বিশেষ প্রতিবেদক,পেকুয়া(৪ জুলাই) :: পেকুয়ার আলোচিত দা-বাহিনীর সদস্যরা আবারো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। দা-বাহিনীর প্রধান নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে আবদুল হামিদসহ প্রায় ৩০জনের একটি দল নিরহ ও অসহায় লোকদের জমি জবর দখল, বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, অসহায় লোকদের উপর মারধর করে আহত ও তার প্রতিপক্ষদের মৃত্যুর হুমকি দেয়া অব্যাহত রাখায় ভুক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিকার দাবী করেছেন।
শনিবার (৪ জুলাই) বিকেলে পেকুয়া রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে টইটংয়ের বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী সংবাদ সম্মেলনে দা-বাহিনীর নাছির ও তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পৃথক ভাবে দেয়া লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যে টইটং বটতলি ঝুম পাড়া এলাকার মৃত অলী আহমদের ছেলে জয়নাল আবদীন, মালঘারা এলাকার মৃত আবুল শামার ছেলে হামিদুল হক, মুহাম্মদ হাসানের স্ত্রী নাছিমা বেগম, হাসানের ভাই মনজুর আলম, বটতলি স্কুল পাড়ার বদিউল আলমের স্ত্রী মাছুদা বেগম ও মৃত উকিল আহমদের ছেলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, পেকুয়ার উপকূলের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দা-বাহিনীর প্রধান নাছিরের বর্বর কাহিনী কারো অজানা নয়। তার বাহিনীর নেতৃত্বে অসহায় লোকদের হত্যা, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে স্থানীয় প্রশাসন ও র্যাবের ব্যাপক তৎপরতায় দা-বাহিনীর প্রধান নাছির মালেশিয়ায় পালিয়ে যায়। অন্য সদস্যরা কেউ জেলে আবার কেউ এলাকা ছাড়া আবার কেউ পাহাড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। শান্তি ফিরে আসে এলাকায়। দুই তিন বছর এলাকার নিরহ লোকজন শান্তিতে বসবাস করে। কিন্তু বিগত দুই বছর আগে দা-বাহিনীর প্রধান নাছির গোপনে মালেশিয়া থেকে দেশে এসে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেলে চলে যান। দীর্ঘ ১৮ মাস কারাভোগ করার পর এলাকায় চলে আসেন।
নাছির এলাকায় আসার পর কিছুদিন নিরবে দিন কাটালেও বেশ কয়েকমাস ধরে আবারো দা-বাহিনীকে সংগঠিত করার প্রয়াস চালাতে থাকে। একপর্যায়ে নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে বহু মামলার পলাতক আসামী আবদুল হামিদকে নিয়ে আবারো দা-বাহিনীকে সংগঠিত করেন। গড়ে তুলেন প্রায় ৩০ জনের মত একটি বাহিনী। শুরু করেন অত্যাচার, নির্যাতন আর দখল বেদখল। নির্যাতনের মাত্রা এতোই বেড়ে যায় প্রতিদিন কাউকে না কাউকে হামলা করে আহত করছে। ভিটে ছাড়া করছে অসহায় লোকজনকে এঘটনায় স্থানীয় ভুক্তভোগীরা থানায় লিখিত ও মৌখিকভাবে জানালেও কোন ধরণের প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী নাছিমা বেগম, মাছুদা বেগম ও হামিদুল হক বলেন, তারা পাহাড়ে বসবাস করেন। সরকারী বনায়নের উপকারভোগী ছাড়াও দীর্ঘবছর ধরে বসবাস করে স্থায়ী হয়েছি। আমাদের দেয়া বনায়নের জমিগুলো দখল করে নিয়েছে নাছির উদ্দিন। আমরা অসহায়, প্রতিবাদ করার সাহস আমাদের কাছে না থাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
ভুক্তভোগী জয়নাল আবদীন বলেন, নাছির আগেরমত হিংস্র হয়ে ওঠেছে। দখল বেদখল আর মারধর তার জন্য নিত্যব্যাপার। তার কারণে ইতোমধ্যে শতাধিক অসহায় মানুষ ঘর বাড়ি ছাড়া হয়েছেন। দখলে নিয়েছে তাদের দীর্ঘদিনের বসতবাড়ি ও বনায়ন। ইতোমধ্যে বাঁশখালী এলাকার খোকনের উপর হামলা ও তার ক্রয়কৃত জমি জবর দখল চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। অবৈধ অস্ত্রের মাধ্যমে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অন্যের জমি জবর দখল করে বেশ কয়েকটি বালুর মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করলে তার উপর চলে নির্যাতন। আমরা টইটংবাসী দা-বাহিনীর নাছিরের অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ চাই।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, নাছির সহ আরো বেশ কয়েকজন ব্যক্তি মিলে আমার পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বর্তমানে তারা আমার ভাই সাবেক ইউপি সদস্য জলিলসহ আমাদেরকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এছাড়াও কারাগার থেকে বের হয়ে আমার মা দিলোয়ারা বেগমের নামে সরকারী বনায়নের জমি জবর দখল করে নিয়েছে। আমরা টইটংবাসী তার অত্যাচারে অসহায় হয়ে পড়েছি। এছাড়াও তার বাহিনীর সদস্য আবদুল হামিদের অত্যাচার নির্যাতন বেড়েই চলছে। করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বহু মামলার আসামীরা এলাকায় বীরদূর্পে চলাফেরা করায় সাধারণ জনগণও ভয়ে দিনাপাত করছে। তাদের লাগাম টেনে ধরতে আমরা সবাই স্থানীয় প্রশাসন ও সুনাম অর্জনকারী র্যাব প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
সর্বশেষ তারা সবাই একযোগে বলেন, দা-বাহিনীর নাছির উদ্দিন ও তার বাহিনীর সদস্যদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে না আসলে আইনশৃংখলার চরম অবনতি হবে। তাকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশের এসপি মহোদয়ের সহযোগিতা কামনা করেন সংবাদ সম্মেলনকারী ভুক্তভোগীরা।