শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে গুঞ্জন

রবিবার, ৩১ মার্চ ২০১৯
148 ভিউ
খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে গুঞ্জন

কক্সবাংলা ডটকম(৩০ মার্চ) :: দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রশ্নে নতুন করে আবার চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। গুঞ্জন উঠেছে, চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। সূত্র জানান, দীর্ঘদিন ধরে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দেখভাল তথা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষও রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছে।

কেউ কেউ বলছেন, দুদকের মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আইনমন্ত্রী বলছেন, রাজনৈতিকভাবে নয়, খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব আইনিভাবেই। খালেদার আইন-জীবীদের মতে, আইনিভাবে মোকাবিলা করে লাভ নেই, সরকারের সদিচ্ছা থাকলেই কেবল খালেদার মুক্তি সম্ভব।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রের আইনজীবীরা চাইলেই খালেদার মুক্তি সম্ভব। বেগম খালেদার আইনজীবীদের হতাশ হলে চলবে না। কারণ, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামিন পেয়েছেন এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে খালেদা অসুস্থ, তাঁর শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। খালেদাকে প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করে চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে কিছুদিন ধরে আপত্তির কারণে তাঁকে সেখানে নিতে পারছে না কারা কর্তৃপক্ষ।

নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে বেগম জিয়ার জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক হিসেবে ডা. রিফাত সুলতানাকে রাখা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছেন আরেক কারা চিকিৎসক ডা. মাহমুদুল হাসান শুভ। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেখভালের জন্য সহযোগী হিসেবে দুজন ডেপুটি জেলার (একজন পুরুষ একজন মহিলা), চারজন মহিলা কারারক্ষীকে রাখা হয়েছে। এর বাইরে সেবক হিসেবে রয়েছেন খালেদা জিয়ার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারাগারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে আমরা সবসময় টেনশনে থাকি। তাঁর জন্য আটজনের একটি টিম সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে। আবার নিরাপত্তার বিষয়টিও আমাদের নিশ্চিত করা লাগে। তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা বলবৎ করার ফলস্বরূপ এলাকার মানুষকেও কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। জানা গেছে, এখনই জামিনে মুক্তি পেতে হলে খালেদা জিয়াকে অন্তত চারটি মামলায় জামিন নিতে হবে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ছাড়া বাকি মামলা দুটি ধর্মীয় উসকানি ও মানহানির।

এ দুই মামলায় সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।ধর্মীয় উসকানির মামলায় ওয়ারেন্টসহ জামিন শুনানির জন্য ২৪ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে। আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির মামলায় ৩০ এপ্রিল গ্রেফতার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালত খালেদাকে পাঁচ বছর সাজা দিয়েছিল। তবে হাই কোর্টে এসে সাজা বেড়ে হয়েছে ১০ বছর জেল। তাঁর আইনজীবীরা এ মামলায় আপিলের সঙ্গে জামিন আবেদনও করেছেন।

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালত সাত বছরের সাজা দিয়েছে খালেদা জিয়াকে। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জামিন চাওয়া হয়েছে এ মামলায়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে মামলা রয়েছে ৩৬টি। গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আন্দোলন করে নয়, একমাত্র আইনি প্রক্রিয়ায়ই খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, যা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কখনই পারেনি। এখন দেশে আর প্রতিহিংসার কোনো রাজনীতি হয় না। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তাঁর আইনজীবীদের আইনিভাবেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

একাধিক সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে ভালো চিকিৎসার জন্য প্যারোলের চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাদের কাছে এ মুহূর্তে বিএনপির কারাবন্দী নেত্রীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। সেজন্য দলের একজন প্রভাবশালী নেতা ও খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের সম্মতিতে প্রতিনিধির মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার সঙ্গে। সেসব বৈঠকে যথেষ্ট অগ্রগতিও হয়েছে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্রে জানা গেছে।

অন্য একটি সূত্র বলছেন, বিদেশে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে প্যারোল দিতে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক আগেই আভাস দেওয়া হলেও বিএনপির ওই অংশটি তাতে সাড়া দেয়নি। খালেদা নিজেও প্যারোল নিতে নারাজ। তিনি বিদেশে চিকিৎসা নিতে চান না। খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি সম্ভব কিনা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়া তো রাজনৈতিক বন্দী নন যে নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। তিনি দুর্নীতির মামলায় দি ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তাঁকে মুক্তি পেতে হলে আদালতের মাধ্যমেই পেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাঁর শারীরিক অবস্থা ও বিস্তারিত বিষয় উল্লেখ করে আদালতে আবেদন করতে পারেন। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই চূড়ান্ত হবে। রাজনৈতিকভাবে এখানে কোনো কিছু করার সুযোগ দেখছেন না এই সাবেক আইনমন্ত্রী।

আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক  বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ চাইলেই যে কোনো আসামির জামিন সম্ভব। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির আপিল মামলা চলাকালে আপিল কোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে এমন বহু উদাহরণ আছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণেও খালেদা জামিন পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর আইনজীবীদের বিষয়টি আদালতের কাছে যথাযথভাবে উত্থাপন করতে হবে।তাঁর ব্যাপারে সরকার বলছে, এটা আদালতের ব্যাপার। তবে তারা কী বলছেন তাও তো প্রধান ব্যাপার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে আমরাও নানা আলোচনা শুনছি। আমরা তো সব সময়ই তাঁর মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছি, মুক্তির জন্য আদালতে আদালতে ঘুরছি। কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছি না। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখিনি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলেই কেবল খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব বলে মনে করেন জয়নুল আবেদীন।

প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আইনে যা আছে : সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে নজরদারিতে রেখেই শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লোকালয়ে মুক্তভাবে চলাফেরার সুযোগ দেওয়াকেই এক কথায় প্যারোলে মুক্তি বলা যায়। দ প্রাপ্ত বা অভিযুক্ত আসামিকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়াবিষয়ক অধ্যাদেশটি হচ্ছে- ‘প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স’।

এ অধ্যাদেশের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, আগে দি ত হননি এমন কোনো ব্যক্তি যদি দুই বছরের কম কোনো দে  দি ত হন এবং যদি তাঁর বয়স, স্বভাব, শারীরিক, মানসিক অবস্থা, অপরাধের ধরন ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে আদালত সঠিক মনে করে তবে তাঁকে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য প্যারোলে মুক্তির রায় দিতে পারে। একই অধ্যাদেশের ৫(১) ধারায় আছে, কোনো পুরুষ যদি দন্ড বিধির ৬ ও ৭ অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত কোনো অপরাধ বা ২১৬এ, ৩২৮, ৩৮২, ৩৮৬, ৩৮৭, ৩৮৮, ৩৮৯, ৩৯২, ৩৯৩, ৩৯৭, ৩৯৮, ৩৯৯, ৪০১, ৪০২, ৪৫৫ ও ৪৫৮ ধারায় বর্ণিত অপরাধ না করে থাকেন, কিংবা যদি তিনি মৃত্যুদন্ড  বা যাবজ্জীবন দন্ডে দন্ডিত না হন, তাহলে তার বয়স, স্বভাব, শারীরিক, মানসিক অবস্থা, অপরাধের ধরন ইত্যাদি বিচার করে এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে অন্তর্বর্তী মুক্তির আদেশ দিতে পারে আদালত। নারীদের ক্ষেত্রে শুধু মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত কেউ এ ধারার আওতার বাইরে।

প্যারোলে মুক্তির নজির : ২০১০ সালের তারেক রহমান বনাম রাষ্ট্রপক্ষ ও অন্যান্য মামলায় আসামিকে বিচারকাজ শেষ হওয়ার আগেই অসুস্থতার কারণে তারেক রহমানকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার আদেশ হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ২০০৮ সালে আটকাবস্থা থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশ গিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে আলোচিত তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ডের প্রধান অভিযুক্তও দুই ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন তার মায়ের লাশ দেখার জন্য।

148 ভিউ

Posted ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ৩১ মার্চ ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com