শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

২৮ লাখ রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ১৩ লাখরই অবস্থান কক্সবাজারে : বাড়ছে আর্থ-সামাজিক চাপ

শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯
151 ভিউ
২৮ লাখ রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ১৩ লাখরই অবস্থান কক্সবাজারে : বাড়ছে আর্থ-সামাজিক চাপ

কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৭ জানুয়ারী) ::‍‍ নিজ ভূখণ্ডে টিকতে না পেরে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় খুঁজছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। কিন্তু কোনো দেশেই তারা জায়গা করে নিতে পারছে না। তাদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের দিকে। এতে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চল কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ হয়ে উঠছে রোহিঙ্গাদের প্রধান আশ্রয়স্থল। এখনই বিশ্বব্যাপী মোট রোহিঙ্গার প্রায় অর্ধেকই অবস্থান করছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে। এর ফলে আর্থ-সামাজিক চাপ বাড়ছে দেশের ওপর।

জাসিংঘের অভিবাসন ও শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা, রিলিফ ওয়েব এবং সংশ্লিষ্ট দেশের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ২৮ লাখ ৯ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ১৩ লাখই অবস্থান করছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে। এরপর সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে সৌদি আরবে, প্রায় পাঁচ লাখ। তবে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমি মিয়ানমারে সংখ্যাটা এখন মাত্র চার লাখ।

এছাড়া পাকিস্তানে সাড়ে তিন লাখ, মালয়েশিয়ায় দেড় লাখ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫০ হাজার ও ভারতে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ১২ হাজার, থাইল্যান্ডে পাঁচ হাজার, ইন্দোনেশিয়ায় এক হাজার, জাপানে ৩০০, নেপালে ২০০, কানাডায় ২০০, আয়ারল্যান্ডে ১০৪ ও শ্রীলংকায় ৩৬ জন। অর্থাৎ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ৪৬ দশমিক ২৮ শতাংশের অবস্থান বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে অবস্থান করা এ ১৩ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে সাত লাখের বেশি এসেছে ২০১৭ সালের আগস্টের পর। এর বাইরে গত মাস দেড়েকে ভারত থেকে এখানে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ২০০-এর বেশি রোহিঙ্গা। আর গত মে মাস থেকে ধরলে এ সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। অনানুষ্ঠানিক হিসাবে এটি আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত ডিসেম্বরে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ৬৩১ জন মানুষ। এছাড়া চলতি জানুয়ারির প্রথম ১৩ দিনেই দেশটি থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ৫৮৫ জন রোহিঙ্গা।

বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীর, দিল্লি-হায়দরাবাদসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কম করে হলেও ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গাকে ভারতে শরণার্থী হিসেবে প্রত্যয়ন করা হয়েছে। ভারত থেকে আসা আড়াই হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়ার একটি ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, উপযুক্ত স্থান পেলে তাদের নতুন কোনো ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে।

সৌদি আরবও ১৩ জন রোহিঙ্গাকে সম্প্রতি বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। জেদ্দায় ডিটেনশন সেন্টারে অনেকদিন ধরে আটক ছিল তারা। ফেরত পাঠানোর পর এ রোহিঙ্গারা এখন কারাগারে রয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সৌদির বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অনেকদিন ধরে আটক রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করে ওমরা করতে যাওয়া ১৯১ জনের তালিকা বাংলাদেশের কাছে এরই মধ্যে হস্তান্তর করেছে সৌদি সরকার। তবে তাদের প্রত্যাবাসন এখনো হয়নি।

শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাস কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৭ সালের আগস্টের শেষদিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনায় তারা যখন সেখান থেকে পালিয়ে আসতে শুরু করে, সে সময় তাদের বাঁচাতে সীমান্ত খুলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। বিষয়টি শুরুতে মানবিক থাকলেও এখন তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বিশ্বের সামনে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের উদাহরণ রয়েছে। আর নিপীড়িত এ জাতিগোষ্ঠীকে (রোহিঙ্গা) বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে, তাতে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, দুঃখজনকভাবে দুই বছর আগে এবং বহু বছর ধরেই বিভিন্ন সময়ে অসৎ ব্যক্তিদের সহায়তায় অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে গিয়েছিল। দেশের অসৎ লোকগুলো তাদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দিয়েছিল। এখন তাদের অনেককেই ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে, যেহেতু পাসপোর্ট বাংলাদেশের। তবে এখন কোনো রোহিঙ্গা যাতে বাংলাদেশী পাসপোর্ট পেতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন ও চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকা। এ পুরো অঞ্চলেই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাস করছে। যদিও তাদের ওপর এখন পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তার পরও তাদের কারণে ট্যুরিজম, অ্যাকসেস টু বে অব বেঙ্গল বা ব্লু ইকোনমির স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এর ওপর রয়েছে অর্থনৈতিক চাপ। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এখন আর্থিকভাবে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করছে না। এভাবে এ মানুষগুলো বছরের পর বছর থাকলে তাদের ন্যূনতম প্রয়োজন বাংলাদেশের একার পক্ষে জোগান দেয়া কঠিন হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, মিয়ানমার যে ধরনের রাষ্ট্র, তারা কখনই রোহিঙ্গাদের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করবে না। একটা গ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি তৈরি করলেই তাদের ফিরতে পারার কথা। কিন্তু তারা যদি পলিটিসাইজড হয়ে যায় বা তাদের যদি অন্য কোনো পক্ষের সঙ্গে ভিন্ন ধরনের সম্পর্ক থাকে, তাহলে তাদের উপস্থিতি আরো দীর্ঘায়িত হবে।

সর্বপ্রথম বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটে ১৯৭৮ সালে। দ্বিতীয় দফায় আসে ১৯৯১-৯২ সালে। ১৯৯৫ সালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও চুক্তির পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়। ২০০৫ সালের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য এ প্রত্যাবাসন বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সফরের মধ্য দিয়ে এ প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের অনড় অবস্থানের কারণে তা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে।

২০১৩ সালে এরপর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমার। এজন্য যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়টি সামনে আসে। যদিও এখন পর্যন্ত তা গঠন হয়নি। আর ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর নিপীড়ন শুরুর পর থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। সহিংস পরিস্থিতিতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা সংখ্যায় আনুমানিক ৮০ হাজারের বেশি। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন প্রদেশে শুরু হওয়া সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে আবারো মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা আসতে শুরু করে। এ দফায় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পুরনো ও নতুন মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি।

বিপুলসংখ্যক এ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যখন চুক্তি হয়, তখন ধারণা ছিল রোহিঙ্গাদের তারা ফেরত নিয়ে যাবে। কিন্তু পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের মানসিকতা আমরা আঁচ করতে পারিনি। মিয়ানমারের সঙ্গে বিষয়টি বেশ জটিল হয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছিল নিতান্ত মানবতার খাতিরে। আশা ছিল, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার তাদের কথা রাখবে, চুক্তি অনুযায়ী তাদের ফেরত নেবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তারা সেটি রক্ষা করেনি। বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে নতুন করে আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে। কী করলে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসইভাবে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে পারব। আমরা এখনো আশা করছি, মিয়ানমারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করবে। তবে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের আমরা ফেরত পাঠাতে চাই। এটাই আমাদের অবস্থান।

151 ভিউ

Posted ৩:১২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com