কক্সবাংলা ডটকম(৫ সেপ্টেম্বর) :: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। এ কারণে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে যাবেন।
প্রায় দুই বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। এই বছরের অধিবেশন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, বিশ্ব এখন কোভিড-১৯ অতিমারি ও তার বহুমাত্রিক প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
বিশ্বের করোনা সংক্রমণের আগে তিনি ইউরোপ সফরে গিয়েছিলেন, গত দুইবছর তিনি আর কোনো বিদেশ সফর করেননি। ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি যোগ দেবেন। এবারও জাতিসংঘের অধিবেশন করোনাকালের জন্য সীমিতাকারে হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেহেতু অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অধিবেশনে উত্থাপন করবেন, সেজন্য তিনি সশরীরেই যোগ দিতে যাচ্ছেন।
এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো:
১) রোহিঙ্গা ইস্যু:শুরু থেকেই মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত, নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠাই দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন এবং এখন অবধি দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বর্তমানে এই ইস্যুটি বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অপরাপর দেশগুলো রোহিঙ্গাদের নিজদেশে সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন চাইলেও এই সম্পর্কে তারা বর্তমানে চুপটি মেরে আছে। চীন, রাশিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলো এখন আর এই ব্যাপারে আগ্রহ প্রদর্শন করছে না। বরং মিয়ানমারের জান্তা সরকারকেই চীন একধরণের প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে শুরু থেকে। এই রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশনে জোরালোভাবে উত্থাপন করবেন, যেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্ব একটি ঐকবদ্ধ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
২) জলবায়ু পরিবর্তনঃ ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বেশ কিছু সিদ্ধান্ত এবং কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। তার ভূমিকাও পূর্বসুরিদের তুলনায় আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে উদাসীন থাকলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে ওয়াকিবহাল এবং কর্মতৎপর। জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতিনিধি হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু ইস্যুতে কথা বলবে।
৩) জাতিসংঘের শান্তি মিশন : জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সদস্য। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর্তমানবতার সেবা দিয়ে বিশ্বের ৪০টি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ। ৪০টি দেশে জাতিসংঘের ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্ন হয়েছে। এতে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৯ জন বাংলাদেশি অংশ নিয়েছিলেন। মূলত, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনীকে ঘিরেই এই মিশনগুলো অধিকাংশ আবর্তিত হয়। এখানকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে আবর্তিত হবে।
৪) করোনার টিকা: শুরু থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে করোনার টিকা নিয়ে বিশ্বে একটি একচেটিয়া আধিপত্যবাদী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। ধনী দেশগুলো টিকা মজুদ করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের আরও উন্নয়নশীল এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো টিকা নিয়ে একধরণের হাহাকার তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিকভাবে টিকার সাম্যতা নিয়ে তার যুক্তি ও মতামত উপস্থাপন করবেন।
৫) অভিবাসীদের অধিকার: করোনায় অভিবাসীদের নিয়ে সঙ্কট নতুনভাবে দেখা দিয়েছে। জীবিকা নির্বাহ, পড়াশোনা ইত্যাদি নানা বিষয়ে একদেশ থেকে অন্যদেশে যাওয়া নিয়ে একধরণের সঙ্কট তৈরি করা হচ্ছে এবং তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এছাড়াও তাদেরকে টিকাপ্রদান নিয়ে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
এই বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূলত উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মুখ্য প্রধান ও কণ্ঠস্বর হিসেবে জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন।
Posted ৬:০৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta