প। আগামী বছরের মধ্যে প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এ প্রকল্পকে সামনে রেখে পথিমধ্যের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। ফলে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হলেও প্রকল্পটির প্রকৃত সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘ সময়।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরও কার্যকর ফল পেতে সময় লাগবে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সবচেয়ে বড় বাধা তিনটি। এর মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী নদীতে নতুন সেতু নির্মাণ, ষোলশহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ সংস্কার ও ফৌজদারহাট থেকে ষোলশহর পর্যন্ত বাইপাস রেলপথ নির্মাণ।

আগামী বছরের জুনের মধ্যে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিনটি বড় বাধা মোকাবেলায় রেলওয়ে কার্যকর কোনো সমাধানে পৌঁছতে না পারায় প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও সুষ্ঠু ট্রেন পরিচালনা নিয়ে বড় সংকটে পড়বে বলে মনে করছে খাতসংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগের অন্যতম বাধা কালুরঘাট সেতু। কর্ণফুলী নদীর ওপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত প্রায় শতবর্ষী সেতুটি দিয়ে ভারী ইঞ্জিন ও কোচের ট্রেন চলাচল করতে পারবে না। ২০১৫ সালের দিকে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার পরও কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন একটি সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে রেলওয়ে কালক্ষেপণ করেছে। যার কারণে এখন পর্যন্ত পুরনো সেতুর পরিবর্তে নতুন সেতু নির্মাণের কাজই শুরু করা যায়নি।

কয়েক বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক সহায়তায় একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি, স্থানীয় বাসিন্দাদের রেলওয়ে কাম সড়ক সেতু নির্মাণের দাবির কারণে সেটি পিছিয়ে যায়। বর্তমানে নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে দাতা সংস্থার সহযোগিতা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে রেলওয়ে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের একাধিক নথিতে উঠে এসেছে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণে আরো অন্তত সাত-আট বছর সময় লাগবে। অর্থাৎ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে শতবর্ষী সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। যদিও বুয়েটের সহায়তায় পুরনো সেতুটি ভারী ইঞ্জিন ও কোচ চলাচলের উপযোগী করে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। ৭ কোটি টাকার চুক্তিতে বুয়েটের পরামর্শকরা রেলওয়ের সেতুটি সংস্কারে কাজ শুরু করবেন। বুয়েটের পরামর্শে সেতুটি দীর্ঘমেয়াদে সংস্কারে রেলওয়েকে বড় অংকের বিনিয়োগে যেতে হচ্ছে।

কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলে আরেকটি বড় বাধা হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথ। সিঙ্গেল লাইনের মিটার গেজ রেললাইনটি ২০১৮ সালের দিকে সংস্কারও করা হয়। কিন্তু এর পরও বর্তমানে এ রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলাচল করে ২০-২৫ কিলোমিটার গতিবেগে। ২০২৩ সালের জুনের পর কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু করতে হলে এ রেলপথটি সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত সংস্কারের জন্য কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।

রেলওয়ে ওয়ার্কিং টাইম টেবিল নং-৫২-এর তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ৪৭ দশমিক শূন্য ৪ কিলোমিটার। এ রেলপথের চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ষোলশহর স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনের নির্ধারিত গতিবেগ ৫০ কিলোমিটার। যদিও এ পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করে ২৫-৩০ কিলোমিটার গতিতে। অপরদিকে ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ট্রেনের গতিবেগ নির্ধারিত রয়েছে ৩০ কিলোমিটার। অথচ চালকরা এ পথে ট্রেন চালায় মাত্র ২০ কিলোমিটার গতিতে।

কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরুর আগে রেলওয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ৪৭ কিলোমিটারের রেলপথটি সংস্কারের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় মাত্র এক বছরের মধ্যে রেলপথটির সংস্কারকাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করা যাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দিহান রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে আরেক সংকট হলো চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন। বিদ্যমান রেলওয়ে ট্র্যাকের এ অসামঞ্জস্যতার কারণে ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেন চলাচলে ফৌজদারহাট থেকে একটি বাইপাস রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ পরিকল্পনার মাঠ পর্যায়ের কোনো কাজ দৃশ্যমান নয়। এতে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে ট্রেন যেতে অন্তত এক-দেড় ঘণ্টা বাড়তি সময়ক্ষেপণ হবে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অবশ্য ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচলের জন্য রেলওয়ের একাধিক পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়নে অন্তত ১০ বছর সময় লাগতে পারে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্প প্রস্তুতিমূলক সুবিধার জন্য কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের একটি সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয় ২০২০ সালে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ২২২ কোটি ৬৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা সহায়তায় আটটি বড় প্রকল্পের অন্যতম ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মিটার গেজ রেলপথ ও চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ ডুয়াল গেজে রূপান্তর। এছাড়া ফৌজদারহাট থেকে ষোলশহর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার বাইপাস লাইন নির্মাণ, মহেশখালী ও মাতারবাড়ীতে রেলসংযোগ করা হবে। কর্ণফুলী নদীতে নতুন সেতু নির্মাণে এরই মধ্যে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক অর্থায়নে রাজি হয়েছে। বাকি সাতটি প্রকল্পের জন্য প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার ডিপিপি তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্প প্রস্তুতিমূলক সুবিধার জন্য কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের পরিচালক (সংগ্রহ) মো. আবিদুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণের সাতটি প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি ও অর্থায়ন নিশ্চিত করার কাজ চলছে। কয়েকটি প্রকল্পে এডিবি অর্থায়নে রাজি হওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাবে। তবে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক অর্থায়ন করবে। বড় অংকের অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা থাকায় ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ বলে জানিয়েছেন তিনি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা বলেন, ঢাকা-কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্পটি শুধু যাত্রী পরিবহনের প্রয়োজনে হবে না। রেলওয়ে এ রেল রুটকে নিয়ে বড় পরিকল্পনা করছে। যার কারণে সব প্রকল্প অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ।

রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে অনেক আগেই সেতু নির্মাণ ও রেলপথ সংস্কারের কাজগুলো সম্পন্ন করতে উদ্যোগ নিতে পারত। কিন্তু উদাসীনতা ও গোছানো পরিকল্পনার অভাবে সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সত্ত্বেও একটি বড় ক্ষত থেকে যাবে। যথাসময়ে উদ্যোগ না নেয়া ছাড়াও রেলের দক্ষতার অভাবে রেলপথ চালুর পরও এর প্রকৃত সুফল বঞ্চিত হবে যাত্রী, ব্যবসায়ী ও সরকার।

এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে প্রকল্পের নির্মাণ সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

320 ভিউ

Posted ২:৫৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০২ জুলাই ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com