কক্সবাংলা ডটকম(১২ জুলাই) :: আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা শুরু করেছে এবং এই প্রত্যাহার করার সাথে সাথেই আফগানিস্তান মোটামুটি তালেবানদের দখলে চলে যাচ্ছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সাথে সাথেই বিভিন্ন এলাকায় তালেবানরা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিশেষ করে এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারের নিয়ন্ত্রণ জনগণের মধ্যে খুব সামান্যই রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত বর্তমান আফগানিস্তানের বৈধ সরকারের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি বা অন্য কোনো বিষয়ে তালেবানদের চুক্তি হয়নি বা এরকম চুক্তির সম্ভাবনাও দেখছেন না কূটনীতিকরা।
ইতিমধ্যে তালেবান বাহিনী এককভাবে আফগানিস্তানের এক তৃতীংশ দখল করে নিয়েছে এবং আফগানিস্তানের ৪২১ জেলা একে একে তালেবানদের দখলে চলে যাচ্ছে। অনেক স্থানে সরকারি বাহিনী বিনা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে জেলাগুলো ছেড়ে দিচ্ছে।
সরকারের বাহিনীর শত শত সদস্য দলত্যাগ করে তালেবানদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন অথবা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় খুঁজছেন।
হাজারখানেক তাজেক আফগান সৈন্য তাজিকিস্তানে আশ্রয় নেয়ার খবর এর মধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। তালেবানদের সমগ্র আফগানিস্তান দখল এখন একটি সময়ের ব্যাপার মাত্র। এরকম বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠেছে যে শেষপর্যন্ত আফগানিস্তান যদি তালেবান রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে বাংলাদেশ কি ঝুঁকিতে পড়বে কিনা?
তালেবান রাষ্ট্র হওয়া মানেই আফগানিস্তান একটি জঙ্গি চারণভূমিতে পরিণত হবে এবং জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর লালন ক্ষেত্রে পরিণত হবে। আর এই লালন ক্ষেত্রে পরিণত হলে এই উপমহাদেশে বাংলাদেশও যে ঝুঁকিতে পড়বে তা বলাই বাহুল্য।
অতীতে দেখা গেছে যে, আফগানিস্তানে তালেবান বাহিনী যখন সশস্ত্র যুদ্ধ করেছে মুজাহিদ হয়েছে তখন বাংলাদেশ থেকে অনেক জঙ্গি এবং উগ্র মতালম্বী মানুষ তালেবানদের সমর্থন জানানোর জন্য আফগানিস্তানে গিয়েছিল এবং সেখান থেকে যখন তারা ফিরে আসে তারাই পরবর্তীতে বিভিন্ন সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব দেয় অথবা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
সেই বিবেচনায় আফগানিস্তানে যদি তালেবান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে শুধু বাংলাদেশ নয় এই উপমহাদেশের অন্যান্য এলাকাগুলােও ঝুঁকিতে পড়বে। বিশেষ করে যারা ধর্মনিরপেক্ষ এবং সকল ধর্মের সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাসী কিন্তু মুসলিম প্রধান দেশ সেই দেশগুলোতে জঙ্গিবাদের উত্থান হতে পারে বলে আশঙ্কা করা গেছে।
যখনই তালেবানরা আফগানিস্তানের কর্তৃত্ব নেয় বা যখনই তালেবানরা ক্ষমতায় আসে তখনই বাংলাদেশেও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাছাড়া তালেবানদের বিপুল অর্থ এবং অর্থের উৎস রয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে যে তালেবানরা শুধু নিজের দেশেই একটি মৌলবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করবে এমনটি নয় বরং বাংলাদেশের মতো উদারনৈতিক মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতেও বিপদ ডেকে আনবে।
বিশেষ করে তালেবানদেরকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী পাকিস্তানি গোয়েন্দা গোষ্ঠীকে ব্যবহার করবে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। আর এই সমস্ত মিলেই তালেবানদের উত্থান বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের একটা বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশ হলি আর্টিজানের পর জঙ্গিবাদ দমনে অত্যন্ত সফল হয়েছে।
রবিবারও একটি জঙ্গি আস্তানা থেকে অস্ত্রসহ বেশ কিছু সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। জঙ্গিবাদের তৎপরতা এখন শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে। কিন্তু আফগানিস্তানে যদি শেষ পর্যন্ত তালেবানদের উত্থান হয় তাহলে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ কতটুকু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে সেই প্রশ্ন করছেন কূটনৈতিক মহল।
Posted ৮:৩৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta