কক্সবাংলা ডটকম(২২ মে) :: হেফাজতের শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতাকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশেষ করে যারা ২০১৩ সালের ৫ মে তাণ্ডব এবং এ বছরের ২৬ এবং ২৭ মার্চের তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের মোটামুটি সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে শুধুমাত্র জুনায়েদ বাবুনগরীকে ছাড়া।
জুনায়েদ বাবুনগরী কি গ্রেফতার হবে কি হবেনা এই নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন উঠেছে। আর এই প্রশ্নের মুখেই গতকাল রাতে জুনায়েদ বাবুনগরীর প্রেসসচিব ইনামুল হাসান ফারুকীকে হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইনামুল হাসান ফারুকী জুনায়েদ বাবুনগরীর ডানহাত হিসেবে পরিচিত। হেফাজতের বিভিন্ন বিবৃতি, প্রেস বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি ফারুকী বিভিন্ন গণমাধ্যমে দিতেন। ফারুকীর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের যেমন তাণ্ডবের অভিযোগ রয়েছে তেমনি ২৬ এবং ২৭ মার্চেরও অভিযোগ রয়েছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইনামুল হাসান ফারুকীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলো। কারণ এখন ইনামুল হাসান ফারুকীর যে জবানবন্দি হবে সেই জবানবন্দির ভিত্তিতেই জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেপ্তার করা সহজ হবে। সরকার নানারকম প্রতিকূলতার পরও হেফাজতের বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযান তা বিভিন্ন মহল প্রশংসা করছে।
বিশেষ করে যারা মনে করছিল যে, সরকার হেফাজতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং হেফাজত সরকারকে চাপের মধ্যে ফেলেছে তাদের জন্য এই টানা অভিযান ইতিবাচক এবং আশাপ্রদ দিক। এর ফলে বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতির ধারা কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বলছেন যে, হেফাজতের বিরুদ্ধে অভিযান হচ্ছে সেটি কোন রাজনৈতিক সংগঠন বা আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে নয়। যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও নাশকতার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রগুলো বলছে যে, হেফাজতের নেতাদেরকে দুটি বিষয় নিয়ে কথা বলা হচ্ছে।
প্রথমত, ২০১৩ সালের তাণ্ডব এবং মূল পরিকল্পনা কি সেটি নিয়ে। এটি নিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, ২০১৩ সালের হেফাজতের যে তাণ্ডব করেছিল তার একটি রাজনৈতিক অভিপ্রায় ছিল। তারা চেয়েছিল যে এই তাণ্ডব ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা।
আর এই পরিকল্পনার সঙ্গে বিএনপি`র একটি যোগসূত্র এবং যোগসাজশের তথ্যপ্রমাণ এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে এসেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রগুলো বলছে যে, আর কিছুটা তদন্তের পরই তারা এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ হাজির করবে এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত তারা যে দলেরই হোক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
দ্বিতীয়ত, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে তা হলো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তাণ্ডব। এই তাণ্ডবের পিছনেও বিভিন্ন মহলের হাত রয়েছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তারা মনে করছেন এবং যাদেরকে গ্রেপ্তার করছেন তাদেরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ এই সমস্ত তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আর কিছু কিছু নেতার বিরুদ্ধে একেবারেই সামাজিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলছে।
যেমন মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ, চট্টগ্রামে আরেকজন হেফাজতের নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ সহ বিভিন্ন নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে অভিযুক্ত হচ্ছেন অনেক হেফাজতের নেতা। আর এগুলো হলো একেবারে অপরাধ। এই সমস্ত অপরাধের বিচার প্রচলিত আইনে হবে। তবে অনেকে যেটি মনে করছিল যে, ঈদের পর হেফাজত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে সেটি আর হচ্ছে না বরং হেফাজত আরো কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এখন জুনায়েদ বাবুনগরী গ্রেপ্তার এড়াতে যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত বলে জানা গেছে।
Posted ৯:৪২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২২ মে ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta