কক্সবংলা ডটকম(৯ মার্চ) :: বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করে ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের দাম কমানো হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী লিটার প্রতি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৯ থেকে কমিয়ে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা, অকটেন ১৩০ থেকে কমিয়ে ১২৬ টাকা এবং পেট্রোল ১২৫ থেকে কমিয়ে ১২২ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
সে হিসাবে লিটারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৭৫ পয়সা, অকটেনের দাম ৪ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ৩ টাকা কমেছে। ৮ মার্চ থেকে কার্যকর করা জ্বালানি তেলের নতুন এই দাম জনজীবনে কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন খাত-সংশ্লিষ্টরা।
দেশে প্রথমবারের মতো স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া চালুর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমলে দেশেও কমবে, আবার বাড়লে দেশের বাজারেও বাড়বে।
তবে ডিজেলের দাম কমলে বা বাড়লে পরিবহন ভাড়ার কী হবে, তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো ধরনের নির্দেশনা পায়নি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। প্রায় শতভাগ জ্বালানি তেল আমদানি করা বাংলাদেশের পরিবহন খাতের ৯০ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩৪ শতাংশ জ্বালানি তেলনির্ভর।
দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭০ শতাংশের বেশি ডিজেল। এটি সাধারণত পরিবহন ও সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়। ডিজেলের দাম লিটারে কমানো হয়েছে ৭৫ পয়সা। এই হিসাবে পরিবহন মালিকরা জ্বালানি খরচ বাবদ দিনে সর্বোচ্চ ৫০ টাকার বেশি সাশ্রয় করতে পারবেন না।
ফলে এই দাম কমানো পরিবহনের ভাড়া কমাতে কতটুকু ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে সন্দিহান পরিবহন মালিকরা। আবার দাম কমানোর এই প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে পড়বে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এতে পরিবহন ব্যবসায়ীদের লাভ সামান্য বাড়বে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান হচ্ছে এমন যুক্তিতে ২০২২ সালের ৫ আগস্ট দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই সময় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৮০ থেকে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়। লিটারপ্রতি পেট্রোলের দাম ৮৬ থেকে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা, অকটেনের দাম ৮৯ থেকে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৩৫ টাকা।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ওই বছর ৩০ আগস্ট চার ধরনের জ্বালানির দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা করে কমানো হয়। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে কমানো হয় মাত্র ৩-৪ শতাংশ। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় গত দেড় বছরে তরতর করে বেড়েছে গণপরিবহনের ভাড়াসহ সব পণ্য ও সেবার দাম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারের দাম অনুসারে দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমানো উচিত ছিল। সরকার নামমাত্র দাম কমিয়েছে। তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম কমার প্রভাব পরিবহনের ভাড়ার ওপর পড়া উচিত। যে হারে বাড়ানো হয়েছিল, সে তুলনায় নামমাত্র কমানোয় এখন জ্বালানির দাম কমায় সামান্য কমালে তার প্রভাব খুব একটা পড়বে না। তবে অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ভাড়া সামান্যও কমবে না। এবং এর প্রভাব জনজীবনে পড়বে না।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘এই দাম কমানোর বিন্দুমাত্র প্রভাব জনজীবনে পড়বে না। আগে বাড়িয়েছে অনেক টাকা, এখন কমাল মাত্র ৭৫ পয়সা। তাহলে এর কী প্রভাব পড়বে? যদি প্রতি লিটার ডিজেল ১০০ টাকার মধ্যে আনা যেত, তাহলে জনজীবনে একটা প্রভাব পড়ত।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘তেলের দাম কমালে আমরা ভাড়া কমাব বলেছি। সেই কথার ওপরেই আমরা আছি। এখন এর প্রভাবে ভাড়া কতটা কমবে সেটা বিআরটিএ বলতে পারবে। আমরা বলতে পারব না।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এতে বাজারে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না। বাড়ানোর সময় ৪০-৫০ টাকা বাড়ানো হবে, আর কমানোর সময় দেড় টাকা, দুই টাকা কমাবেন। দেশের অর্থনীতিতে দুই টাকার এখন আর মূল্য নেই। তাই সমন্বয় যদি করতেই হয় তাহলে গণশুনানির মাধ্যমে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে করতে হবে। ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে নামমাত্র কমাতে দেখলে খুব কষ্ট হয়।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, ‘দাম কমানোটা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। ইউক্রেন যুদ্ধের পর জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। জনসাধারণ সেই উচ্চমূল্যের ভার বহন করছে। তবে জ্বালানি তেলের এই দাম আরও কমানো হলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার যৌক্তিকতা আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দাম কমবে। যদি যুদ্ধবিগ্রহ লাগে বিপুল হারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে। তখন বাজার পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘আমার মনে হয় না জ্বালানি তেলের এই মূল্য সমন্বয় জনজীবনে কোনো প্রভাব ফেলবে। বাজার স্থিতিশীল রাখা খুব দরকার। আমাদের প্রস্তাবে আমরা বলেছিলাম, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম কমবে তখন আয় বেশি হবে। সেই আয় দিয়ে একটি তহবিল গঠন করতে।
আবার যখন তেলের দাম বাড়বে তখন ওই তহবিল থেকে অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করে দাম স্থিতিশীল রাখতে। সরকার এটি না করে প্রাইসিং ফর্মুলা অনুসারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করেছে। দাম বাড়লে দাম বাড়াবে, কমলে কমাবে। এখন দেখা যাক কী হয়।’
Posted ১:২০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১০ মার্চ ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta