রবিবার ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ভূমিকম্প কি বাংলাদেশকে কড়া বার্তা দিল?

সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
118 ভিউ
ভূমিকম্প কি বাংলাদেশকে কড়া বার্তা দিল?

কক্সবাংলা ডটকম(২৩ নভেম্বর) :: রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৭। এটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর ঘোড়াশালের ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। এ ভূমিকম্পে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দেয়াল ধসে ১ শিশু নিহত এবং আরও ২ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়াও পুরান ঢাকায় বেশ কিছু ভবন হেলে পড়েছে। রাজধানীতে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে ছোটাছুটি করেছে। এ ভূমিকম্প বাংলাদেশের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প বলে সবার ধারণা।

এ বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সাত দিনে দেশে দুবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জানুয়ারি সকালে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্প ছিল অপেক্ষাকৃত বড় ধরনের। আর গত ৩ জানুয়ারি হওয়া ভূমিকম্পটি ছিল মাঝারি মাত্রার। তবে উৎপত্তি স্থল দেশের বাইরে হলেও এক সপ্তাহে দেশে দুবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার ঘটনা দেশকে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভূমিকম্পে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের তালিকায় ঢাকা অন্যতম। শুক্রবারের ভূমিকম্প ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভূমিকম্পের আঘাত উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে দেখা গেছে।

অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে ভূমিকম্প এক মহা-প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম। সহজ কথায় পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই হলো ভূমিকম্প। ভৌগোলিকভাবে নাজুক অবস্থানের কারণে বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে আছে বাংলাদেশ। যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। কারণ বাংলাদেশ অবস্থান করছে ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং মায়ানমারের টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় ভূমিকম্পে কেঁপেছে বিশ্ব। পৃথিবীর অভ্যন্তরে যে কেন্দ্র থেকে ভূ-কম্প-তরঙ্গ উৎপন্ন হয় তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে।

এই কেন্দ্র থেকে কম্পন ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গের মাধ্যমে সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে, শিলার পীড়নক্ষমতা সহ্যসীমার বাইরে চলে গেলে শিলায় ফাটল ধরে ও শক্তির মুক্তি ঘটে। তাই প্রায়ই ভূমিকম্পের কেন্দ্র চ্যুতিরেখা অংশে অবস্থান করে। বেশ কয়েকটি সক্রিয় ফল্ট লাইনসহ টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান দেশটিকে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকিতে ফেলেছে।

ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চলে বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়েছে, ১৮৬৯ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে পাঁচটি বড় ঘটনা রিখটার স্কেলে ৭-এর উপরে রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর থেকে উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প স্তিমিত হয়ে আসছে। মূলত ভূমিকম্পের বিপর্যয়ের আগে এই নীরবতা থাকতে পারে। ২০২৪ সাল থেকে রেকর্ড করা ৬০টি ভূমিকম্পের মধ্যে তিনটি ৪ মাত্রার ওপরে এবং ৩১টি ৩ থেকে ৪ মাত্রার মধ্যে ছিল। এই ঊর্ধ্বগতি, শহর এলাকায় বিস্তৃত এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কিত জাতিকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে তুলে ধরছে। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়- প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু। উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ভূমিকম্প সবচেয়ে ভয়াবহ। ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন প্রাকতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে বারবার আঘাত হানে। প্রতিবছরই কোনো না কোনো দুর্যোগ বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। ভূমিকম্পে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল তুরস্ক ও সিরিয়া। প্রতিদিনই শত শত নতুন মৃত্যু যুক্ত হয়েছিল। যখন ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে তখন বেশির ভাগ মানুষ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বহুতল ভবন ধসে পড়ে ঘুমন্ত মানুষের ওপর, মোমের মতো ধসে পড়েছে একাধিক ভবন। সঙ্গে সঙ্গে লাশ আর লাশ। প্রাণহানির সংখ্যা ছাড়িয়েছে হাজার থেকে লাখে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘর-বাড়ি, অফিস-আদালত থেকে ধর্মীয় স্থাপনা। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে এক মুহূর্তে। প্রতিবছরই নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে চলেছে আমাদের নিবাস বিশ্ব।

বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে কী পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা অনুমান করা অসম্ভব। ভূমিকম্পের কোনো পূর্বাভাস নেই, যার কারণে মানুষ সতর্কতামূলক কোনো পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে না। যদি কখনো বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় তাহলে সারা দেশ একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন সেগুলো হলো- আমরা যে ভবনটিতে থাকি সেই ভবনটি ভূমিকম্পরোধক কি না তা জানতে হবে, থাকলে কত মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় এবং না থাকলে দুর্বল ভবনে রেট্রোফিটিং-এর ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবারের সবার সঙ্গে বসে আশ্রয়ের ব্যাপারে পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরি। বিছানার পাশে সব সময় টর্চলাইট, ব্যাটারি ও জুতা রাখতে হবে। প্রতিবছর পরিবারের সবার সঙ্গে ভূমিকম্পের করণীয় সম্পর্কে ট্রায়াল দিতে হবে।

ভূমিকম্পের সময় যা যা করণীয়- ভূমিকম্প শুরু হলে ছোটাছুটি না করে স্থির থাকা। বাইরে বের হয়ে যাওয়া, ছাদ বা জানালা দিয়ে লাফ দেওয়া থেকে বিরত থাকুতে হবে। ভূমিকম্প শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়তে হবে। তারপর কোনো ডেস্ক বা টেবিলের নিচে প্রবেশ করতে হবে। ভবনে ভূমিকম্পরোধক ব্যবস্থা থাকলে ভবন ধসের সম্ভাবনা কম থাকে। সুতরাং তখন ভবনে অবস্থান করাই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। ভূমিকম্পের সময় এলিভেটর ব্যবহার করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ‘ফোর শক’ এবং ‘আফটার শক’। এ সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। কেননা ‘আফটার শক’ বা ‘ফোর শক’ থেকেও বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। প্রথম ভূমিকম্পের সময় সম্ভব না হলেও পরে গ্যাস ও বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেওয়া।

ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়লে যা যা করণীয় সেগুলো হলো- হাতে রুমাল, তোয়ালে বা চাদর থাকলে হালকাভাবে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। যাতে ধ্বংসস্তূপের ধুলাবালি নাকে, মুখে প্রবেশ করতে না পারে। হাতে টর্চ থাকলে জ্বালান, ম্যাচ না জ্বালানো। কেননা গ্যাসের পাইপ লিক থাকলে আগুন লেগে যেতে পারে। কাউকে চিৎকার করে না ডেকে মুখে শিস বাজিয়ে, হাতে রেফারির বাঁশি থাকলে বাঁশি বাজিয়ে অথবা কোনো কিছুতে শব্দ করে ডাকা। এতে মুখে ধুলাবালি প্রবেশ করবে না। সব প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ভূমিকম্প সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী। এই বিধ্বংসী ভূমিকম্পের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় বা পূর্বাভাস নেই। ভূমিকম্প রেখার ঝুঁকিপূর্ণ সীমানার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থন। তাই আমাদের শক্তিশালী ভূমিকম্পের বিপর্যয় মোকাবিলা করতে সব প্রকার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।

বাংলাদেশে অনেকবার বিভিন্ন মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এতে জানমালের তেমন ক্ষতি না হলেও বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে বাংলাদেশ ধ্বংস্তূপে পরিণত হতে পারে। সুতরাং বিষয়টি হাল্কাভাবে না নিয়ে এখনই ভবন নির্মাণের জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও দুর্বল স্থাপনাসমূহ চিহ্নিতকরণপূর্বক ভেঙে ফেলতে হবে। প্রত্যেকটি বিপর্যয়ের ধরন আবার আলাদা রকমের। পৃথিবীর ওপরে আঘাত হানতে পারে বহু প্রাকৃতিক বিপর্যয়। যার জেরে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে আমাদের পৃথিবী। পৃথিবীতে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে চলেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে গোটা ভূপৃষ্ঠই কয়েকটি স্তরে বিভক্ত। আবার প্রতিটি স্তর একাধিক প্লেটে বিভক্ত। এসব বিশাল আকারের টেকটোনিক প্লেটগুলো যখন একের সঙ্গে অপরে ধাক্কা খায় তখন কেঁপে ওঠে মাটির নিচের তলদেশ। আর আমরা ভূপৃষ্ঠের ওপর ভূকম্পন অনুভব করি। ভূপৃষ্ঠের উপরের স্তরে অনেকগুলো প্লেট আছে এগুলো আবার অনেকগুলো সাবপ্লেটে বিভক্ত। এগুলো সব সময় নড়াচড়া করছে। একটার সঙ্গে আরেকটার ঘর্ষণে এই ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়। আবার আগ্নেয়গিরির কারণে ভূ-অভ্যন্তরের ভেতর থেকেও ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

আবার কোনো কোনো এলাকায় ভূপৃষ্ঠের গভীর থেকে অতিরিক্ত পানি কিংবা তেল ওঠানোর ফলে ভূপৃষ্ঠের অবস্থনের তারতম্য ঘটে। আগে থেকে বোঝার উপায় নেই ভূমিকম্পের বিষয়ে। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের বেলায় আগে থেকে বোঝা গেলেও ভূমিকম্প এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে যায় এই বিশাল দুর্যোগ, যার ফলে পূর্ব সতর্কতা নেওয়া সম্ভব হয় না। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতিও হয়ে থাকে।

ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন তাই ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রতিরোধব্যবস্থা ও সচেতনতার বিকল্প নেই। দেশে ঘন ঘন ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার ঘটনা দেশকে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভূমিকম্পে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের তালিকায় ঢাকা অন্যতম। শুক্রবারের ভূমিকম্প ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভূমিকম্পের আঘাত উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে দেখা গেছে। একমাত্র প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিই পারে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে ভূমিকম্প সহনশীল দেশ গড়তে।

লেখক :: সৈয়দ ফারুক হোসেন,সাবেক রেজিস্ট্রার, জাবিপ্রবি

118 ভিউ

Posted ২:১০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

SunMonTueWedThuFriSat
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031 

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com