বিশেষ প্রতিনিধি(২৮ আগস্ট) :: দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়া কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাংয়ে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মা-মেয়ের ওপর বর্বরতার ঘটনার প্রকৃত রহস্য বের করতে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিতে পারেননি। প্রকৃত ঘটনা বের করতে তদন্ত কমিটি আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য চকরিয়ার এসি ল্যান্ড মো. তানভীর হোসেন বলেন, ‘গরুর বাছুর চুরির মামলায় নির্যাতিতা মা, দুই মেয়েসহ পাঁচজন জেলহাজতে ছিলেন। তন্মধ্যে তিন নারী জামিনে মুক্ত হয়ে নিজ এলাকায় ফিরে গেছেন। তাছাড়া দুই পুরুষ সদস্যও বর্তমানে জেলে রয়েছেন। তাই ঘটনার শিকার সবার কাছ থেকে আলাদা আলাদা বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে তদন্তের অংশ হিসেবে।’
এসি ল্যান্ড চকরিয়া আরো বলেন, ‘এজন্য আরো সময়ের প্রয়োজন রয়েছে, প্রকৃত ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে। তাই আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় নিয়েছি।’
তিনি আরো জানান, জামিনে মুক্ত নির্যাতিত তিন নারীর সঙ্গে কথা বলার জন্য তাদেরকে ডাকা হবে এবং তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে নোটিশও দেওয়া হবে তাদের। অপর দুই পুরুষ সদস্যকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জেলগেটে। এজন্য যথাযথ দাপ্তরিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
মামলা থেকে অব্যাহতি এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবিতে ডিসিকে স্মারকলিপি :
চেয়ারম্যানকে মামলা থেকে অব্যাহতি এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বর্বরতায় জড়িত প্রকৃত দোষিদের শাস্তি দাবি করে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতি চকরিয়া শাখা স্মারকলিপি প্রদান করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনকে। এই ঘটনায় চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম সম্পৃক্ত নন বলেও দাবি সমিতির।
সমিতির সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা, মহসিন বাবুল, শওকত ওসমান, দিদারুল হক সিকদার, গোলাম মোস্তফা কাইছার, জালাল আহমদ সিকদার, মক্কী ইকবাল হোসেন সহ সংগঠনটির ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা কক্সবাজারে সাংবাদিক সম্মেলনে এনিয়ে বক্তব্য দেন।
সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ঘটনার সময় এলাকায় ছিলেন না চেয়ারম্যান মিরান। এর পরও যদি জন প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা এবং বেপরোয়াভাবে সম্মানহানি করা হয় তাহলে অপরাধীরা মাথাচাড়া দেবে। এই পরিস্থিতিতে আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করাসহ চেয়ারম্যান মিরানকে মামলা থেকে অব্যাহতি এবং নারীদের প্রতি যারা অমানবিক আচরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দুই কিলোমিটার জুড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ :
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত মহাসড়কের হারবাংয়ের প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে হাজারো নারী-পুরুষ। এ সময় মহাসড়কের দুইদিক থেকে আসা যানবাহনগুলোকে চলতে হয় ক্ষিপ্রগতিতে। হারবাংয়ের সচেতন জনতার ব্যানারে এই কর্মসূচী পালিত হয়।
মানববন্ধনে হারবাংয়ের সাধারণ মানুষ ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। তন্মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবু মুছা, সদস্য আজিম উদ্দিন, অধ্যাপক সুলতান আহমদ, হারবাং ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি জাহেদুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা নাঈম উদ্দিন, চকরিয়া-পেকুয়া ছাত্রফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসাইন, ছাত্রনেতা রিফাত, বোরহান, নোমান, মোক্তার আহমদ প্রমূখ।
এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াছ, সৈয়দ নূরসহ পরিষদের সকল সদস্য, আলেম-ওলেমারা উপস্থিত ছিলেন।
হুমকি-ধামকি বা টাকা দিয়ে এসব মানুষকে আনা হয়েছে কী-না এমন প্রশ্নে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কৃষক, কৃষাণীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছায় রাস্তায় নেমেছি, নির্দোষ চেয়ারম্যানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিতে। দোষ না করেও যদি এভাবে কেউ মামলার আসামী হয়ে যায়, তাহলে গরু চোরের উপদ্রব বেড়ে যাবে। এতে আমরা পাহারা দিয়েও পালিত পশু রক্ষা করতে পারবো না।’
Posted ৪:৪৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৮ আগস্ট ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta