কক্সবাংলা ডটকম :: জোসেফ রবিনেট জুনিয়র বা জো বাইডেন হলেন প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক বোদ্ধা। যিনি আসীন হতে যাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক দেখেছেন ক্ষমতার পালাবদল। এবার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা হওয়া সেই ক্যারিশমা হয়ত দেখবে বিশ্ববাসী। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তার তৃতীয় প্রচেষ্টা এটি এবং দীর্ঘ ৪০ বছরের স্বপ্নপূরণের পালা।
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর ডেল্জওয়ারে জন্ম নেন তিনি। উত্তরপূর্ব পেনসিলভেনিয়ায় তাঁর বেড়ে ওঠা। বাবা জোসেফ বাইডেন ছিলেন ব্যবসায়ী। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর চরম দারিদ্রতার মধ্যদিয়ে কাটে তার ছেলেবেলা।
২০২০সালে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর দৌড়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের উত্থান পতনের আবেগময় মুহূর্তের কথা তুলে ধরেছেন মি. বাইডেন। হাই স্কুল শেষ করে তিনি পড়তে যান ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান আইন পড়তে। কলেজেই পরিচয় হয়েছিল নেইলিয়া হান্টারের সাথে। লেখাপড়া শেষে ফিরে যান ডেলাওয়ারের উইলমিংটন শহরে। বিয়ে করেন নেইলিয়াকে। উইলমিংটনেই শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার।
একটি বড় আইনী প্রতিষ্ঠানে তিনি আইনজীবী হিসাবেও কাজ শুরু করেছিলেন। পরে তা ছেড়ে দেন। শুরু করেন রাজনীতি। এরপর আসে সিনেট আসন জয় ১৯৭২ সালে। অনেকদিন ওই আসনে থাকা রিপাবলিকান সিনেটরকে হারিয়ে সবার দৃষ্টি কাড়েন বাইডেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সে দুই মেয়াদে সিনেটর থাকা রিপাবলিকান প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি সিনেট আসন জয় করেন। ওই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের যেখানে ভরাডুবি হয়েছে, সেখানে তার এই অভাবনীয় জয়ের পর রাজনীতির অঙ্গনে তিনি তখন হয়ে উঠেছেন ডেমোক্র্যাটিক দলের সম্ভাবনাময় তরুণ।
১৯৮৮’র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লড়াই, বাইডেনের প্রথমবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবার উদ্যোগ লজ্জাজনক ঘটনার কারণে হোঁচট খায়। তার বিরুদ্ধে অন্যের লেখা চুরির ও অসততার অভিযোগ আনা হলে তিনি প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। এই ঘটনা বাইডেনের সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বড় রকমের ধাক্কা খায়। এরপর আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। তার প্রথম স্ত্রী ও এক সন্তান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। পরে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন জিল জেকবস নামে এক স্কুল শিক্ষিকাকে। তাদের একটি ছেলে আছে- অ্যাশলি।
বিশ বছর পর আবার নতুন করে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবার লড়াইয়ে নামেন মি. বাইডেন ২০০৮ এর নির্বাচনের জন্য। তখন তিনি রাজনীতিতে আর নতুন মুখ নন, তিনি একজন প্রবীণ রাজনীতিক। তবে সেই লড়াইয়ে তিনি সফল হননি। বারাক ওবামা ডেমোক্র্যাট পার্টির মনোনয়ন পান প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার জন্য। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে বারাক ওবামা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসাবে বেছে নেন জো বাইডেনকে। ডেমোক্রেট শিবিরে বারাকা ওবামা দু’বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মনোনয়ন পান হিলারি ক্লিনটন। ২০১৬ সালে ডেমোক্রেটদের হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়ে যান ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কচ্ছপ গতিতে আগানো জো বাইডেন এবার পেয়ে যান সেই ভাগ্য বদলের টিকেট। ডেমোক্রেট শিবিরে তার প্রতিপক্ষ বার্নি স্যান্ডার্সকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট পদের টিকেট পান। দীর্ঘ আট বছর বারাক ওবামার ডেপুটি হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। ক্যাথলিক রোমানে বিশ্বাসী এই ব্যক্তি তার রানিং মেট হিসেবে বেছেন নেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ-ভারতীয় বংশোদ্ভুত নারী কমালা হ্যারিসকে।
আগামী ৪ বছর হয়ত মার্কিনীদের ভাগ্যে জুটবে নতুন কিছু আর পুরো বিশ্ব হয়ত পাবে একজন ভাল বন্ধু।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের শেষে তরতরিয়ে এগিয়ে যাওয়া শুরু। ইঙ্গিত পেয়েই মার্কিন সংবাদ মাধ্যমে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকেই আসন্ন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে। ৭৭ বছর বয়সী বিদেশনীতির দক্ষ জো বাইডেনের কাছে হোয়াইট হাউস নতুন কিছু না। এর আগে তিনি প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
বারাক ওসামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন মার্কিন বিদেশনীতির স্তম্ভ হিসেবেই বাইডেন সরকারের অভিমুখ তৈরি করতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে যে সরকার বসে তাকে ঘরের থেকে বাইরে বেশি নজর রাখতে হয়, এটাই চালু প্রবাদ।
ওবামা মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাইডেনের আছে সরকারের অভ্যন্তরে আমলাতন্ত্র কে পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা। যে আমলাতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিরাগভাজন হয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান নেতা হিসেবেও ধনকুবের ট্রাম্প দলেরই অভ্যন্তরে রোষের শিকার।
বিদেশনীতিতে ‘দায়িত্বজ্ঞান হীন’ অবস্থানের কারণে ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই হোয়াইট হাউসের সব আমলা সরব। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে প্রথম দিকে ঢিলে দেওয়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে প্রবল সমালোচিত তিনি। পরিস্থিতি এমন যে মার্কিন শীর্ষ আমলারা একযোগে বিবৃতি দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন।
জো বাইডেন তীব্র আলোচিত হন ১৯৯০ সালে প্রথম পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়। ততকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান নেতা জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ সেনা পাঠান।
ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের নির্দেশে উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে আগ্রাসন চালায় ইরাকি সেনা। কুয়েত দখল করে ইরাক। এর পরেই শুরু হয় ইরাক বনাম মার্কিন সেনা নেতৃত্বাধীন আরব দেশগুলির সংঘর্ষ। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ চলে ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পরে ইরাক সেনা হটে যায়।