কক্সবাংলা ডটকম(৩০ জুলাই) :: আরও একটি ঈদ রাত পোহানোর অপেক্ষায়। ত্যাগ আর উৎসর্গের আদর্শে মহিমান্বিত পবিত্র ঈদুল আজহা আগামীকাল শনিবার। এবারের ঈদ এসেছে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। করোনা মহামারির সঙ্গে বন্যার আঘাতে বিপর্যস্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অগণিত মানুষ। তাদের জীবনের ওপর নেমে আসা এ দুঃসময়ের অন্ধকার কবে কাটবে, তাও অজানা। উৎসর্গের বাণী নিয়ে আসা কোরবানির এই ঈদে করোনা, বন্যায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
রমজানের ঈদের মতো দিন গোনার আনন্দময় অপেক্ষা নেই ঈদুল আজহায়। আরও ৯ দিন আগেই জানা হয়ে গেছে ১ আগস্ট, শনিবার কোরবানির ঈদ। এবারের রোজার ঈদের মতো এই ঈদের সঙ্গেও আসেনি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়া চিরায়ত খুশির আমেজ। গত মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারি তিন হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে। লাখো মানুষের জীবিকা ছিনিয়ে নিয়েছে। রোজগার হারানো মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হয়েছে। সঞ্চয় ভেঙে, ত্রাণে কিংবা ধারদেনায় যাদের জীবন চলছে তাদের ঘর থেকে ঈদ দূর আকাশের চাঁদের মতোই দূরের বিষয় হয়ে গেছে।
মাসখানেক ধরে চলা বন্যায় অর্ধকোটি মানুষ আক্রান্ত। গ্রামের পর গ্রাম, জনপদ, বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। লাখো মানুষ আশ্রিত বাঁধে কিংবা শিবিরে। তাদের জীবনে এবারের জিলহজের চাঁদ ঈদ আনেনি। ঈদগাহ, মসজিদে থৈ থৈ পানি। ঈদের নামাজও হয়তো তাদের ভাগ্যে জুটবে না।
তবুও জীবনের গতি থেমে থাকে না কোনো বাধাতেই। যত দুর্যোগই থাকুক, ঈদ বলে কথা! সবকিছুর পরও এই দিনটিতে একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানাবে মানুষ। সাধ্যমতো দান, খয়রাত, কোরবানির মাংস বিলি, খাওয়া-দাওয়া হবে। দুঃসহ দিনে কিছুটা হলেও আনন্দের সুযোগ তৈরি হবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে ঈদুল আজহার ত্যাগের শিক্ষায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়াও দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ শীর্ষ রাজনীতিকরা।
ধর্মীয় চিন্তাবিদরা বলেছেন, কোরবানির ঈদ যতটা না আনন্দের তার চেয়ে বেশি উৎসর্গের। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, চার হাজার বছর আগে আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আল্লাহর কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর এই ত্যাগের মনোভাবের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর মুসলমানরা কোরবানি করে থাকেন।
শোলাকিয়া ঈদগাহর খতিব মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসঊদ বলেছেন, ঈদ মানে খুশি। কোরাবানির ঈদ একই সঙ্গে ত্যাগের। যাদের হারিয়েছি বন্যায়, করোনায় তাদের স্মরণ করতে, তাদের জন্য দোয়া করতে হবে। যারা অসহায় বিপদগ্রস্ত তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কোরবানি মানে শুধু পশু জবাই করে ভূরিভোজ নয়। কোরবানি মানে নিজেকে সর্বান্তকরণে উৎসর্গ করা। এই দুঃসময়ই নিজেকে উৎসর্গের সর্বোত্তম সময়।
কোরবানির মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করার বিধান রয়েছে। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো দিন পশু কোরবানি দেওয়া যায়। সে হিসেবে আগামী রবি ও সোমবারও কোরবানি করা যাবে।
তবে যে খামারি সারা বছর কোরবানির অপেক্ষায় থাকেন এবার তাদেরও দুর্দিন। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেকেই কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন। পশুর হাটে স্বাস্থ্যাবিধি মানার প্রবণতা যেমন কম, গরু, ছাগলের চাহিদাও কম। ক্ষেত্রবিশেষে দামও কম। ফলে খামারিরা পড়েছেন লোকসানের মুখে। কয়েক বছর ধরে অনলাইনে গরু, ছাগল বিক্রি হচ্ছে। এবার অনলাইনে যতটা বিক্রির আশা ছিল, সেটাও হয়নি বলে জানা গেছে। করোনার কারণে সবাই আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন। যিনি আগে একাই একটা গরু কোরবানি দিতেন, তিনি এবার কয়েকজনের সঙ্গে ভাগে দিচ্ছেন।
প্রতি বছর ঈদে শহর ছেড়ে স্বজনের কাছে গ্রামে ফেরেন কোটি মানুষ। পথে যানজট, ভাঙা সড়কে যত দুর্ভোগ হোক তবু ঘরে ফেরা চাই। করোনার কারণে ঈদুল ফিতরের সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকায় স্মরণকালে প্রথমবার ঈদযাত্রা হয়নি। এবার গণপরিবহন চালু থাকলেও অনেকেই বাড়ি যাচ্ছেন না। আবার কাজ হারিয়ে অনেকে আগেই একেবারে গ্রামে চলে গেছেন। করোনার কারণে এবারও ঈদগাহের পরিবর্তে ঈদ জামাত হবে মসজিদে। রাজধানীতে প্রধান ঈদের জামাত হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৭টায়। রমজানের ঈদে রাজধানীর ছাদে ছাদে ঈদ জামাত হয়। এবারও একই আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।
Posted ৪:২৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ৩১ জুলাই ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta