কক্সবাংলা রিপোর্ট(৩ ফেব্রুয়ারি) :: দেশে ইয়াবা প্রবেশের সূতিকাগার হলো কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত। র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডে নজরদারির কারণে ইয়াবা পাচারের রুট এখন দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র সীমানা বেছে নিয়েছে পাচারকারীরা। বিশেষ করে দেশের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে দেশে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা প্রবেশ করাচ্ছে পাচারকারীরা। এর পাশাপাশি বিমানে করে ঢাকায় ইয়াবা আনা হচ্ছে। কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম থেকে বিমানে করে ইয়াবা আনছে পাচারকারীরা।
২১ মাস আগে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলন করে ইয়াবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এরপর থেকে সারাদেশে র্যাবের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটতে থাকে। ইয়াবা সিন্ডিকেটের রাঘব বোয়ালরা র্যাবের বন্দুকযুদ্ধে একের পর এক নিহত হতে থাকে। র্যাবের এই যুদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে পুলিশও একাত্মতা ঘোষণা করে। শুরু হয় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ।
ওই বছরের মে মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে চার শতাধিক মাদক ব্যবসায়ি নিহত হয়। এরপরও থেমে নেই ইয়াবা ব্যবসা। ইয়াবা নগর, শহর ছেড়ে এখন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় এখন ইয়াবা ব্যবসা তুঙ্গে। যদিও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, আগের চেয়ে ইয়াবা ব্যবসা অনেকটা সীমিত হয়ে গেছে। এরপরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান থেমে নেই।
সোমবার কক্সবাজারের টেকনাফ সরকারি কলেজ মাঠে পুলিশের কাছে ২১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পন করেন। সেখানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার। সেই মিয়ানমার থেকে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার ইয়াবা আনছে এদেশীয় ইয়াবা কারবারিরা। দেশের টাকা বিদেশে পাচার মানে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারার মতো।
এর আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পন করেন। এত কিছুর পরও ইয়াবা ব্যবসার লাগাম টানতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ ব্যাপারে বিবিসি বাংলা সার্ভিসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ইয়াবাসহ মাদক পাচারকারী গডফাদাররা এখন কৌশল পাল্টিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ইদানীং মেয়েদেরকে মাদক পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা নারীদের এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা ধরা পড়ছে, ওরা শুধু বহনকারী মাত্র। অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের একটা অংশের আত্মসমর্পণের ঘটনাকে সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটা বড় সাফল্য হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
তবে অপরাধ বিষয়ক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞানের শিক্ষক শাহারিয়া আফরিন বলেছেন, আগে অনেক অভিযান হয়েছে কিন্তু তাতে করে খুব বেশি সুফল আসেনি। হয়তো সে কারণেই আত্মসমর্পণের কৌশল নিয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাদক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা তাই যত ভাবে চেষ্টা করা যায়। তবে সব অপরাধের ক্ষেত্রে সব পদক্ষেপ কাজে লাগেনা। তাই এবার হয়তো পুলিশ ভেবেছে দেখি এই কৌশলে কাজ হয় কি-না।
তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ি, ইয়াবার বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত ৩ কোটির বেশি সংখ্যক ইয়াবা উদ্ধার করেছে। আর সারাদেশে আটক হয়েছে ২ লাখ ইয়াবা ব্যবসায়ী। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, মাদক নির্মূূূল হোক এবং সে লক্ষ্যে তারা নিরন্তন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বড় বড় শহরে মাদক বিরোধী অভিযানে তারা আশানুরূপ সফলতা পাচ্ছেন। কিন্তু তাদেরকে বেগ পেতে হচ্ছে উপজেলা পর্যায়ে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে।
এ ব্যাপারে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাসেম বলেন, সমাজে মাদক বিশেষ করে ইয়াবা বিক্রি বন্ধ করতে হলে এর চাহিদা আগে বন্ধ করতে হবে। এজন্য সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। র্যাবের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড সবাই ইয়াবার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। আমরা সফলতাও পাচ্ছি। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে পারব না-ততক্ষণ পর্যন্ত ইয়াবা ব্যবসার লাগাম টানা সম্ভব হবে না।
তবে ক্ষমতাসীন সরকারি দলের প্রত্যক্ষ শেল্টারে সারাদেশে ইয়াবা ব্যবসা চলে। রাজধানীর ইয়াবা কারবারিদের ব্যাপারে ভিন্নতা থাকলেও উপজেলা বা গ্রামের ইয়াবা স্পটগুলো সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কম বেশি ধারণা রয়েছে। ওই সব স্পট বা ইয়াবা ব্যবসায়ীরা স্থানিয় ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় চলাফেরা করে। ফলে পুলিশ তাদের দেখেও না দেখার ভান করে। এমনও ঘটনা ঘটেছে যে ক্ষমতাসীনদের চাপে মাদকসহ আটক কারবারীদেরকে পুলিশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
Posted ৪:১৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta