কক্সবাংলা রিপোর্ট(৭ মে) :: কক্সবাজার সমুদ্র উপকূেলর বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশকারী প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গাকে কোয়ারেনটাইনে ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (৬ মে) দিবাগত রাতে ধরা পড়ার পর বৃহস্পতিবার (৭ মে) তাদের ভাসানচরে পাঠানো হয়। এর আগে গত ৩ মে প্রথম দফায় ৩০ জন রোহিঙ্গাকে কোয়ারেনটাইনে ভাসানচরে পাঠানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আক্রমণে রোহিঙ্গারা যখন দলে দলে বাংলাদেশের সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে পালিয়ে আসে।তখন মানবিক কারণে তাদের জায়গা দিয়েছিল। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এখন নতুন কাউকে নিতে রাজি নয় বাংলাদেশ।
সূত্রে আরও জানা যায়,করোনা মহামারিতে মিয়ানমার বা মালয়শিয়া ফেরত রোহিঙ্গারা যদি বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়েন, তবে তাদের আশ্রয় দেয়া সম্ভব এবং সেটি হবে ভাসানচরে।’
সম্প্রতি ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান একটি বিদেশী সংবাদ মাধ্যকে জানান, ‘‘এখন থেকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি শরনার্থী শিবিরের বাইরে কোনো রোহিঙ্গাকে পাওয়া গেলেই ভাসানচরে পাঠানো হবে৷’’ ‘‘সম্প্রতি কক্সবাজারে উদ্ধার ২৯ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নৌবাহিনী নিয়ে গেছে৷ তারা সেখানে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানেই থাকবে৷ কোনো ভলান্টারি অর্গানাইজেশন না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই৷ সরকারই তাদের সবধরনের সহায়তা করবে৷ সেখানে থাকা, চিকিৎসা, পানি ও খাদ্যের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে৷ সেখানকার আবাসন সুবিধা সুপার টাউনের মত৷’’
আরো রোহিঙ্গা শরনার্থীকে ভাসানচরে নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের নির্দেশনা হলো ক্যাম্পের বাইরে যাদেরই ডিটেক্ট করা হবে তাদেরই ভাসানচরে পাঠানো হবে৷ এখানে তারা সরকারি ব্যবস্থাপনায়ই থাকবে৷ সংখ্যা বাড়লে তখন আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে কথা বলব৷’’
জানা যায়, গত মাসে একটি রোহিঙ্গা দল মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়ে সেখানে যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। পরে কক্সবাজারের শরনার্থী শিবিরে ৩৯২ জনকে আশ্রয় দেয়। এরপর বঙ্গোপসাগরে ভাসমান আরেকটি জাহাজে প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গাকে জাতিসংঘ ও অন্যান্য কয়েকটি দেশ আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ জানালে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতির মধ্যে দ্বিতীয় দফায় এই রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে হলো বাংলাদেশকে।
প্রসঙ্গত,২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে নৃশংস সামরিক অভিযানের পর দেশটি ছেড়ে আসা প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ কক্সবাজারে আশ্রয় নিলে এই আবাসন প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের খরচ বহন করা হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। রাখাইনে এর আগে সহিংসতার সময় পালিয়ে বাংলাদেশে আসা তিন লাখ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এই নতুন সাড়ে সাত লাখ মানুষ যোগ দেন।এনিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা।
জানা যায়,ভাসানচর নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার একটি দ্বীপ৷ মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা এই দ্বীপে ১ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয়ের জন্য সরকার ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা খরচ করে স্থাপনা তৈরি করে৷ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এরইমধ্যে সেখানে অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে৷ সেখানে এক হাজার ৪৪০টি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে৷ নির্মাণ করা হয়েছে ১২০টি চারতলা আশ্রয়কেন্দ্র৷ মূল ভূখন্ড থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ভাসানচরকে বাঁচাতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে৷
তবে শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিরোধিতা করে আসছিল৷
Posted ৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ মে ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta