মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী : খুলল ২১ জেলার দুয়ার

রবিবার, ২৬ জুন ২০২২
149 ভিউ
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী : খুলল ২১ জেলার দুয়ার

কক্সবাংলা ডটকম(২৬ জুন) :: বর্ণিল উৎসব। বাতাসে উড়ল রঙিন আবির। মাওয়ায় পদ্মার তীরে উন্মোচিত হলো ফলক। খরস্রোতা পদ্মায় সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে গেল দখিনা দুয়ার। দুই দশকের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রমত্তা পদ্মার বুকে শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-কংক্রিটের অবকাঠামো নয়, নতুন স্বপ্নেরও উন্মোচন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে দেশের মানুষকে ‘স্যালুট’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের সমর্থন আর সাহসেই তিনি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কঠিন কাজটি সম্ভব করতে পেরেছেন। কবির ভাষায় তিনি বলেছেন, ‘যতবারই হত্যা করো, জন্মাবো আবার; দারুণ সূর্য হবো, লিখবো নতুন ইতিহাস।’

বাতাসে উড়ল রঙিন আবির, প্লেন থেকে ছাড়া হলো রঙিন ধোঁয়া, হেলিকপ্টার থেকে ঝরল জরি, শিল্পীদের কণ্ঠে থিম সং- এমন সব বর্ণাঢ্য আয়োজনে ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বহুল আকাক্সিক্ষত এ সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে খুলল দখিনের ২১ জেলার দুয়ার।

গতকাল বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর মন্ত্রী-এমপি, কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু দিয়ে তিনি পার হন পদ্মা নদী। পুরো বহরের টোল নিজেই দেন প্রধানমন্ত্রী। মাঝে সেতুতে নেমে তিনি উপভোগ করেন বিমানবাহিনীর মনোজ্ঞ ফ্লাইং পাস।

২১ বছর আগে শেখ হাসিনা তখনকার সরকারপ্রধান হিসেবে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের কষ্ট দূর করার স্বপ্ন বুনেছিলেন। সে স্বপ্ন ভোরের আলোর মতো বাস্তব এখন। আজ থেকে সেতু দিয়ে পারাপার হবে মানুষ।

গতকাল সেতু উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী মাওয়া প্রান্ত ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় সেতু এলাকা। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও উৎসুক জনতা ওঠার চেষ্টা করে সেতুতে। অস্থায়ী দোকানে খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। পুরো মাওয়া এলাকায় বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মাওয়া প্রান্তে আয়োজন করা হয় সুধী সমাবেশের। সকাল ১০টার আগেই আসন গ্রহণ করেন সুধীরা। সুধী সমাবেশে স্পিকার, বিচারপতিবৃন্দ, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিকসহ ৩ হাজারের বেশি অতিথি অংশ নেন। ১০টায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সভাপতির বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও পদ্মা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ নির্মিত থিম সং পরিবেশন করা হয়। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট ও ১০০ টাকা মূল্যের স্মারক নোটও উন্মুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ গর্বিত। সেই সঙ্গে আমিও আনন্দিত, গর্বিত ও উদ্বেলিত। অনেক বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে, ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আজ আমরা এ পদ্মা সেতু নির্মাণে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, এ সেতু শুধু একটি সেতু নয়, এ সেতু দুই পারের যে বন্ধন সৃষ্টি করেছে তা-ই নয়, এ সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট, স্টিল-লোহা, কংক্রিটের একটা অবকাঠামো নয়; এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব। এ সেতু আমাদের সক্ষমতা, আমাদের মর্যাদার শক্তি।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন : সুধী সমাবেশ শেষে সমাবেশস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর মাওয়া প্রান্তের সেতুর ফলকের স্থানে যাওয়ার পথে প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দেন শেখ হাসিনা। বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে টোল দেন। এরপর তাঁর গাড়িবহর সেতু উদ্বোধনের জন্য ফলকের স্থানে যায়। প্রধানমন্ত্রীসহ অতিথিরা গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে প্রথমে মোনাজাত করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মোনাজাত পরিচালনা করেন। বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে সুইচ টিপে সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

সেতু উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদও এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সেতুর ফলক উন্মোচনের পাশাপাশি ফলকের স্থানে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর ম্যুরাল উদ্বোধন করেন। এ সময় বাতাসে রঙিন আবির ওড়ানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। উপস্থিত সবাই হাততালি দেয়। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী গাড়িবহর নিয়ে মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে যান।

সেতুতে নেমে উপভোগ করেন বিমানবাহিনীর বর্নিল মহড়া : জাজিরার দিকে যাওয়ার পথে দুপুর ১২টা ১২ মিনিটের দিকে বহরের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। সেখানে প্রায় ১৫ মিনিট কাটান তিনি, উপভোগ করেন বিমান ও হেলিকপ্টারের ফ্লাইং ডিসপ্লে। কয়েকটি হেলিকপ্টার পতাকা উড়িয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। বিমান থেকে ছড়ানো হয় লাল, সবুজ, নীলসহ নানা রঙের ধোঁয়া। সেতুতে দাঁড়িয়ে মিগ-২৯ জঙ্গিবিমানের প্রদর্শনীও উপভোগ করেন সরকারপ্রধান। উৎসবের এ মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরায় ধারণ করতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও সেতুর ওপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু পাড়ি দিয়ে ১২টা ৩৪ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছান শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে।

হেঁটে সেতু ঘুরে দেখলো হাজারো মানুষ

দুপুরে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে কয়েক জন দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ইতিহাসের সাক্ষী হতে পদ্মা সেতুর ওপর সেলফি তুলতে এসেছি। রাইসুল নামে এক যুবক বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার। দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন ছিল পদ্মা সেতুতে ওঠার। আজ সে স্বপ্ন পূরণ হলো।’ সিরাজ হাওলাদার বলেন, ‘আসলেই পদ্মা সেতু আমার জন্য অনেক কষ্টের অবসান ঘটাল। এতদিন আমার বাড়ি যেতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। পদ্মা সেতু হওয়ায় আমার ও আমার মতো দক্ষিণবঙ্গের মানুষের চিরদিনের জন্য কষ্ট দূর হলো।’

যাদের জমি কিংবা আবাসস্থলে গড়ে উঠেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প তাদের জন্য সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে নাগরিক মৌলিক সব সুযোগ-সুবিধাসংবলিত পরিকল্পিতভাবে সাতটি পুনর্বাসনকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কুমারভোগ ৩ নম্বর পুনর্বাসনকেন্দ্রের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহ আলী বলেন, ‘সরকার আমাদের জমি নিলেও, উন্নত জীবনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। আমরা অনেক খুশি।’ কুমারভোগ ৩ নম্বর পুনর্বাসনকেন্দ্রের আরেক বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ায় আমাদের আর নদীভাঙন আতঙ্ক নেই।’ পুনর্বাসনকেন্দ্রের বাসিন্দা রাশিদা বেগম বলেন, ‘আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছি। ’

দরজা খুলল ২১ জেলার : দেশের প্রধানতম নদীর একটি পদ্মা। রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে পৃথক করে রেখেছিল প্রমত্তা পদ্মা। ঢাকায় পৌঁছাতে হলে দেশের অন্যতম দুটি নৌপথ মাদারীপুর-মুন্সীগঞ্জের বাংলাবাজার-শিমুলিয়া এবং রাজবাড়ী-মানিকগঞ্জের দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পার হয়েই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ ও যানবাহন ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত। পদ্মার এপার-ওপার হতেই কেটে যেত দিন। সঙ্গে যানজটের ভোগান্তি তো ছিলই। এ সবকিছু অতীত করে দিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হলো দক্ষিণের ২১ জেলার।

এ ছাড়া ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের মৈনট ঘাট পার হয়েও রাজধানীতে পৌঁছানো যায়। ওই ঘাট পার হতে হলেও পদ্মা নদীই পাড়ি দিতে হয়। তবে যোগাযোগব্যবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় দূরবর্তী জেলার যাত্রীরা ওই রুটটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন। অর্থাৎ দক্ষিণাঞ্চলকে ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল একমাত্র পদ্মা-ই। দুই ঈদের ভোগান্তি তো ছিলই। এ ছাড়া লঞ্চ ও ফেরি পারাপারে ভয় ও ভোগান্তি তো ছিলই। নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল পদ্মা পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর ভোগান্তি। দিন গুনতে গুনতে অবশেষে গতকাল অপেক্ষার পালা শেষে হলো দক্ষিণাঞ্চলবাসীর।

আজ রবিবার সকাল থেকেই সাধারণ যাত্রীরা সেতুটি ব্যবহার করতে পারবেন। আর এ পদ্মা সেতুর মাধ্যমেই রাজধানীর দুয়ারে পৌঁছে যাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা। এ সেতুবন্ধের মধ্য দিয়ে যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল। একই সঙ্গে উন্নয়ন-অগ্রগতির পালেও লাগল হাওয়া।

যোগাযোগব্যবস্থার এ অভূতপূর্ব পরিবর্তনের ফলে অর্থনৈতিক বড় ধরনের পরিবর্তনও ঘটবে বলে মনে করে ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। অর্থনৈতিক উন্নতি কিংবা শুধু যোগাযোগের ক্ষেত্রেই বিপ্লব নয়, ক্রীড়াঙ্গনেও বিশাল অবদান রাখতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। দক্ষিণ বাংলার ২১ জেলায় এখন থেকে আয়োজিত হবে ক্রিকেট, ফুটবল, হকিসহ বিভিন্ন খেলার জাতীয় টুর্নামেন্ট।

যে ২১ জেলা পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সার্বিক সুবিধা পাবে তা হলো : খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা; বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।

একনজরে পদ্মা সেতু : মোট ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতু। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৮-৯৯ সালে প্রমত্তা পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণের প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। এরপর ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে সরকার বদলের পর এক প্রকার থেমে যায় সব। ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় আবার এ সেতু নির্মাণের আলোচনা শুরু করে। তখন একনেকে অনুমোদিত এক তলা সেতু প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পদ্মা সেতু নির্মাণে গতি পায়। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন আঙ্গিকে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। পদ্মা সেতুকে শুধু সড়কে সীমাবদ্ধ না রেখে এতে রেল সংযুক্ত করেন তিনি। দোতলা এ সেতুর ওপরে সড়ক এবং নিচ তলা দিয়ে রেললাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।

২০০৯ সালে পদ্মা সেতুর জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়। নকশা প্রণয়নের দায়িত্ব পায় নিউজিল্যান্ডভিত্তিক মাউনসেল লিমিটেড। ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল মূল সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি রেলপথ যুক্ত করে একনেকে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় পদ্মা বহুমুখী সেতু সংশোধিত নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। একই বছরের ১৮ মে জাইকার সঙ্গে সরকারের ৪১ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং ৬ জুন এডিবির সঙ্গে ৬১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণচুক্তি করে সরকার। ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক।

২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে বদলি করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। একই বছরের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ২০১২ সালের ২৯ জুন ঋণচুক্তি বাতিলের কথা জানায় বিশ্বব্যাংক। পরে অন্যান্য দাতা সংস্থা একই পথ ধরে। ২০১২ সালের ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার কথা বলেন। ৮ জুলাই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ পরিকল্পনা সংসদে পেশ করেন তিনি।

২০১২ সালের ৯ জুলাই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা। বৈঠকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১২ সালের ২৩ জুলাই বিশ্বব্যাংকের দেওয়া শর্ত মেনে সৈয়দ আবুল হোসেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগ করেন। ২৪ জুলাইর আগেই সেতু সচিব থেকে সরিয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান করে পাঠানো মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ওএসডি করে ছুটিতে পাঠায় সরকার। ২০১২ সালের ২৫ ?জুলাই লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক আসুক আর না আসুক আমরা পদ্মা সেতু করব। আমাদের নিজেদের প্রস্তুতি আছে।’

২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয় দুদক। গ্রেফতার করা হয় আরও দুজনকে। ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করে সরকার। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্ত হন তিনি। ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থ আর নেওয়া হবে না সরকার এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ২০১৪ সালের ১৭ জুন পদ্মা বহুমুখী সেতুটি নির্মাণে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে সেতু বিভাগ। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দুদক জানায়, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। ২৬ অক্টোবর পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলার অবসান হয়। ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কানাডার গণমাধ্যম জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করেছিল তার প্রমাণ পায়নি কানাডার আদালত।

২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানো হয়। এই প্রথম দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ৪১টি স্প্যান বসানো হয়। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শেষ স্প্যান বসানোর মাধ্যমে সংযুক্ত হয় মাওয়া-জাজিরা, দৃশ্যমান হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু। ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর পদ্মা সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৪ জুন প্রথম সেতুর ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলে। ১৪ জুন মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত ৪১৫ বাতি একযোগে জ্বালানো হয়। সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হয় পদ্মা সেতু।

149 ভিউ

Posted ২:৪৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৬ জুন ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com