কক্সবাংলা ডটকম(১১ আগস্ট ) :: একদিকে দশ লক্ষ রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গা নিয়ে শুধু মৌখিক সহানুভূতি দেখাচ্ছে। বাস্তবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এবং তাদের ভরণপোষণের জন্য তেমন কিছু করছে না। এমনকি বাংলাদেশ তার নিজেদের দেশের জনগণের জন্য যে সংগৃহীত টিকা থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে টিকাদানের কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে।
এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে এসেছে আফগানিস্তান। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর হচ্ছে আগামী এক মাসের মধ্যে কাবুল দখল করে নেবে তালেবানরা। আফগানিস্তানে যে আবার তালেবান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই কারোর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখানে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। বরং পশ্চিমা লেখকরা বলছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো অস্ত্র ব্যবসাকে চাঙ্গা করার জন্যই আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেছে। এর ফলে আফগানিস্তানে তালেবানদের কাছে অস্ত্রের একটা বাজার তৈরি করতে পারবে পশ্চিমারা। চীন তালেবানদের সঙ্গে নতুন সখ্যতা করেছে। তাদেরকে জামাই আদরে খাইয়ে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার নীতি গ্রহণ করেছে।
তালেবানদের উত্থানে পাকিস্তানও অনেক খুশি এবং লস্কর-ই-তৈয়বার মতো জঙ্গি দলগুলো এখন নতুন করে জীবন পাচ্ছে। আর এই সব কিছুর হিসেব-নিকেশ একত্রিত করলে দেখা যায় আফগানিস্তান বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সংকট এবং মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রথমত, এই আফগানিস্তানে তালেবান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে উপমহাদেশে জঙ্গিবাদ এবং উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর একটা উত্থানের শঙ্কা রয়েছে। যারা তালেবানদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে সে পৃষ্ঠপোষকতার ভাগ পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো যে পাবে সেটি মোটামুটি নিশ্চিত। ফলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের এক নতুন উত্থানের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশে চীনের নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য আবার বিস্তৃত হবে এবং চীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়গুলোর দিকেও নজরদারি শুরু করবে। কারণ যখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সামরিক শাসন হলো তখন চীন তাকে সমর্থন জানালো।
যার ফলে বাংলাদেশ না পারছে রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত পাঠাতে, না পারছে সামরিক সরকারকে প্রত্যাখ্যান করতে। যাব ফলে এক নাজুক কূটনীতির মধ্যে মিয়ানমার নিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ঠিক একইভাবে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশের জন্য একই পরিস্থিতি হবে। উদার গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের আফগান নীতি কি হবে সেটি তখন এক নতুন প্রশ্নের সৃষ্টি করবেন।
তৃতীয়ত, এই উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর প্রধান লক্ষ্য হবে ভারত এবং ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে মদদ দেওয়া, তাদেরকে আস্কারা দেওয়া এবং ভারতকে অস্থিতিশীল সৃষ্টি করার পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের যে ব্লুপ্রিন্ট সেই ব্লুপ্রিন্ট বাস্তবায়নের জন্য তারা কাজ করবে এবং সেই কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহারের জন্য তারা প্রাণান্ত চেষ্টা করবে।
বাংলাদেশ সরকার গত এক যুগে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে এবং বাংলাদেশের মাটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোন জায়গা নেই প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়েছে। কিন্তু আফগানিস্তানের যখন তালেবান উত্থান হবে তখন বাংলাদেশ সরকার কতটুকু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে সে এক প্রশ্ন। এসব নিয়ে আফগানিস্তান-বাংলাদেশের কূটনীতির ক্ষেত্রে নতুন এক মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
Posted ৬:৪১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta